ছবি: সংবাদ সারাবেলা।
দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে আগামীকাল (৩০ ডিসেম্বর) অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর এই প্রথম শিক্ষার্থীরা সরাসরি ভোটের মাধ্যমে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচনের সুযোগ পাচ্ছেন। ফলে নির্বাচনকে ঘিরে পুরো ক্যাম্পাসজুড়ে বিরাজ করছে উৎসবমুখর ও প্রাণচাঞ্চল্যপূর্ণ পরিবেশ।
জানা যায়, ১৯৫৪ সালে জগন্নাথ কলেজ থাকাকালীন প্রথম ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয়। সে সময় জগন্নাথ কলেজ ছাত্র সংসদ (জকসু) বলা হতো। এ নির্বাচনে ভিপি নির্বাচিত হন এআর ইউসুফ আর জিএস সালাউদ্দিন আহমেদ। পরবর্তী সময় ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত জগন্নাথ কলেজ ছাত্র সংসদের ১০টি কমিটি হয়।
স্বাধীনতার পরে ১৯৭২, ১৯৭৯, ১৯৮৬, ১৯৮৭ সালে আরও চারটি ছাত্র সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৮৭ সালে সর্বশেষ জকসু নির্বাচন হয়। সর্বশেষ এই নির্বাচনে আলমগীর সিকদার লোটন ও জাহাঙ্গীর সিকদার জোটন নামে দুই ভাই ভিপি ও জিএস নির্বাচিত হন।
কলেজ থেকে ২০০৫ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের পর এবারই প্রথম কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ এই নির্বাচন হতে যাচ্ছে, যা জবি শিক্ষার্থীদের জন্য একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত হিসেবে দেখা হচ্ছে।
নির্বাচনী প্রচারণার শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত ক্যাম্পাসজুড়ে দেখা গেছে প্রার্থীদের নির্বাচনী ব্যস্ততা। প্রার্থীরা ভোট চাইছেন শিক্ষার্থীদের দ্বারে দ্বারে। মিলিয়ে ক্যাম্পাস যেন রূপ নিয়েছে একটি গণতান্ত্রিক উৎসবের মঞ্চে। দীর্ঘদিন ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত থাকার ক্ষোভ যেন পরিণত হয়েছে আনন্দ উল্লাসে।
নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, এবারের জকসু নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা ১৬ হাজার ৪৪৫ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার ৮ হাজার ৪৭৯ জন এবং পুরুষ ভোটার ৮ হাজার ১৭০ জন। কেন্দ্রীয় সংসদ ও হল সংসদ মিলিয়ে মোট প্রার্থী রয়েছেন ১৮৭ জন।
নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনের জন্য ভোটকেন্দ্রগুলো প্রস্তুত করা হয়েছে। ৩৯ কেন্দ্রের ১৭৮ বুথে ভোট গ্রহণ হবে। প্রতি ১০০ জন শিক্ষার্থীর জন্য একটি করে ভোটগ্রহণ বুথ থাকবে। ভোটগ্রহণ শেষে মেশিনের মাধ্যমে ভোট গণনা করা হবে। ব্যালট পেপার ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম চূড়ান্ত করা হয়েছে। ভোট গ্রহণ চলাকালে প্রতিটি কেন্দ্রে পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন থাকবেন। পাশাপাশি সার্বক্ষণিক ভ্রাম্যমাণ টিম দায়িত্ব পালন করবে।
ছাত্রশিবির সমর্থিত 'অদম্য জবিয়ান ঐক্য' প্যানেলের ভিপি পদপ্রার্থী মো. রিয়াজুল ইসলাম বলেন, ‘সবাই এনজয় করছে। প্রার্থীরা সবার কাছে যাচ্ছে, ভোট চাচ্ছে। সবাই সবাইকে সাদরে গ্রহণ করছে, কথা বলছে। খুবই ফেস্টিব মুডে আছে। ক্যাম্পাসের জন্য সুন্দর একটা আবহ বিরাজ করছে।’
ছাত্রদল সমর্থিত 'ঐক্যবদ্ধ নির্ভীক জবিয়ান' প্যানেলের ভিপি পদপ্রার্থী এ কে এম রাকিব বলেন, ‘আমরা সব সময় শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে কাজ করেছি। নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলেও এই ধারা অব্যাহত থাকত। এখন আমাদের প্রত্যাশা একটি সুষ্ঠু নির্বাচন। আশা করি, নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ থেকে এবং কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা নিশ্চিত করে একটি সুন্দর নির্বাচন উপহার দেবে।’
জাতীয় ছাত্রশক্তি-সমর্থিত 'ঐক্যবদ্ধ জবিয়ান' প্যানেলের ভিপি পদপ্রার্থী কিশোয়ার আনজুম সাম্য বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের প্রতি আমরা হতাশ। তাদের প্রতিটি কার্যক্রম বিতর্কিত, তাই কোনো আশা রাখছি না। তবে শিক্ষার্থীদের থেকে আমাদের একটাই আশা, ক্যাম্পাসের জন্য যারা কাজ করবে, সে রকম প্রতিনিধি বাছাই করতে তারা ভোটকেন্দ্রে এসে নিরাপদে ভোট দিতে পারুক।’
সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট-সমর্থিত 'মওলানা ভাসানী ব্রিগেড' প্যানেলের ভিপি পদপ্রার্থী গৌরব ভৌমিক বলেন, ‘প্রচারণার মধ্য দিয়ে আমরা অনেক ভালো সাড়া পেয়েছি এবং শিক্ষার্থীদের থেকে আশাবাদী। তবে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে কিছু সংশয় আছে। সব মিলিয়ে আমরা আশা করছি একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ তাজাম্মুল হক বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় সামগ্রিকভাবে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত। আইনশৃঙ্খলাসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বাহিনী আজ থেকে ক্যাম্পাস ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় সক্রিয় থাকবে। কমিশন নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত, যেকোনো সমস্যা সমাধানে নিরাপত্তাব্যবস্থা কঠোর অবস্থানে থাকবে।’
প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মোস্তফা হাসান বলেন, ‘পুরো ক্যাম্পাস সার্বিক নিরাপত্তা চাদরে ঢাকা থাকবে। প্রতিটা বুথে সিসি ক্যামেরার আওতায় থাকবে। নিরাপত্তা বিষয়ে প্রক্টরের সঙ্গে সমন্বয় করে কঠোর নিরাপত্তা জারি করা হয়েছে। সার্বিকভাবে আমরা প্রস্তুতি গ্রহন করেছি। আশা করি সুন্দভাবে ভোট সম্পন্ন হবে। ভোট গ্রহন ৮: ৩০ থেকে ৩ টা পর্যন্ত চলবে।'
তিনি আরো বলেন, 'ভোট প্রদান নিয়ে আমরা একটি ভিডিও তৈরী করেছি। এটা দেখে কিভাবে ভোট দিতে হবে শিক্ষার্থীরা তা জানতে পারবে।। যাদের আইডি কার্ডের মেয়াদ আছে তারা আইডি কার্ড সাথে নিয়ে আসবে। অন্যথায় ওয়েবসাইট থেকে ভোটারের পাশে কি বার করে স্ক্যান করে একটা কার্ড পাওয়া যাবে সেটা নিতে হবে।'
নির্বাচনের প্রস্তুতি প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম পিএইচডি বলেন, 'উৎসবমুখর পরিবেশে স্বচ্ছ একটি নির্বাচন সম্পন্ন করার জন্যে আনরা নিরলস চেষ্টা করে যাচ্ছি। ইতিমধ্যে আমরা সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি এবং সেই প্রস্তুতিতে আমরা সন্তুষ্ট। আমরা সরকারের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় সকল সহযোগিতা পেয়েছি এবং আমরা আশা করছি যে খুব ভালো একটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।'
নির্বাচন বন্ধে মন্ত্রণালয় থেকে কোনো চাপ আছে কি না, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, 'না, এ ধরনের কোন চাপ নেই তবে আমার কাছে কিছু তথ্য চাওয়া হয়েছিল। সেগুলো আমরা দিয়েছি। নির্বাচন স্থগিতর বিষয়ে কোন আলাপ হয়নি শুধু তথ্য চাওয়া হয়েছে আমরা দিয়েছি।'
সহযোগিতা ও নির্বাচন অনুষ্ঠান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'আলহামদুলিল্লাহ ট্রাইং আওয়ার লেভেল বেস্ট এবং আমি সাংবাদিক ভাই আমার শিক্ষার্থী আমাদের শিক্ষক কর্মকর্তা সমস্ত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার সহ সবার সহযোগিতা আমরা কামনা করছি।'
সবশেষে তিনি নিশ্চিত করেন যে, 'যথাসময় নির্বাচন হচ্ছে। আমরা সেরকমই আমরা পরিস্থিতি সম্পন্ন করেছি।'
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh
