ছবি: সংবাদ সারাবেলা।
কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ার জাঙ্গালিয়া এলাকার সৈয়দ আব্দুল আলী খন্দকার ওয়াক্ফ ট্রাস্টের সম্পত্তি আত্মসাৎ, মসজিদের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত এবং নায়েবে মোতওয়াল্লীকে মিথ্যা মামলায় হয়রানির অভিযোগে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সোমবার (২২ ডিসেম্বর) দুপুরে জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন অব কিশোরগঞ্জ কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলন করেন ওয়াক্ফ ট্রাস্টের নায়েবে মোতওয়াল্লী খন্দকার মাহফুজুর রহমান সোহেল। এ সময় ভুক্তভোগীর স্ত্রী উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে খন্দকার মাহফুজুর রহমান সোহেল বলেন, তিনি কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ার জাঙ্গালিয়া সৈয়দ আব্দুল আলী ওয়াক্ফ ট্রাস্টের নায়েবে মোতওয়াল্লী। তাঁর বড় ভাই খন্দকার সোহাগ বর্তমানে মোতওয়াল্লীর দায়িত্ব পালন করছেন। সৈয়দ আব্দুল আলী খন্দকার নিঃসন্তান হওয়ায় জীবদ্দশায় ৮ একর ৮৬ শতাংশ জমি ওয়াক্ফ করে একটি মসজিদ নির্মাণ করেন এবং দলিলের মাধ্যমে মোতওয়াল্লী ও নায়েবে মোতওয়াল্লী নির্ধারণ করে যান।
ওয়াক্ফ দলিল অনুযায়ী, তাঁর দুই ভ্রাতুষ্পুত্র মাতহাব উদ্দিন খন্দকারকে মোতওয়াল্লী ও আব্দুর রশিদ খন্দকারকে নায়েবে মোতওয়াল্লী করা হয়। একই সঙ্গে দলিলে উল্লেখ ছিল, উপযুক্ততার ভিত্তিতে তাঁদের পুত্ররা পর্যায়ক্রমে মোতওয়াল্লী ও নায়েবে মোতওয়াল্লী হবেন। মাতহাব উদ্দিন খন্দকারের কোনো পুত্র সন্তান না থাকায় পরবর্তীতে দায়িত্ব আব্দুর রশিদ খন্দকারের ওপর ন্যস্ত হয়।
আব্দুর রশিদ খন্দকার মৃত্যুর আগে দুই পুত্র আব্দুল মতিন খন্দকার ও মজিবুর রহমান খন্দকারকে ওয়ারিশ রেখে যান। আব্দুল মতিন খন্দকার মোতওয়াল্লী থাকার ছয় মাসের মধ্যেই নিঃসন্তান অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। এরপর তার পিতা মজিবুর রহমান খন্দকার দীর্ঘ প্রায় ৫০ বছর ধরে নিষ্ঠার সঙ্গে ওয়াক্ফ ট্রাস্টের মোতওয়াল্লী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
খন্দকার মাহফুজুর রহমান সোহেল আরও বলেন, তাঁর পিতা গত ১৭ ডিসেম্বর ২০২২ সালে ইন্তেকাল করার পর ওয়াক্ফ অফিসের মাধ্যমে তাঁর বড় ভাই খন্দকার সোহাগকে মোতওয়াল্লী এবং তাঁকে নায়েবে মোতওয়াল্লী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। ওয়াক্ফ দলিল অনুযায়ী মোতওয়াল্লী ও নায়েবে মোতওয়াল্লী পরস্পর সহযোগী পূর্ণ ক্ষমতায় দায়িত্ব পালনের বিধান রয়েছে।
তিনি অভিযোগ করেন, মোতওয়াল্লী হওয়ার পর তাঁর বড় ভাই খন্দকার সোহাগ মসজিদের মাইক বিক্রি করে দেন, ইমামকে সরিয়ে দেন এবং টয়লেটসহ মসজিদের অবকাঠামোর অবস্থা নাজুক করে তোলেন। তাঁদের পরিবারের কোনো নিজস্ব সম্পদ নেই, পুরোপুরি ওয়াক্ফ সম্পত্তির ওপর নির্ভর করেই মসজিদ পরিচালিত হয়ে আসছিল।
বক্তব্যে তিনি বলেন, ভুলবশত পুরো ওয়াক্ফ সম্পত্তির মাঠ রেকর্ড তাঁর বাবার নামে রেকর্ড হয়ে যায়। সেই সুযোগে তাঁর বড় ভাই সম্পত্তি বিক্রির পাঁয়তারা শুরু করেন এবং এলাকার কিছু সন্ত্রাসী বাহিনী ব্যবহার করে নানা অনৈতিক কার্যকলাপে জড়ান। বিষয়টি রোধ করতে তিনি ওয়াক্ফ অফিসের অনুমোদন নিয়ে মাঠ রেকর্ড সংশোধনের মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পর থেকেই তাঁর ওপর নির্যাতন ও হয়রানি শুরু হয় বলে অভিযোগ করেন তিনি। মামলাটি তুলে নিতে তাঁর বিরুদ্ধে লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়। মামলা না তোলায় তাঁর অজান্তে প্রায় ৪০ লাখ টাকার ওয়াক্ফ সম্পত্তি অন্যদের কাছে লিজ দিয়ে দেওয়া হয়, যাতে তিনি ও মুসল্লিরা সেখানে যেতে না পারেন।
এ বিষয়ে মুসল্লিরা ওয়াক্ফ অফিসে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন বলেও সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়। অভিযোগের ভিত্তিতে ওয়াক্ফ অফিস থেকে কিশোরগঞ্জের ওয়াক্ফ পরিদর্শককে তদন্ত প্রতিবেদন পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়। তদন্তের জন্য উভয় পক্ষকে চিঠি দিয়ে ১২ নভেম্বর ২০২৫ তারিখ নির্ধারণ করা হয়।
খন্দকার মাহফুজুর রহমান সোহেল অভিযোগ করে বলেন, আমার নামে আমার বড় ভাই মামলা করে রেখে সেটা আমার জানা ছিলো না, তদন্ত চলাকালেই পুলিশ এসে তাঁকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়, ফলে তদন্ত কার্যক্রম ভণ্ডুল হয়ে যায়। পরে তিনি এক মাস কারাভোগ করেন।
কারামুক্তির পরও তাঁকে ও তাঁর পরিবারকে ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে এবং বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি ওয়াক্ফ সম্পত্তি উদ্ধারের মাধ্যমে মুসল্লিদের সুষ্ঠুভাবে নামাজ আদায়ের পরিবেশ ফিরিয়ে দেওয়া, মসজিদের উন্নয়নমূলক কাজ বাস্তবায়ন এবং নায়েবে মোতওয়াল্লী হিসেবে তাঁর আইনগত অধিকার নিশ্চিত করার দাবি জানান। এ বিষয়ে তিনি ওয়াক্ফ প্রশাসক ও কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসকের কাছে হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh
