ছবি: সংবাদ সারাবেলা।
জামালপুর সদর উপজেলার প্রশাসনের চোঁখ ফাঁকি দিয়ে শরীফপুর ইউনিয়নের শ্রীরামপুর এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে রাতের আঁধারে কৃষি জমির উর্বর মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে একটি চক্র। এতে যেমন জমির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে, তেমনি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্যও। আর ভেঙে যাচ্ছে এলাকার রাস্তাঘাট। অসাধু ও প্রভাবশালী চক্র নির্বিচারে কৃষিজমির উর্বর মাটি কেটে বিক্রি করায় হুমকির মুখে পড়েছে এই অঞ্চলের কৃষি উৎপাদন। প্রতিদিন রাত সাড়ে ১১ টার পর থেকেই চলাচল শুরু করে মাটি ভর্তি লড়ি ও ড্রাম ট্রাক, এমনই অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের।গভীর রাতে মাটি ভর্তি ট্রাকের হর্ণে শব্দ ও চলাচলে বিকড় শব্দে একদিকে যেমন শব্দ দুষন হচ্ছে অপরদিকে আবাল বৃদ্ধাসহ নারী পুরুষ ও শিশুদের ঘুমের বেগাত ঘটছে প্রতিনিয়ত। নিয়মিত বালুভর্তি ভারী যানবাহন আসা-যাওয়ার কারণে রাস্তাঘাটের এখন বেহাল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।এমতাবস্থায় সাধারণ মানুষ এর প্রতিকার চেয়ে উপজেলা ও জেলা প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। তবে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) দুপুরে জানিয়েছে জামালপুর সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাজনীন আখতার।
স্থানীয় ও সরোজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার শ্রীরামপুর এলাকার মরহুম সুরুজ্জামান সূরুজ এর ছেলে আকরাম, রঘুনাথপুর এলাকার বাদল এর ছেলে ফনি ফকির, শ্রীরামপুর এলাকার মরহুম খেলা খন্দকার এর ছেলে আনোয়ার হোসেন আঞ্জু সহ একটি চক্র দীর্ঘদিন ধরে পরিবেশ আইন অমান্য করে প্রতিদিন রাতভর কৃষি জমি উপরিভাগের মাটি কেটে সরবরাহ করে বিক্রি করছে উপজেলার বিভিন্ন ইটভাটায়।ফলে কৃষি জমির উর্বরতা শক্তি নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি পরিবেশের ভারসাম্য ও হুমকির মুখে পড়েছে। পরিবেশ আইন অনুযায়ী কৃষি জমি মাটি কাটা দন্ডনীয় অপরাধ। এনিয়ে স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভ থাকলেও প্রভাবশালীদের ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না। ফসলি কৃষি জমি ও বিভিন্ন তরিতরকারি ফসল উৎপাদন হলেও জমির মালিকের নানা প্রলোভন ও ভয়ভীতি দেখিয়ে মাটি কেটে নিচ্ছে ভূমি দস্যুরা। এলাকায় রাতভর ফসলি জমি থেকে এস্কেভেটর (ভেকু) দিয়ে গভীর করে মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে ভূমি দস্যুরা। তাদের পেছনে কোনো অদৃশ্য শক্তি রয়েছে বলে এলাকায় চলছে নানা সমালোচনা।
এক্সকাভেটর (ভেকু) দিয়ে আবাদি জমি কেটে বিশাল গভীর গর্ত সৃষ্টি করা হয়েছে। কৃষিবিদদের মতে, জমির উপরিভাগের চার থেকে ছয় ইঞ্চি গভীর মাটিতেই মূল পুষ্টি গুণ থাকে। মাটির এই স্তর কেটে নেওয়ায় জমির উর্বরতার শক্তি নষ্ট হচ্ছে। এ জন্য অতিরিক্ত সার প্রয়োগ করে ও কাঙ্খিত ফলন পাওয়া যাচ্ছে না। এতে সারের পেছনে কৃষকের অতিরিক্ত খরচ করতে হবে।
সুলাইমান, সুজন, করিম মন্ডল সহ এলাকাবাসী জানায়,প্রভাবশালী চক্রের ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছেন না। শুধু ব্যক্তিমালিকানাধীন জমিই নয়, খাস জমি বসতবাড়ি সীমানা ঘেঁষে নির্বিঘ্নে মাটি লুটে নিয়ে যাচ্ছে । এ ব্যাপারে ট্রাক চালককে রাতে চলাচলের জন্য নিষেধ করলে , চালক বলে বেশি বাড়াবাড়ি করলে ট্রাকের চাকার নিচে ফেলে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। উল্লেখ্য ট্রাকের নেই কোন রেজিস্ট্রান নাম্বার প্লেট।
এ ব্যাপারে ভোক্তাভুগিরা মাটি কাটা সিন্ডিকেটদের বললে তারা নানা অজুহাত দেখায় ।রাঙ্গামাটিয়া গ্ৰামের ব্যবসায়ী শেখ ফরিদ বলেন, "একদীকে যেমন জমির স্বাভাবিক উৎপাদন ক্ষমতা চিরতরে নষ্ট হচ্ছে, অন্যদিকে অতিরিক্ত ওজনের মাটিবাহী ট্রাক চলাচলের কারণে গ্রামের পাকা সড়কগুলোও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে"।
পাওয়া টিলার মালিক রফিকুল ইসলাম অভিযোগ করেন, মাটি কাটার জমিতে পাওয়া টিলার হালচাল করা কঠিন হয়ে পড়ে। এতে করে চাষ করার জন্য অনেক জমি পতিত পড়ে থাকবে। এ বিষয়ে আকরাম জানান, আমার জমি থেকে মাটি কেটে বিক্রি করছি এতে কারো অভিযোগ নাই। দিনের বেলা কাটলে নানা সমস্যা তাই রাতে কাটি যাতে কারো সমস্যা না হয়।
জামালপুর সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো: এমদাদুল হক জানান, জমির উপরিভাগের ৮-১০ ইঞ্চি মাটির মধ্যেই থাকে ফসল উৎপাদনের মূল পুষ্টিগুণ। এই স্তরটি কেটে ফেললে জমিটি দীর্ঘ সময়ের জন্য অনুর্বর হয়ে পড়ে, যা ভবিষ্যতে বোরো বা আমন চাষে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। টপ সয়েল কেটে নেওয়া জমিতে এর দ্বিগুণ সার দিতে হয়। ফলন ও স্বাভাবিক চেয়ে কম হবে। এ ভাবে মাটি কাটা অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে কৃষি জমি চাষাবাদের অনুপযোগী হয়ে পড়বে।
এ বিষয়ে জামালপুর সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাজনীন আখতার এ প্রতিবেদক মাসুদুর রহমানকে জানান, বিষয়টি শুনেছি। খোজ খবর নেওয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh
