ছবি: সংবাদ সারাবেলা।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) চারুকলা অনুষদের চিত্রকলা, প্রাচ্যকলা ও ছাপচিত্র বিভাগের প্রভাষক নিয়োগ পরীক্ষা নিয়ে উঠেছে নানাপ্রশ্ন। কেউবা ক্ষোভ ঝেঁড়ে বলছেন, প্রভাষক পদের মতো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও চ্যালেঞ্জিং পদে নিয়োগকল্পে গৃহীত পরীক্ষার পদ্ধতি ও মূল্যায়নের ধরণ যেনো ক্ষোভ প্রকাশের মতোই। তত্ত্বীয় ও ব্যবহারিক বিষয়ের প্রশ্নোত্তর অনুপাতে অনিয়ম, প্লানিং কমিটির গৃহীত সিদ্ধান্তকে বাইপাস, মানহীন নিয়োগ প্রশ্নপত্র ছাড়াও গৃহীত পরীক্ষাকে স্বজনপ্রীতির করার অপচেষ্টা চলছে বলে দাবি করেন আবেদনকারীরা।
গত ১০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয় রাবির চারুকলা অনুষদের চিত্রকলা, প্রাচ্যকলা ও ছাপচিত্র বিভাগের প্রভাষক নিয়োগ পরীক্ষা। এতে পরীক্ষা পদ্ধতি ও মূল্যায়ন সম্পর্কে অংশগ্রহণকারী অধিকাংশ আদেনকারী আপত্তি ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারা জানিয়েছেন, চারুকলায় প্রথম বর্ষ (অনার্স) ভর্তি পরীক্ষায় যে ধরনের প্রশ্নপত্রের মাধ্যমে শিক্ষার্থী মূল্যায়ন করা হয় সেখানে একই বিভাগের একজন প্রভাষক নিয়োগের ক্ষেত্রে গৃহীত পরীক্ষাও একই মানের হলে বিষয়টি বেশ বিব্রতকর। এটার কোন যৌক্তিতা নেই। এটা স্পষ্টতই উদ্দেশ্য প্রণোদিত। এই ধরণের প্রশ্নপত্র এবং পদ্ধতিতে কোনভাবেই মানসম্মত শিক্ষক বাছাই করা সম্ভব নয়।
অনুষদটির চিত্রকলা, প্রাচ্যকলা ও ছাপচিত্র বিভাগের সূত্র ও ক্ষুব্ধ আবেদনকারীরা জানান, মোট ৪টি পদের বিপরীতে লিখিত পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন ৮৩ জন। লিখিত পরীক্ষা থেকে ভাইবার জন্য বাছাই করা হয়েছে ১৩ জনকে। লিখিত ও ভাইবা পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে একই দিকে। সেদিনই তড়িঘড়ি করে লিখিত ও ভাইবা পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করে কতৃপক্ষ। সেদিনই ফলা পাঠানো হয়েছে সিন্ডিকেট সভাতে। এখন সিন্ডিকেটের সভায় চুড়ান্তভাবে নির্বাচিত করে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অগ্রসর হবে কর্তৃপক্ষ।
বিক্ষুব্ধ আবেদনকারীরা বলেন, চারুকলায় যেহেতু ব্যবহারিক বিষয়টিই মুখ্য তাই শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে নিয়মানুযায়ী ব্যবহারি বিষয়ের উপরই বেশ গুরুত্বারোপ করা হয়। তাই প্রশ্নোত্তর পর্বে তত্ত্বীয় অংশে চাইতে ব্যবহারিক বিষয়েরই আনুপাতিক হার বেশি থাকা অত্যাবশ্যক। কিন্তু সদ্য নেয়া নিয়োগ পরীক্ষার পদ্ধতিতে নেই নিয়মের ব্যত্যয় ঘটানো হয়েছে। প্রশ্নপত্রের মান আর পরীক্ষা পদ্ধতির এই অনিয়ম দেখে সাধারণ আবেদনকারীদের কাছে অস্বচ্ছ ও স্বজনপ্রীতির একটি সন্দেহের ডানা বেঁধেছে। কেউবা বলছেন কোন সন্দেহ না; এটা বিষেয় আবেদনকারীদের নিয়োগ দেবার একটি অপকৌশল চালানো হয়েছে। বিক্ষুব্ধরা জানান, গৃহীত ও প্রশ্নবিদ্ধ সেই নিয়োগ পরীক্ষার ৫০ নম্বরের প্রশ্নপত্রে তত্ত্বীয় বিষয়ের উপর ছিল সাড়ে ৩৭ নম্বর; আর ব্যবহারিক বিষয়ে ছিল মাত্র সাড়ে ১২ নম্বর! বিষয়টি আশ্চর্যজনক। যেখানে অনার্স ডিগ্রীধারীদের সর্বমোট ২২০০ নাম্বারের পরীক্ষায় তত্ত্বীয় বিষয় থাকে মাত্র ৫৫০ নম্বর আর বাকী ১৬৫০ নম্বরই থাকে ব্যবহারিক বিষয়ের উপর। শিক্ষাজীবনে যেখানে ব্যবহারিক বিষয়কে তিন গুণ অগ্রাধিকার দেয়া হয়। সেখানে নিয়মনীতিকে বাইপাস করে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে সেই রেশিওতে বিপরীতমূখী করা হয়েছে।
