উত্তরের জেলা নীলফামারীতে তীব্র শীত জনজীবনে চরম ভোগান্তি সৃষ্টি করেছে। ঘন কুয়াশা ও হিমেল হাওয়ার কারণে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে।
শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) ভোরে জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। সৈয়দপুর আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তা মো. লোকমান হাকিম জানান, আগামী এক সপ্তাহে একই ধরনের তাপমাত্রা এবং শীত অব্যাহত থাকতে পারে। শীতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া মানুষজন। কৃষক, রিকশাচালক ও দিনমজুররা দৈনন্দিন জীবনে দুর্ভোগে পড়েছেন।
রিকশাচালক রমজান আলী বলেন, “প্রতিদিন রিকশা চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে, যাত্রীর সংখ্যা কমে যাওয়ায় আয়ও অর্ধেকে নেমেছে।” কৃষক আব্দুল মান্নান জানান, “ভোরে জমিতে কাজ করা যায় না। কুয়াশা ও ঠান্ডায় হাত-পা শীতলে জমে যায়, ফলে ফসলের কাজ ধীরগতিতে হচ্ছে।”
শীতার্ত ছিন্নমূল ও বয়স্ক মানুষদের দুর্ভোগ সবচেয়ে বেশি। ডোমার রেলস্টেশনের ফুটপাতে বসবাসকারী এক বৃদ্ধ জানিয়েছেন, “প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় রাতে ঘুমানো যায় না। শরীর ব্যথায় ভেঙে যায়। এখন পর্যন্ত তেমন কোনো সাহায্য পাইনি।”
শীতজনিত রোগের প্রকোপও বাড়ছে।নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. শাহিনুর রহমান বলেন, “শিশু ও বয়স্কদের মধ্যে সর্দি-কাশি, জ্বর, শ্বাসকষ্ট ও নিউমোনিয়ার আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। মানুষকে শীত থেকে রক্ষা, গরম কাপড় ব্যবহার এবং সময়মতো চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।”
জেলা প্রশাসন শীতার্তদের জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মনোয়ারুল ইসলাম জানান, সরকারিভাবে ৩৬ লাখ টাকার কম্বল ক্রয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এর মধ্যে ১০ হাজার ৩৮৮টি কম্বল ইতোমধ্যেই ক্রয় করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে আরও ৭ হাজার ৫০০টি কম্বল এসেছে। মোট ১৭ হাজার ৮৮৮টি কম্বলের মধ্যে জেলার ছয় উপজেলায় ৬ হাজার কম্বল বিতরণ করা হয়েছে।
শীতের কারণে গ্রামীণ হাটবাজার ও শহরের লোকসমাগম কমেছে। কৃষকরা বীজতলা প্রস্তুত, বীজ বপন ও জমি তৈরির কাজে ধীরগতি করছেন। অপরদিকে রিকশাচালক, ভ্যানচালক, কুলি, জুতার কারিগরসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ ঘরে বসে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন।
নীলফামারীতে শীতার্ত মানুষজন এখন খড়কুটো জ্বালিয়ে বা আগুন তাপিয়ে ঠাণ্ডা কমানোর চেষ্টা করছেন। জেলা প্রশাসন তাদের পাশে দাঁড়িয়ে পর্যাপ্ত শীতবস্ত্র ও কম্বলের ব্যবস্থা করছে।