ছবি: সংবাদ সারাবেলা।
তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশার প্রভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে বড়লেখার জনজীবন। মৌসুমের শুরু থেকেই ঠান্ডাজনিত বিভিন্ন রোগের প্রকোপ দেখা দিয়েছে। এতে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশু ও বয়স্করা।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের প্রতিটি ওয়ার্ড এখন শিশু ও বয়স্ক রোগীতে পরিপূর্ণ। এর মধ্যেই প্রতিদিন নতুন করে আরও রোগী ভর্তি হচ্ছে। চিকিৎসকদের ভাষ্য অনুযায়ী, শিশুদের মধ্যে নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট, সর্দি-কাশি, জ্বর, ডায়রিয়া ও অন্যান্য ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাই বেশি।
বড়লেখা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৫০ শয্যা বিশিষ্ট। স্বাভাবিক সময়ে যেখানে প্রতিদিন মোট রোগীর মধ্যে ১৫–২০ শতাংশ শিশু ও বয়স্ক রোগী চিকিৎসা নিতেন, বর্তমানে সেখানে গড়ে ৮০ শতাংশের বেশি রোগীই ঠান্ডাজনিত বিভিন্ন সমস্যায় আক্রান্ত। হাসপাতালে ভর্তি মারওয়ান নামের এক শিশুর মা বলেন, “ঠান্ডা বেড়ে যাওয়ায় আমার ছেলের ডায়রিয়া শুরু হয়। গত তিন দিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। এখন আগের তুলনায় কিছুটা সুস্থ।”
উপজেলার বর্ণি ইউনিয়নের উজিরপুর এলাকার শিপার উদ্দিন (৭০) বলেন, “প্রায় পাঁচ দিন আগে শ্বাসকষ্ট নিয়ে এখানে ভর্তি হয়েছি। তীব্র শীতের কারণেই এই সমস্যা দেখা দিয়েছে। চিকিৎসা চলছে, তবে সুস্থ হতে আরও সময় লাগবে।” এদিকে আহমদপুর এলাকার রহিম উদ্দিন (৬৫) বলেন, “গত তিন দিন ধরে শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছি। আমাদের এলাকায় প্রচণ্ড ঠান্ডা। বেশি ঠান্ডার প্রভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছি।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. নাজমুল হাসান বলেন, “শীতের তীব্রতায় ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। ফলে হাসপাতালে রোগীর চাপ ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে কোনো শয্যাই খালি নেই।” তিনি আরও জানান, হাসপাতালে আইসিইউ ও সিসিইউ সুবিধা না থাকায় অনেক সংকটাপন্ন রোগীকে ভর্তি রেখে চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এ বিষয়ে রোগীর স্বজনদের বোঝানো হলেও অনেক সময় তারা বিষয়টি মেনে নিতে চান না। তবে রোগীর সর্বোচ্চ স্বার্থ বিবেচনা করেই প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, “চলমান শৈত্যপ্রবাহ দীর্ঘ হলে শিশু ও বয়স্কদের স্বাস্থ্যঝুঁকি আরও বাড়বে। গত কয়েক দিনে শীতজনিত অ্যাজমা, ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে প্রচুর রোগী ভর্তি হয়েছে। এর মধ্যে শিশু রোগীর সংখ্যাই বেশি।”
তিনি আরও বলেন, “শীতকালে শিশুদের গরম কাপড় পরিয়ে রাখতে হবে এবং ঠান্ডা বাতাস এড়িয়ে চলতে হবে। বুক ঢেকে রাখতে হবে, ভেজা কাপড় পরানো যাবে না। গোসলের সময় হালকা গরম পানি ব্যবহার করতে হবে। নিউমোনিয়ার লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে।”
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: ফেরদৌস আক্তার বলেন, বর্তমানে হাসপাতালে ঠান্ডাজনিত রোগীর সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি। বিশেষ করে শিশুদের মধ্যে ডায়রিয়া ও বমির সমস্যা বেশি দেখা দিচ্ছে। এ ধরনের লক্ষণ দেখা দিলে অবহেলা না করে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করাতে হবে। পাশাপাশি শিশুদের প্রতি বাড়তি যত্নশীল হতে হবে, যেন তারা ঠান্ডায় না পড়ে। শীত থেকে সুরক্ষিত রাখা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা এবং সর্দি-কাশি থেকে দূরে রাখতে সচেতন ভূমিকা পালন করার ওপর তিনি গুরুত্বারোপ করেন।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh
