টানা শীতের দাপটে চরম দুর্ভোগে পড়েছে জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলার মানুষ। কনকনে ঠান্ডা, ঘন কুয়াশা ও উত্তরের হিমেল বাতাসে জনজীবন প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছে। কয়েকদিন ধরে সূর্যের দেখা মিলছে না বললেই চলে। ভোর ও শেষ রাতে এত ঘন কুয়াশা নামছে যে, তা বৃষ্টির মতোই ঝরছে।
মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) মাদারগঞ্জে তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৩ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। টানা শীতের কারণে দিনের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় নিচেই অবস্থান করছে। মেঘলা আকাশ, ঘন কুয়াশা ও হিমেল বাতাসের কারণে ঠান্ডার অনুভূতি আরও তীব্র হয়ে উঠেছে।
আবহাওয়া অফিস সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পৌষ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে মাদারগঞ্জ অঞ্চলে তাপমাত্রা ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে যাওয়ায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। একই সঙ্গে কয়েকদিন ধরে কুয়াশা ও বাতাসের দাপটে শীতের প্রকোপ ক্রমেই বাড়ছে। শেষ রাত থেকে সকাল পর্যন্ত পুরো এলাকা ঘন কুয়াশায় ঢেকে থাকছে।
ঘন কুয়াশার কারণে সড়ক ও নৌপথে চলাচলেও চরম ভোগান্তি দেখা দিয়েছে। দিনের বেলাতেও যানবাহন চালাতে হেডলাইট জ্বালিয়ে চলতে হচ্ছে। ট্রাক চালক মাহিন ইসলাম বলেন,কুয়াশা এত ঘন যে দিনের বেলাতেও সামনে কিছুই দেখা যায় না। বাধ্য হয়ে হেডলাইট জ্বালিয়ে গাড়ি চালাতে হচ্ছে। একটু অসাবধান হলেই বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে।”
তীব্র ঠান্ডায় মানুষের পাশাপাশি প্রাণিকূলের অবস্থাও শোচনীয় হয়ে উঠেছে। গবাদিপশু ও পাখিরা শীতে জবুথবু অবস্থায় রয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন শ্রমজীবী ও নিম্ন আয়ের মানুষ। জীবন-জীবিকার তাগিদে হাড় কাঁপানো ঠান্ডা উপেক্ষা করেই ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে কাজে বের হতে হচ্ছে তাদের।
রিকশাচালক রবিউল ইসলাম বলেন,
ঘন কুয়াশা আর ঠান্ডা বাতাসের কারণে মানুষ রাস্তায় কম বের হচ্ছে। যাত্রীও আগের তুলনায় অনেক কম। শীতের জন্য অনেকেই রিকশায় উঠতে চায় না। তারপরও পেটের দায়ে প্রতিদিন বের হতে হচ্ছে।
শীতের দাপট পড়েছে কৃষিখাতেও। বোরো ধান, আলু ও সরিষার চাষ করা কৃষকরা ঘন কুয়াশা ও ঠান্ডায় চারা নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা করছেন। মাঠ পর্যায়ে শীতজনিত ক্ষতির শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, মৃদু শৈত্যপ্রবাহের কারণে রবি ফসল ও বোরো ধানের বীজতলায় বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। বর্তমানে উপজেলার মাঠে সরিষা, ভুট্টা, পেঁয়াজ, রসুনসহ বিভিন্ন মৌসুমি ফসল এবং বোরো ধানের বীজতলা রয়েছে। কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
স্থানীয়রা বলছেন, শীতের এই পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে শিশু, বয়স্ক ও অসুস্থ মানুষের ঝুঁকি আরও বাড়বে। দ্রুত শীতবস্ত্র বিতরণসহ প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।