ছবি: সংবাদ সারাবেলা।
বছর পেরিয়ে আবারও এলো ১৬ ডিসেম্বর—রাত পোহালেই মহান বিজয় দিবস। এ দিনে পুরো বাঙালি জাতি গভীর শ্রদ্ধা ভরে স্মরণ করে বাংলার সূর্যসন্তানদের। দিবসটি উপলক্ষে দেশের সরকারি-বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে নগরীর অলিগলি পর্যন্ত লাল-সবুজের অপরূপ আলোকসজ্জায় ঝলমল করে ওঠে। সানন্দে বিজয় দিবস উদযাপন করতে সারাদেশের মতো লাল দালানের ঐতিহ্যবাহী কবি নজরুল সরকারি কলেজও লাল-সবুজের বর্ণিল সাজে সজ্জিত করা হয়েছে। কিন্তু মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ কলেজের একমাত্র শিক্ষার্থী শহীদ শামসুল আলম বিজয় দিবসেও স্মৃতির আড়ালে রয়ে গেছে।
পুরো বাঙালি জাতির জন্য ১৬ ডিসেম্বর এক অবিস্মরণীয় ও গৌরবময় দিন। দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ এবং প্রায় ৩০ লাখ বাঙালির আত্মত্যাগের বিনিময়ে ১৯৭১ সালের এই দিনে অর্জিত হয় স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র বাংলাদেশ। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে সেদিন চূড়ান্ত বিজয় নিশ্চিত হয়। এই ঐতিহাসিক দিনেই বাংলাদেশ একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বের মানচিত্রে স্থায়ীভাবে স্বীকৃতি লাভ করে।
১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয়েছিলেন কবি নজরুল সরকারি কলেজের একমাত্র শিক্ষার্থী, শহীদ শামসুল আলম। স্বাধীনতার এত বছর পেরিয়েও কলেজ ক্যাম্পাসে তার কোনো স্মৃতিচিহ্ন নেই। কলেজের একমাত্র ছাত্রাবাসটি যদিও তার নামে নামকরণ করা , তবে বর্তমানে তা জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে এবং সেখানেও শহীদ শামসুল আলমের কোনো স্মৃতি চিহ্ন নেই।
নিজের জীবন দিয়ে যারা আমাদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছিল আমরা যেন তাদেরই ভুলে যাচ্ছি। কলেজের অধিকাংশ শিক্ষার্থী জানেন না শহীদ শামসুল আলমের ইতিহাস। শিক্ষার্থীদের দাবি দ্রুত সময়ের মধ্যে শহীদ শামসুল আলমের নামে কলেজে একটি স্মৃতিস্তম্ভ বা স্মরণ কর্ণার স্থাপন করা । যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম কখনও ভুলে না যায়, কাদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে আমাদের স্বাধীনতা।
বিজয় দিবসকে কেন্দ্র করে কবি নজরুল সরকারি কলেজের প্রশাসনিক ভবন, শহীদ ইকরাম হোসেন কাওছার ভবন এবং শহীদ মোঃ জিহাদ হোসেন ভবনগুলো লাল-সবুজের ঝিকিমিকি মরিচবাতির আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হয়েছে। আলোকসজ্জিত এই ভবনগুলো যেন লাল-সবুজের এক জীবন্ত পতাকার মতো উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে।
কলেজের লাল-সবুজ আলোকসজ্জা শিক্ষার্থীদের হৃদয়ে বিজয়ের আনন্দ ছড়িয়ে দিচ্ছে। সেই আলোয় পুরো কলেজ যেন গৌরবে ভরা উঁচু শিরদাঁড়া নিয়ে দীপ্তিময় হয়ে উঠেছে। সারা ক্যাম্পাসে বিরাজ করছে উৎসবমুখর পরিবেশ, আর মরিচবাতির আলোকছটায় ঝলমল করছে পুরো লক্ষ্মীবাজার এলাকা।
কলেজের গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী মনিরুজ্জামান মারুফ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস। আমাদের গৌরবের, আত্মত্যাগের, আর দায়বদ্ধতার দিন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের কথা শুনলেই আমার মনে পড়ে মুক্তিযুদ্ধে শহীদ আমাদের ক্যাম্পাসের একমাত্র শিক্ষার্থী শহীদ শামসুল আলমের কথা। কিন্তু দুঃখজনক বাস্তবতা হলো—আজ এত বছর পরও কলেজ ক্যাম্পাসে তার নামে কোনো স্মৃতিস্তম্ভ, নামফলক বা স্মরণীয় চিহ্ন নেই।
তিনি আরও বলেন, যে প্রতিষ্ঠানের একজন ছাত্র নিজের জীবন দিয়ে দেশকে স্বাধীন করেছেন, সেই প্রতিষ্ঠানে তার স্মৃতি অদৃশ্য থাকা আমাদের জন্য লজ্জার। বিজয় দিবসে আমার স্পষ্ট দাবি— শহিদ শামসুল আলমের নামে কবি নজরুল সরকারি কলেজে দ্রুত একটি স্মৃতিস্তম্ভ বা স্মরণ কর্নার স্থাপন করা হোক, যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম জানে—এই স্বাধীনতা কার রক্তে অর্জিত। শহিদকে স্মরণ করা অনুগ্রহ নয়, এটা আমাদের ঐতিহাসিক দায়িত্ব।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কলেজের এক শিক্ষার্থী বলেন, ১৬ ডিসেম্বর গোটা বাঙালি জাতির জন্য এক গর্বের দিন। এই দিনেই আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি পাক হানাদার বাহিনীর কবল থেকে মুক্ত হয়। মহান বিজয় দিবসকে উদযাপন করতে আমাদের কলেজের ভবনগুলো লাল-সবুজের মরিচবাতিতে সজ্জিত করা হয়েছে। কলেজের মূল ফটক দিয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতেই চোখে পড়ে লাল-সবুজের অপরূপ রঙ, যা মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হওয়া বীর সন্তানদের কথা গভীরভাবে স্মরণ করিয়ে দেয়। আমরা গভীর শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করি সেই সব সূর্যসন্তানদের।
কলেজের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী আব্দুল নুর বলেন, একাত্তর আমাদেরকে দিয়েছে একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ। ছোটবেলা থেকেই দেখে আসছি বিজয়ের মাস এলে চারদিকে বেজে ওঠে বিজয়ের নানা গান। লাল-সবুজের মরিচবাতিতে সাজানো হয় আমাদের পাঠশালা গুলো। যা আমাদের চেতনায় জাগ্রত করে স্বাধীনতা সংগ্রামের স্মৃতিকথা। আজ আমাদের ক্যাম্পাস লাল-সবুজের আলোতে যেমন করে আলোকিত হয়েছে, ঠিক ৭১ সালে পাক শত্রুদের হাত থেকে রক্ত দিয়ে আলোকিত করেছে আমাদের মুক্তি সেনা দল। বর্তমান প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিজের জীবন উৎসর্গ থেকেও দামি।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh
