ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার কুশমাইল ইউনিয়নের ধামর মধ্যপাড়া গ্রামে পারিবারিক বিরোধের জেরে ছোট ভাইয়ের দেওয়া আগুনে বড় ভাইয়ের বসতঘর পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। সোমবার (২২ ডিসেম্বর) রাত আনুমানিক ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এতে প্রায় ৭ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেছেন ভুক্তভোগী পরিবার। ভুক্তভোগী ইব্রাহিম খলিল অভিযোগ করেন, তার ছোট ভাই রবিউল আউয়াল পূর্বপরিকল্পিতভাবে তার বসতঘরে অগ্নিসংযোগ করে।
স্থানীয় ও পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে ইব্রাহিম খলিল ও তার স্ত্রী ময়না বেগমের সঙ্গে ছোট ভাই রবিউল আউয়ালের পারিবারিক বিরোধ চলছিল। এ বিরোধের জেরে রবিউল আউয়াল বিভিন্ন সময় হুমকি ও নির্যাতন করে আসছিল। এর আগে ভুক্তভোগী পরিবার কোর্টে ৭ ধারায় মামলা দায়ের করলে রবিউল আউয়াল লিখিত মুসলেকা দিয়ে ভবিষ্যতে আর কোনো নির্যাতন করবে না বলে অঙ্গীকার করে। কিন্তু মুসলেকা দেওয়ার প্রায় তিন মাস পরই সেই অঙ্গীকার ভঙ্গ করে পুনরায় নির্যাতনের পাশাপাশি বসতঘরে আগুন দেওয়ার অভিযোগ ওঠে অগ্নিকান্ডের সময় ইব্রাহিম খলিলের স্ত্রী নয় মাসের গর্ভবতী ময়না বেগম ঘরের ভেতরে ঘুমন্ত অবস্থায় ছিলেন। আগুনের তাপ ও ধোঁয়ার আঁচ টের পেয়ে কোনো রকমে ঘর থেকে বেরিয়ে এসে প্রাণে রক্ষা পান তিনি। এ সময় ঘরের পাশে থাকা একটি মুরগির খামারের বেশ কয়েকটি বাচ্চা আগুনের তাপে মারা যায়। ঘটনার সময় ইব্রাহিম খলিল বাজারে অবস্থান করছিলেন। খবর পেয়ে দ্রুত বাড়িতে ফিরে এসে নিজের বসতঘর পুড়ে ছাই হয়ে যেতে দেখেন।
ভুক্তভোগী ইব্রাহিম খলিল বলেন, আমার ছোট ভাই দীর্ঘদিন ধরে আমাকে ও আমার স্ত্রীকে নির্যাতন করে আসছে। আগেও মামলা হলে সে মুসলেকা দিয়ে বলেছিল আর কখনো এমন করবে না। কিন্তু সেই কথা না রেখে পরিকল্পিতভাবে আমার বসতঘরে আগুন দিয়েছে। আমার প্রায় সবকিছু পুড়ে গেছে, আমরা এখন নিঃস্ব। আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই।
তিনি আরও বলেন, আমার স্ত্রী যদি সময়মতো ঘুম থেকে না উঠতো, তাহলে বড় ধরনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটতে পারতো। আমরা এখন চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।ঘটনার পর এলাকায় চরম উত্তেজনা ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয়রা দ্রুত আগুন নেভানোর চেষ্টা করলেও ততক্ষণে ঘরের অধিকাংশ মালামাল পুড়ে যায়।
এ ঘটনায় ভুক্তভোগী পরিবার দোষীর বিরুদ্ধে কোর্টে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন। স্থানীয় জিয়াউর রহমান বলেন, এটি অত্যন্ত ন্যক্কারজনক ও অমানবিক ঘটনা। পারিবারিক বিরোধ থাকলেও আগুন দিয়ে ঘর পুড়িয়ে দেওয়া কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। বিশেষ করে ঘরের ভেতরে গর্ভবতী নারী থাকা সত্ত্বেও এমন কাজ প্রমাণ করে অভিযুক্ত কতটা নিষ্ঠুর। আমি দ্রুত ও দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবি জানাচ্ছি। ইব্রাহিম খলিলের চাচাত আবু সাইদ বলেন, মুসলেকা দেওয়ার পরও যদি কেউ এমন জঘন্য অপরাধ করে, তাহলে আইনের কঠোর প্রয়োগ ছাড়া বিকল্প নেই। প্রশাসনের উচিত ভুক্তভোগী পরিবারকে নিরাপত্তা ও আইনি সহায়তা নিশ্চিত করা, যাতে ভবিষ্যতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে।
এবিষয়ে রবিউল আউয়াল বলেন, আমাদের মাঝে জমা জমি নিয়ে বিরোধ আছে। তার ঘরে কে আগুন দিয়েছে তা আমি জানি না। ইব্রাহিম খলিলের স্ত্রী ময়না বেগম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে ভর্তি আছে।