রাবি চারুকলা অনুষদ সূত্র থেকে জানা যায়, ‘চিত্রকলা, প্রাচ্যকলা ও ছাপচিত্র’ বিভাগের প্লানিং কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছিল নিয়োগ পরীক্ষায় ৬০% হবে ব্যবহারিক এবং ৪০% হবে তত্ত্বীয়। যা সম্পর্ণরূপে অগ্রাহ্য করা হয়েছে। এরকম হাস্যকর পরীক্ষার মাধ্যমে ব্যবহারিক বিষয়ে একজন দক্ষ ও অভিজ্ঞ শিক্ষক নিয়োগ কোনভাবেই সম্ভব নয় বলে মন্তব্য বিক্ষুব্ধ আবেদনকারীদের। এমন নিয়োগ পরীক্ষা চারুকলায় একমাত্র তত্ত্বীয় বিষয়ে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হতে পারে। বিক্ষুব্ধ আবেদনকারীরা বলেন, এই ধরণের তত্ত্বীয় নির্ভর প্রশ্নপত্রে পছন্দের প্রার্থীদের অনৈতিক সুযোগ দেবার বেশ বড়সড় সুযোগ থাকে। পরীক্ষার উত্তরপত্রে যেকোনো ধরণের সংকেত বা চিহ্ন ব্যবহার করে উত্তরপত্র মূল্যায়নের সময় সহজেই নিদিষ্ট প্রার্থী চিহ্নিত করা সম্ভব হয়। আর ব্যবহারিক বিষয়ের উপর অধিক নম্বর থাকলে সেই অপরাধ প্রবণতার সুযোগ তেমনটা থাকেনা। যেহেতু চারুকলার একজন শিক্ষার্থীর যোগ্যতা তত্ত্বীয় বিষয়সহ ব্যবহারিক বিষয়কে অগ্রাধিকার বেশি দিয়ে নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। কিন্তু এই শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের ব্যবহারিক বিষয়ে নিজেদের দক্ষতা বা তাদের চিত্রকর্মের পোর্টফোলিও প্রদর্শনেরও কোন ব্যবস্থা রাখা হয়নি। তাই সার্বিক বিবেচনায় এই নিয়োগ পরীক্ষার পদ্ধতিকে পরিকল্পিতভাবে প্রহসনমূলক করা হয়েছে বলে দাবি করেন বিক্ষুব্ধ আবেদনকারীরা।
চিত্রকলা, প্রাচ্যকলা ও ছাপচিত্র বিভাগের সভাপতি ড. বনি আদমের অধীনে এমন নিয়োগ পদ্ধতিকে প্রহসনমূলক বলে অভিযোগ অনেকের। অধিকাংশ আবেদনকারীরা ক্ষোভ এবং আক্ষেপের সাথে দাবি তুলে বলেন, ব্যবহারিক বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে নিয়মতান্ত্রিকভাবে পূণরায় পরীক্ষা নেয়া হোক।
জানতে চাইলে চিত্রকলা, প্রাচ্যকলা ও ছাপচিত্র বিভাগের সভাপতি ড. বনি আদম এই প্রতিবেদকে বলেন, যেসকল আবেদনকারী পরীক্ষার জন্য নিজেদেরকে এলিজিবল (যোগ্য) হিসেবে প্রমাণ করতে পারেনি এবং যারা লিখিত পরীক্ষায় উর্ত্তীণ হতে পারেননি তারাই বিভিন্নরকম বিপরীতমূখী কথা বলছে। প্ল্যানিং কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক ব্যবহারিক ও তত্ত্বীয় বিষয়ের উপর নির্ধারিত নম্বরের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্ল্যানিং কমিটির নেয়া কোন সিদ্ধান্ত পরীক্ষা কমিটি কিংবা রাবি কর্তৃপক্ষ মানতে বাধ্য নন। পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট পরীক্ষা কমিটিতে যারা ছিলেন তারা সকলেই যোগ্য। প্রশ্ন পত্রের ধরণ অবশ্যই মানসম্পন্ন হয়েছে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh
