ছবি: সংবাদ সারাবেলা।
ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলা সদরে ৫০ শয্যা হাসপাতালটি অবস্থিত। এই হাসপাতালের প্রতিটি দেয়ালে লেখা আছে মানুষের বেঁচে ফেরার গল্প। ফুলবাড়ীয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে একসময় অবহেলায় বলা হতো গরিবের হাসপাতাল আজ সেই হাসপাতালই গড়ে উঠেছে জাতীয় পর্যায়ে তালিকায় নাম। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের স্বীকৃতিতে ময়মনসিংহ বিভাগের শ্রেষ্ঠ উপজেলা হাসপাতাল এবং সারাদেশের মধ্যে ১৬তম স্থান অর্জন করেছে ফুলবাড়ীয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। এ অর্জন কেবল কোনো সার্টিফিকেট নয় এ অর্জন মানুষের চোখের জল মুছে দেওয়ার রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি। পরিচ্ছন্ন ও শৃঙ্খলিত পরিবেশ, আধুনিক অপারেশন থিয়েটার, নিয়মিত চিকিৎসক ও নার্সদের উপস্থিতি সব মিলিয়ে ফুলবাড়ীয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এখন কেবল চিকিৎসালয় নয়,এটি মানুষের আত্মবিশ্বাসের আশ্রয়স্থল। এক সময় যে হাসপাতালে মানুষ আসতেই ভয় পেত, সেখানে গত ২০২৫ সালের নভেম্বর মাসে আউটডোরে সেবা নিয়েছেন ১৮,১৯৩ জন।জরুরি বিভাগে ৩,৫৯৪ জন।ইনডোরে ভর্তি হয়েছেন ৯৬৭ জন। ল্যাব পরীক্ষায় সেবা পেয়েছেন ২,০৩০ জন।প্রতিটি সংখ্যা মানে একটি পরিবার, একটি দোয়া,একটি নতুন করে বেঁচে ওঠা জীবন।
আজ ফুলবাড়ীয়ায় নিয়মিত হচ্ছে সিজারিয়ান অপারেশন, হার্নিয়া, এপেন্ডিসাইটিসসহ নানা জটিল সার্জারি, গর্ভবতী মায়েদের আর শহরমুখী দৌড় নেই। শিশুরা আর রেফারের পথে হারিয়ে যাচ্ছে না।এখানকার অপারেশন থিয়েটারে শুধু যন্ত্রপাতি নয়,আছে দায়িত্ববোধ, আছে মানবিকতা, আছে জীবন বাঁচানোর দৃঢ় শপথ। রোগীর স্বজনদের কণ্ঠে হাসপাতালের গল্প হার্নিয়া অপারেশনের রোগীর স্বজন জসিম উদ্দিন কাঁপা কণ্ঠে বলেন,আমরা গরিব মানুষ। বাইরে গেলে হয়তো বাঁচতাম না। এই হাসপাতালে আল্লাহ আমাদের নতুন জীবন দিয়েছেন।
সিজারিয়ান রোগীর স্বজন আবুল কাশেম বলেন,স্ত্রী আর সন্তান দুজনেই সুস্থ। এই হাসপাতালটা না থাকলে কী হতো ভাবতেই ভয় লাগে। কারিগরি শিক্ষা কনসালটেন্ট তৌহিদুজ্জামান বলেন,সম্প্রতি আমাদের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বিভিন্ন স্বাস্থ্যসেবা সহজলভ্য হয়েছে জানতে পেরে কয়েকদিন আগে আমি আমার পরিবারের একজনের অপারেশনের জন্য এবং খুব সন্তুষজনক সেবা পেয়েছি। ফুলবাড়ীয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স আরও জনবান্ধব হোক, সাধারণ মানুষকে অবগত করা এখন সময়ের দাবি। বাংলাদেশের মাঝে ১৬ তম স্থান পাওয়ায় কর্তৃপক্ষকে অভিনন্দন।
চিকিৎসকদের মানবিক কণ্ঠ মেডিকেল অফিসার ডাঃমোঃ হারুন আল মাকসুদ বলেন,রোগী যখন সুস্থ হয়ে তাকিয়ে হাসে ওটাই আমাদের আসল বেতন। শুক্রবার বাদে প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত বিনামূল্যে ওষুধসহ চিকিৎসা সেবা দিচ্ছি। সহকারী অধ্যাপক গাইনি বিশেষজ্ঞ ডাঃখাদিজা সিদ্দিক সুইটি বলেন,একজন মা নিরাপদে সন্তান কোলে নিলে সব কষ্ট ভুলে যাই। এখানে বিনামূল্যে ওষুধপত্রসহ চিকিৎসা দেওয়া হয় এটাই আমাদের তৃপ্তি।
সহকারী অধ্যাপক শিশু বিশেষজ্ঞ ডাঃ খায়রুল আলম সিদ্দিকী রায়হান বলেন,শিশুরা শুধু চিকিৎসা নয়, ভালোবাসা চায়। আমরা চিকিৎসার পাশাপাশি সেই ভালোবাসাটুকু দেওয়ার চেষ্টা করি। সার্জারি বিশেষজ্ঞ ডাঃ ছাইফুল মালেক বলেন,রোগীর জীবন আমাদের কাছে আমানত। সেই বিশ্বাস ভাঙার কোনো অধিকার আমাদের নেই।
এনেস্থিসিয়া বিশেষজ্ঞ ডাঃ মোঃ মমিনুল ইসলাম বলেন,একটি অপারেশন সফল হওয়ার পেছনে নীরব কিন্তু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে এনেস্থিসিয়ার। এখানে আমরা সর্বোচ্চ সতর্কতা ও মানবিক দায়িত্ব নিয়ে কাজ করি, যাতে রোগী নিরাপদে অপারেশন টেবিল থেকে জীবনের পথে ফিরে আসতে পারে। এই সাফল্যের পেছনে যিনি নীরবে বাতিঘরের মতো দাঁড়িয়ে আছেন, তিনি হলেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃমোহাম্মদ হাসানুল হোসেন।
ডাঃ মোহাম্মদ হাসানুল হোসেন বলেন,আমি একা কিছুই নই। এই হাসপাতালের প্রতিটি অর্জন আমার সহকর্মীদের ঘাম, সততা আর ফুলবাড়ীয়াবাসীর ভালোবাসার ফল। মানুষের আস্থা ধরে রাখাই আমাদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ও সবচেয়ে বড় দায়িত্ব।গ্রাম বলেই চিকিৎসা পিছিয়ে থাকবে এই ধারণা ভাঙতে চাই। সৎ নেতৃত্ব আর মানবিক মন থাকলে গ্রাম থেকেই জাতীয় গর্ব গড়ে ওঠে। ফুলবাড়ীয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এখন আর শুধু একটি হাসপাতাল নয় এটি এই জনপদের মানুষের আস্থার প্রতীক। সীমিত অবকাঠামো ও জনবল থাকা সত্ত্বেও চিকিৎসক, নার্স ও সকল স্বাস্থ্যকর্মীর সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিত করার চেষ্টা করছি।মানুষ যেন নিজ উপজেলাতেই মানসম্মত চিকিৎসা পায় এই লক্ষ্য নিয়েই আমরা দিন-রাত কাজ করছি। রোগীর হাসিই আমাদের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। সরকারের দিকনির্দেশনা ও স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় ফুলবাড়ীয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স আজ জাতীয় পর্যায়েও একটি সম্মানজনক অবস্থানে পৌঁছেছে।
ফুলবাড়ীয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স আজ আর শুধু একটি হাসপাতাল নয়। এটি এক কিলোমিটার দূরের আশা, এটি গরিবের ভরসা,এটি মানবিকতার জয়গান।এই হাসপাতাল প্রমাণ করেছে সৎ নেতৃত্ব, নিষ্ঠাবান চিকিৎসক আর মানুষের ভালোবাসা থাকলেগ্রাম থেকেই জন্ম নেয় জাতীয় গর্ব।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh
