ময়মনসিংহের ভালুকায় পোষাক শ্রমিক দিপু চন্দ্র দাসকে (৩৫) নির্মমভাবে হত্যা করে মরদেহ গাছে ঝুলিয়ে আগুনে পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় ‘মূলহোতা’ হিসেবে চিহ্নিত নিবির ইসলাম অনিককে (২০) গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার বিকেলে ঢাকার বনানী এলাকায় অভিযান চালিয়ে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের টঙ্গী পশ্চিম থানাধীন চেরাগআলী এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) গ্রেফতার অনিককে ময়মনসিংহে এনে আদালতে হাজির করা হয়।
গ্রেফতারকৃত অনিক ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার ধানীখোলার মধ্য ভাটিবাড়ি এলাকার মো. কালিমুল্লাহর ছেলে। তিনি চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে ভালুকার হবিরবাড়ি ইউনিয়নের জামিরদিয়া ডুবালিয়াপাড়া এলাকায় অবস্থিত পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস (বিডি) লিমিটেড নামের একটি পোশাক কারখানায় নিটিং অপারেটর হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ঘটনার পর থেকেই তিনি কর্মস্থলে অনুপস্থিত ছিলেন।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গ্রেফতার অনিক ও তার সহযোগীরা পোষাক শ্রমিক দিপু চন্দ্র দাসকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করে। পরে মরদেহ রশি দিয়ে মহাসড়কের ডিভাইডারের একটি গাছে ঝুলিয়ে আগুন ধরিয়ে পুড়িয়ে ফেলা হয়। বর্বর এই হত্যাকাণ্ডে পুরো এলাকায় তীব্র চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও ও ছবিতে দেশজুড়ে নিন্দার ঝড় ওঠে।
ঘটনার পরপরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও মোবাইলফোনে ধারণকৃত ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে তদন্তকারী দল হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহভাজনদের শনাক্ত করতে সক্ষম হয়। একটি ভিডিওতে দেখা যায়, সাদা শার্ট পরিহিত এক ব্যক্তি রশি দিয়ে মৃত দিপুকে গাছের সঙ্গে ঝুলিয়ে দিচ্ছে। প্রযুক্তিগত বিশ্লেষণ ও প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে ময়মনসিংহ ও নেত্রকোনা জেলার বিভিন্ন এলাকায় ধারাবাহিক অভিযান চালিয়ে অনিককে গ্রেফতার করা হয়।
জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, হত্যাকাণ্ডে জড়িত অন্য আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
প্রসঙ্গত, নিহত দিপু চন্দ্র দাস ময়মনসিংহের তারাকান্দা উপজেলার রবি চন্দ্র দাসের ছেলে। তিনি পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস (বিডি) লিমিটেড কারখানার লিংকিং সেকশনে কর্মরত ছিলেন। গত ১৮ ডিসেম্বর রাত পৌনে ৯টার দিকে সহকর্মীদের সঙ্গে কথা বলার সময় মহানবী হজরত মোহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে কটূক্তি করেন বলে অভিযোগ ওঠে। বিষয়টি ছড়িয়ে পড়লে বিক্ষুব্ধ লোকজন দিপুকে কারখানা থেকে বের করে এনে মারধর করে হত্যা করে। পরদিন ১৯ ডিসেম্বর বিকেলে নিহতের ভাই অপু দাস অজ্ঞাতনামা দেড়শ’ জনকে আসামি করে ভালুকা মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।