× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

রাজশাহী অঞ্চলে ভেকু সিন্ডিকেট চক্রের দৌরাত্ম্য জনজীবন দুর্বিষহ

আলিফ হোসেন, তানোর

২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫:০৮ পিএম

ছবি: সংবাদ সারাবেলা।

রাজশাহী অঞ্চলে এক্সেভেটর (ভেকু) দালাল সিন্ডিকেট চক্রের চরম দৌরাত্ম্য জনজীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসনের একশ্রণির কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক পরিচয়ের হোমরা-চোমরাদের নেপথ্যে মদদে ভেকু দালাল সিন্ডিকেট চক্র পুকুর খনন, সংস্কার ও ফসলি জমির উপরিভাগের উর্বরা মাটি (টপসয়েল) কেটে বিক্রি করছে। এসব মাটি পরিবহণে গ্রামের পাকা-কাচা রাস্তা নস্ট ও পরিবেশ দুষণ করছে। এছাড়াও ভেকু-ট্রাক্টরের বিকট শব্দ ধুলাবালিতে জনজীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে।জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়ছে।সচেতন মহলের অভিমত, আগামী প্রজন্মের স্বার্থেই অবৈধ পুকুর খনন ও ফসলি জমির উপরিভাগের উর্বরা মাটি (টপসয়েল) কাটা বন্ধ করতে হবে।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সম্প্রতি রাজশাহীর তানোরের সীমান্তবর্তী নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলার  ভাবিচা ইউনিয়নের (ইউপি) কাঁঠালবাড়ি গ্রামে অবৈধভাবে মাটি ফেলাকে কেন্দ্র করে এনদাদুল নামের এক ভূমিদস্যু তার সাঙ্গপাঙ্গদের নিয়ে দেশীয় অস্ত্র সজ্জিত হয়ে কৃষকদলের সাবেক নেতা নজরুল ইসলামের বাড়িতে দিনে দুপুরে হামলা-মারপিট,লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে বলে অভিযোগ উঠেছে। তানোরের কামারগাঁ ইউনিয়নের (ইউপি) কাদিপুরে গ্রামবাসির সঙ্গে ভেকু দালালদের চরম বাকবিতন্ডা হয়েছে। গোদাগাড়ীর রাজাবাড়ি হাট এলাকায় ভেকু দালালদের হাতে স্থানীয় বাসিন্দারা লান্হিত হয়েছে।মোহনপুরের ধুরইল এলাকায় গ্রামবাসির সঙ্গে ভেকু দালালদের মারপিটের ঘটনা ঘটেছে।

অন্যদিকে রাজশাহী মোহনপুরে পুকুর খননের বিরোধিতা করায় এক যুবককে মর্মান্তিকভাবে প্রাণ দিতে হয়েছে। ভেকু বা এক্সেভেটর গাড়ির চাকার নিচে ফেলে ওই যুবককে হত্যা করা হয়। এর আগে ভেকুর মাথার বাকেট দিয়ে ওই তরুণকে আঘাত করা হয়। এর ফলে সে ভেকুর চাকায় চাপা পড়েন। এ সংক্রান্ত একটি  প্রতিবেদন বিভিন্ন গণমাধ্যমে  প্রকাশিত হয়েছে।

প্রতিবেদনের তথ্যমতে, বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) রাত নয়টার দিকে উপজেলার ধুরইল ইউনিয়নের (ইউপি) বড় পালশা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত কৃষক আহমদ জুবায়ের (২৫) গ্রামবাসীর সঙ্গ অবৈধ পুকুর খনন বন্ধের প্রতিরোধে সেখানে গিয়েছিলেন। গ্রামবাসীর সঙ্গে পুকুর খননকারিদের বিতণ্ডার এক পর্যায়ে ভেকুচালক বাকেট দিয়ে জুবায়েরকে আঘাত করে। এ সময় বিক্ষুব্ধ গ্রামবাসী একটি মোটরসাইকেল ও ভেকুতে আগুন দেয়। ভেকুচালক গ্রেফতার হয়েছে। ঘটনার পরদিন মোহনপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে।

জানা গেছে, রাজশাহী অঞ্চল জুড়েই অবৈধ পুকুর খনন ও ফসলি জমির উপরিভাগের উর্বরা মাটি (টপসয়েল) কাটা একটি বড় সমস্যা। এর ফলে কৃষিজমি ধ্বংস হচ্ছে, প্রান্তিক চাষিরা নিঃস্ব হচ্ছেন। এতে পুকুর সংলগ্ন কৃষি জমি তিব্র জলাবদ্ধতার সম্মুখিন হচ্ছে। পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে এবং গ্রামীণ অবকাঠামো বিশেষ করে রাস্তাঘাটের ক্ষতি হচ্ছে, সামাজিক অস্থিরতার সঙ্গে সংঘাত বাড়ছে। হত্যাকাণ্ডের মত ঘটনাও ঘটছে। অথচ স্থানীয় প্রশাসন ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো একরকম নিরব ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। মাঝে মধ্যে অভিযান পরিচালিত হয়- তা অনেকটাই লোক-দেখানো। যেটা প্রয়োজন, অবৈধ পুকুর খনন ও কৃষি জমির উর্বরা মাটি কাটা বন্ধ করা- সেটাই হচ্ছে না। পুকুর খনন সমান তালেই অব্যাহত আছে।

সম্প্রতি উচ্চ আদালতে রিট করে অবৈধ পুকুর খনন কাজ চালিয়ে যেতে পারছে। শ্রেণি পরিবর্তন না করেই মাঠের পর মাঠ পুকুর খনন করছেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা। এতে নিরব থাকছে স্থানীয় প্রশাসন। এ নিয়ে মোটা অংকের অর্থের লেনদেন হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে তা মানতে নারাজ মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তারা। আদালতের রিট থাকায় এ নিয়ে কিছুই করা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন তারা।

রাজশাহী বিভাগ মাছ চাষে সারা দেশে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে। বুঝতে অসুবিধা হয় না যে, মাছ চাষ বেশ লাভজনক ব্যবসা। ফলে পুকুর খনন করে মাছ চাষের প্রতি অতি-আগ্রহ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগ করছেন। সন্দেহ নেই এতে করে রাজশাহীর অর্থনীতি চাঙ্গা হচ্ছে, একইভাবে কিছু হলেও কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হচ্ছে। কিন্তু পুকুর খনন করে মৎস্য চাষের প্রক্রিয়াটি নেহাতই অবৈধ এবং এর নেতিবাচক প্রভাব অনেক বেশি। ভূমির ধরণ পরিবর্তন না করেই বেপরোয়া গতিতে পুকুর খনন অব্যাহত আছে। কিন্তু এতে করে মৎস্য চাষের প্রসার ঘটলেও কৃষি জমির সর্বনাশ হচ্ছে, আবার খাদ্য নিরাপত্তায় ঝুঁকি তৈরি করছে। কর্মহীন হয়ে পড়ছে হাজার হাজার কৃষিখাতে শ্রম দিয়ে জীবীকা নির্বাহ করা শ্রমিক। নস্ট হচ্ছে গো-চরন ভুমি। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে সামাজিক অস্থিরতা- যা সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। মোহনপুরের ঘটনা তেমনই একটি। এমন হত্যাকাণ্ডের মত ঘটনা এর আগেও হয়েছে। বিস্তর মামলা-মোকাদ্দমা আছে। তারপরও কীভাবে অবৈধ উপায়ে পুকুর খনন ও ফসলি জমির উর্বরা মাটি কাটা চলতে পারে তা বিস্ময়করই বটে। তবে বিষয়টি নিয়ে এখন পদক্ষেপ নেয়ার সময় হয়েছে। অবৈধ উপায়ে পুকুর খনন করে মাছ চাষে সাময়িক সাফল্য পেলেও এর ভবিষ্যত যে সুখকর হবে না তা সামাজিক অস্থিরতা পর্যালোচনা করলে সহজেই বোঝা যায়। তাই ভবিষ্যত প্রজন্মের স্বার্থেই অবৈধ পুকুর খনন ও ফসলি জমির উর্বরা মাটি কাটার বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার সময় এসেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তানোরের সীমান্তবর্তী নিয়ামতপুরের নাকৈল ও কাদিপুর, তানোরের কলমা ইউনিয়নের (ইউপি) বনগাঁ, পাঁচন্দর ইউনিয়নের (ইউপি) কচুয়া কামারপাড়া,কামারগাঁ ইউনিয়নের (ইউপি) হাতিশাইল মিরাপাড়া, বাধাইড় ইউনিয়নের (ইউপি) বাধাইড় মিশনপাড়া,গোদাগাড়ীর পাকড়ি ইউনিয়নের (ইউপি) জীবনপাড়া, দেওপাড়া ইউনিয়নের (ইউপি) রাজাবাড়ি হাট, নিয়ামতপুর উপজেলার ভাবিচা ইউনিয়নের (ইউপি) কাঠালবাড়িয়া, রাজবাড়ি, বটতলি, মোহনপুর উপজেলার বাকবৈল ইউনিয়ন (ইউপি) ও ধুরইল ইউনিয়নের (ইউপি) বিভিন্ন মাঠে অবৈধ পুকুর খনন ও ফসলি জমির উপরিভাগের উর্বরা মাটি (টপসয়েল) কাটা হচ্ছে।

Sangbad Sarabela

সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.