ছবি: সংবাদ সারাবেলা।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ ও বিজয়নগরের একাংশ) আসন থেকে বিএনপির প্রার্থী হয়ে ধানের শীষে নির্বাচন করার আগ্রহ ছিল জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সহ-সম্পাদক রুমিন ফারহানার। তবে, জোটের আসন সমঝোতার কারণে এই আসন জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সহ-সভাপতি মাওলানা জুনায়েদ আল হাবিবকে ছেড়ে দিয়েছে বিএনপি।
গত মঙ্গলবার গুলশানে দলীয় চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এসময় তিনি বলেন, দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে যারা স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করবেন তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের প্রার্থীরা যেসব আসনে নির্বাচন করবেন বিএনপি সেসব আসনে কোনো প্রার্থী দেবে না। এসময় তিনি জনগণকে খেজুর গাছ প্রতীকে ভোট দিয়ে ধানের শীষকে শক্তিশালী করার আহ্বান জানান।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে ব্যাপক আলোচনায় ছিলেন ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানার মনোনয়ন। গত ৩ নভেম্বর ২৩৭ আসনে বিএনপি প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করে। সেই তালিকায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে কারও নাম ঘোষণা করেনি বিএনপি। এরপর থেকেই বিএনপির স্থানীয় নেতা কর্মীরা অনেকটা নিশ্চিত হয়ে যান এই আসনটিতে প্রার্থী দেয়া হচ্ছে জোটের নেতা জুনায়েদ আল হাবীবকে। তবে, এতদিন ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা তার নির্বাচনি প্রচার-প্রচারণা বন্ধ রাখেননি। বিভিন্ন সভা সমাবেশে দলের মনোনয়ন না পেলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন তিনি। দলীয় মনোনয়ন না পেলেও ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসন থেকে নির্বাচন করার কথা জানিয়েছেন রুমিন ফারহানা। শুক্রবার ১৯ ডিসেম্বর বিকেলে সরাইল উপজেলার পানিশ্বর ইউনিয়নের বিটঘর বাজারে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় দোয়া ও মতবিনিময় সভার বক্তব্যে রুমিন ফারহানা স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য পদে নির্বাচন করার অভিমত প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, ‘আমি যা বলি, আমি তা ই করি; এইটা ভালো হইলে ভালো, মন্দ হইলে আমার কিছু করার নাই। আপনারা যদি আমার পাশে থাকেন, মার্কা যা ই হোক, নির্বাচন করবো আমি সরাইল-আশুগঞ্জ থেকেই।’ মঙ্গলবার জোট থেকে জুনায়েদ আল হাবিবকে প্রার্থী ঘোষণার পর রুমিন ফারহানার সমর্থকরা হতাশ হয়ে পড়েছেন। তাদের দাবি, রুমিন ফারহানাকে মূল্যায়ন করেনি দল।
মনোনয়ন না পেলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করবেন বলে নিশ্চিত করেছেন রুমিন ফারহানা। তিনি জানান, দল থেকে মনোনয়ন না পেলেও তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করবেন। সমঝোতায় জোটকে ছেড়ে দেওয়া আসনে নির্বাচন করলে দলীয় কোনো কঠিন সিদ্ধান্তের মুখে পড়তে হবে কি না- এমনটা জানতে চাইলে প্রত্যুত্তরে রুমিন ফারহানা বলেন, আশা করা যায় সেটা আমার সঙ্গে হবে না। মনোনয়ন কেনার আগেই আমি সম্মানের সঙ্গে দল থেকে পদত্যাগ করবো। দু’একদিনের মধ্যে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করবো। স্বতন্ত্র প্রতীক হিসেবে কোনটা পাবো বা দেয়া হবে সেটা না হয় পরে দেখা যাবে। আরেকটা কথা না বললেই নয়, আশা করি অত্র এলাকার মানুষের ভালোবাসা এখনো আমার সঙ্গে আছে। তারা এর জবাব ভোটের মাধ্যমেই দেবে।
এছাড়াও, এ আসনে বিএনপির দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত নেতা বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ ঐক্য ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় মহাসচিব ও জাতীয়তাবাদী যুবদলের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক এস এন তরুণ দে সরাইল-আশুগঞ্জের বঞ্চিত দায়িত্বশীল নেতাকর্মী ও সমর্থকদের অনুরোধে এ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশ নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। তরুণ দে জানান, দীর্ঘদিন ধরে বিএনপি নেতা কর্মীরা বঞ্চিত। তাদের অনুরোধই প্রার্থী হচ্ছি। বিএনপি নেতা আহসান উদ্দিন খান শিপনও স্বতন্ত্র মনোনয়ন নিয়েছেন।
জোট প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়ার ব্যাপারে সরাইল উপজেলা বিএনপির সভাপতি আনিসুল ইসলাম ঠাকুর বলেন, ব্যাক্তির চেয়ে দল বড়। দলের সিদ্ধান্তকে আমরা সমর্থন করি এবং মনোনয়নের সিদ্ধান্ত মেনে নেব। এ বিষয়ে সরাইল উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এডঃ নুরুজ্জামান লস্কর তপু বলেন, দলের সিদ্ধান্তই চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে স্বতন্ত্র মনোনয়নপত্র নিলেন রুমিন
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসন থেকে দলের মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সহ-সম্পাদক ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা। বুধবার দুপুর সোয়া ২টার দিকে সরাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে রুমিন ফারহানার পক্ষে সরাইল উপজেলা যুবদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আলী হোসেন মনোনয়ন ফরমটি সংগ্রহ করেন।
মনোনয়ন ফরম নেয়ার সময় সরাইল ও আশুগঞ্জ উপজেলা বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের বর্তমান এবং সাবেক কয়েক শত নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। রুমিন ফারহানার পক্ষে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহের বিষয়ে আলী হোসেন বলেন, আমিসহ কয়েকজন নেতাকর্মীকে মনোনয়ন ফরম নেয়ার জন্য দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। আমরা আজকে ফরম নিয়েছি। পরবর্তী সিদ্ধান্ত রুমিন ফারহানা নেবেন।
সরাইল ও আশুগঞ্জ উপজেলা এবং বিজয়নগর উপজেলার বুধন্তি ও চান্দুরা ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসন থেকে ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা ছাড়াও অন্তত অর্ধডজন সম্ভাব্য প্রার্থী বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। তবে, এ আসনটি বিএনপি তাদের শরিক দল জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ এর জন্য ছেড়ে দিয়েছে। আসনটিতে বিএনপির সমর্থন নিয়ে খেজুর গাছ প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ এর সহ-সভাপতি মাওলানা জুনায়েদ আল হাবীব।
গত মঙ্গলবার ২৩ ডিসেম্বর বিএনপির জোটের প্রার্থী ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা সাংবাদিকদের বলেন, এত বড় দল (বিএনপি) তাদের নিজস্ব ভালো-মন্দ বুঝতে হয়। যেহেতু জমিয়তের সঙ্গে তারা জোট করেছে, আসন না দিলে কেমন করে জোট হবে! দল বাধ্য হয়ে আসন দিয়েছে। স্বতন্ত্র ভোট করলে দল ব্যবস্থা নেবে কি না- জানতে চাইলে রুমিন ফারহানা বলেন, যদি ব্যবস্থা নিতে হয়, ওনারা নিশ্চয় নেবেন। আমি তো আসলে বাধা দিতে পারব না।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh
