ছবি: সংবাদ সারাবেলা।
রাজশাহীর তানোরের সীমান্তবর্তী মোহনপুরের মৌগাছি ইউনিয়নের (ইউপি) বসন্তকেদার দারুচ্ছুন্নাহ দাখিল মাদরাসায়, অর্থের বিনিময়ে কর্মচারী নিয়োগের চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়েছেন বিক্ষুব্ধ অভিভাবক মহল।
স্থানীয়রা জানান,গত শনিবার (২০ ডিসেম্বর) মাদরাসার সভাপতি এশারুল হক, ক্রীড়া শিক্ষক হাসিম উদ্দিন মণ্ডল ও সহকারী সুপারিন্টেন্ডেন্ট ইসহাক আলী যোগসাজশ করে নীতিমালা লঙ্ঘন এবং রাষ্ট্রীয় শোক দিবসের দিন মাদ্রাসায় গোপনে নিয়োগের চেষ্টা করেন। তবে ঘটনা জানাজানি হলে স্থানীয়রা মাদরাসা ঘেরাও করে বিক্ষোভ প্রদর্শন ও জড়িতদের শাস্তির দাবি করেন। এক সময় সেখানে চরম উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। খবর পেয়ে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও নিয়োগ কার্যক্রম স্থগিত করেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান,স্থানীয়দের বিক্ষোভের মুখে একটা সময় ডিজির প্রতিনিধি ও সহকারী সুপারিন্টেন্ডেন্ট
মাদরাসা থেকে পালানোর চেস্টা করেন।কিন্ত্ত বিক্ষুব্ধ জনতার রোষাণলে পড়ার ভয়ে সেই চেষ্টা থেকে ফিরে আসে।
অভিভাবকগণ জানান, নিয়োগ প্রক্রিয়ায় রেজুলেশন করা হয়নি, নেই অনুমোদিত নিয়োগ কমিটি, এমনকি প্রতিষ্ঠানটির সুপারিন্টেন্ডেন্টও বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নন। তবুও প্রতিষ্ঠানের কয়েকজন ব্যক্তি নিজেরা উদ্যোগ নিয়ে অবৈধভাবে নিয়োগের চেষ্টা করেন। গত শনিবার (২০ ডিসেম্বর) দুপুরে বিদিরপুর বাজার সংলগ্ন বসন্তকেদার দারুচ্ছুন্নাত দাখিল মাদ্রাসায় এই ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় স্বচ্ছ ও নিয়মতান্ত্রিক নিয়োগ প্রক্রিয়ার দাবিতে স্থানীয়রা প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ করেন।
এদিন সরেজমিন সেখানে গিয়ে দেখা যায়, নির্ধারিত পরীক্ষায় অংশ নিতে আসা দুইজন পরীক্ষার্থী অপেক্ষায় রয়েছেন। তারা জানান, দুপুর ১২টায় পরীক্ষার সময় নির্ধারিত থাকলেও দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পরও পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি। পরে তারা জানতে পারেন, আগে থেকেই নির্দিষ্ট একজনকে নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে এবং তাকে গোপনে দুপুর ২ টায় ডাকা হয়েছে। এর পরই স্থানীয়রা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ১৩ অক্টোবর মাদরাসায় “ল্যাব সহকারী” পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়, যার আবেদন জমা দেওয়ার শেষ সময় নির্ধারণ করা হয়েছিল ১৫ দিন। ওই বিজ্ঞপ্তির বিপরীতে ৮টি আবেদন জমা পড়ে এবং যাচাই-বাছাই শেষে ৬ জনকে পরীক্ষার জন্য নির্বাচিত করা হয়। তবে অভিযোগ অনুযায়ী, এখানে থেকেই শুরু হয় অনিয়ম।
অভিযোগে উঠেছে, যাকে নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তাকে আগেই গোপনে জানানো হয় এবং শোক দিবসের দিন দুপুর ২টায় পরীক্ষার জন্য ডাকা হয়। বিষয়টি জানাজানি হলে পরীক্ষার্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিলের দাবি জানান।
এক পরীক্ষার্থী অভিযোগ করে বলেন, “রাষ্ট্রীয় শোক দিবসের দিনে টাকার বিনিময়ে গোপন নিয়োগের অপচেষ্টা চালানো হয়েছে। এতে মাদ্রাসার সভাপতি এশারুল হক, ক্রীড়া শিক্ষক হাসিম উদ্দিন মণ্ডল ও সহকারী সুপারিন্টেন্ডেন্ট ইসহাক আলী জড়িত। তিনি আরও জানান, ঘটনাস্থলে উত্তেজনা দেখা দিলে থানা পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। পরে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে পরীক্ষা স্থগিত হয়।
এ বিষয়ে মাদরাসার সভাপতি এশারুল হক বলেন, “ডিজি অফিস থেকে প্রতিনিধি আসার কথা ছিল, দেরি হওয়ায় পরীক্ষা শুরু করা যায়নি।” তবে নিয়োগ কমিটি, রেজুলেশন ও সুপারিন্টেন্ডেন্টের অবগতির বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি স্পষ্ট কোনো উত্তর দিতে পারেননি। ক্রীড়া শিক্ষক হাসিম উদ্দিন মণ্ডলের বক্তব্যেও সভাপতির সঙ্গে অসঙ্গতি দেখা যায়।
এবিষয়ে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এসএম মাহমুদুল হাসান জানান, “নিয়োগের বিষয়টি আমার জানা ছিল, তবে প্রতিষ্ঠান প্রধান অবগত নন এমন তথ্য জানতাম না। যদি সত্যিই এমন হয়, তাহলে প্রক্রিয়াটি প্রশ্নবিদ্ধ। আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি পরিবেশ অস্বচ্ছ ও বিশৃঙ্খল, তাই ফিরে আসি। পরে দুপুর আড়াইটার দিকে সহকারী সুপারিন্টেন্ডেন্ট ইসহাক আলী মাদরাসায় আসেন। কেন শোক দিবসের দিনে পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে—এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “তারিখ আগে থেকেই নির্ধারিত ছিল।” তবে পরীক্ষার্থীদের আগের রাতে অ্যাডমিট কার্ড দেওয়া প্রসঙ্গে তিনি অসংলগ্ন উত্তর দেন। তবে তার ও ডিজির প্রতিনিধির পালানোর চেস্টা করে ব্যর্থ হবার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন এটা গুজব।
এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফাহিমা বিনতে আখতার বলেন, “আমি সদ্য যোগদান করেছি, তাই বিষয়টি আগে জানতাম না। তবে যেহেতু নিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh
