গাউয়িা মার্কেটে গভীর রাতেও ক্রেতাদের ভিড়। ছবি: সংবাদ সারাবেলা
শুক্রবার রাত ১২টা। অথচ রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকায় গিয়ে মনে হলো যেন এইমাত্র সন্ধ্যা নেমেছে। আলোকসজ্জায় ঝলমল করছে শপিং মল ও বিপণি বিতানগুলো। রাস্তায় যানবাহন চলাচলও স্বাভাবিক। চাঁদনি চক-নিউমার্কেটের ফুটওভারপাস ও ফুুটপাতগুলোতেও হকাররা পাঞ্জাবি, শাড়ি, লুঙ্গি, বাচ্চাদের পোশাকসহ রকমারি পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেছেন। এছাড়াও ক্রেতা আকৃষ্ট করতে দিচ্ছেন মূল্যছাড়ের নানা অফার- ‘দেইখ্যা লন, বাইছ্যা লন, এক দাম এক রেট ৩শ’, ৫শ’- এমন স্লোগানে মুখরিত মতিঝিলি, গুলিস্তান, মিরপুর ও ফার্মগেটসহ ঢাকার বিভিন্ন এলাকার ফুটপাথ। আগ্রহভরে অনেক ক্রেতাই দেখছেন, পছন্দ হলে কিনেও নিচ্ছেন।
গাউছিয়া
মার্কেটের সামনের সড়কের পাশ দিয়ে হাঁটতেই ফুুটপাতে হকার ইসহাক আলী ডেকে বললেন, ‘আপা শোরুমের পাঞ্জাবি, ইন্ডিয়ান ব্র্যান্ডেরও পাঞ্জাবি আছে। দেখেন আপা, পছন্দ হলে নিয়েন। দেশীয় ব্র্যান্ডের মধ্যে ৩শ’ টাকা আর ইন্ডিয়ানগুলোর দাম
রাখছি মাত্র ৫শ’ টাকা।’ বললাম, ব্র্যান্ডের পণ্য এতো কম দামে দিচ্ছেন
কী করে? জবাবে জানালো, ‘ঈদ উপলক্ষে সংগ্রহ
করা সব ধরনের পণ্য
বিক্রিতে আমাদের একটা টার্গেট থাকে। শোরুমে যে পরিমাণ বিক্রি
হচ্ছিলো মনে হলো তা দিয়ে টার্গেট
পূরণ হবে না। তাই বাছাই করা কিছু পণ্য নিয়ে আলাদা দলে ভাগ হয়ে ফুটপাতেও বিক্রি করছি। অফার মূল্যে বিক্রি করায় বিক্রিও বেশ ভালো হচ্ছে। আপা, এতে লাভ তেমন না হলেও মূলধন
উঠিয়ে ঈদের পর নতুন মাল
উঠাতে পারবো- এই যা।’
ঈদের
বাকি আর মাত্র দু’দিন। তাই অনেকটা দিনের মতোই সরগরম রাজধানীর ঈদবাজার। কারণ সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত অফিসের কাজ তারপর ইফতার শেষ করে অনেকেই সন্ধ্যার পর শুরু করছেন
কেনাকাটা, যা চলে গভীর
রাত পর্যন্ত। বাড়তি রোজগারের আশায় রাজধানীর অধিকাংশ মার্কেট, শপিংমল ও নামি-দামি
ব্রান্ডের শো-রুম এখন
খোলা থাকছে মধ্যরাত পর্যন্ত। বেশিরভাগ দোকানেই ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড়। কেউ পোশাক কিনছেন, কেউ জুতা-কসমেটিকস, কেউবা গহনা। মনে হলো- গ্রীস্মের তপ্ত রোদ আর যানজটের ঝামেলা
এড়াতে অনেক ক্রেতাই কেনাকাটার জন্য মধ্যরাতকে বেছে নিয়েছেন। আর ক্রেতাসমাগম ভালো
থাকায় রাজধানীর বিপণিবিতানগুলোও খোলা রাখছেন ব্যবসায়ীরা।
ঢাকা
কলেজের বিপরীতে অবস্থিত নারীদের পোশাকের জন্য বিখ্যাত নূরজাহান মার্কেটের এক বিক্রেতা আব্দুল
আজিজ বললেন, ‘এই মার্কেটে সারা
বছরই কমবেশি বেচাকেনা হয়। তবে গেলো দু’বছর মহামারি
করোনার কারণে আমরা খুব ক্ষতিগ্রস্ত। ক’দিন আগে
গণ্ডগোলের কারণে তিনদিন দোকান খুলতে পারিনি। তাই শেষ এই সপ্তাহে বিক্রি
ভালো যাচ্ছে। মধ্যরাত পর্যন্ত দোকান খোলা রেখে ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছি।’
দিনের
বেলা নারী ক্রেতাদের ভিড় বেশি থাকলেও রাতে তরুণ-তরুণী ও পুরুষেরা বেশি
ভিড় করছেন। বেচাকেনায়ও দম ফেলার সময়
নেই বিক্রেতাদের। নিউ মার্কেটের ব্যবসায়ী রহমান বললেন, ‘ক্রেতাসমাগম আছে বলেই খোলা রেখেছি। তবে অনেকে এরই মধ্যে কেনাকাটা শেষ করে গ্রামের বাড়ি চলে গেছে। এ পর্যায়ে যারা
ঢাকায় ঈদ করছেন তাদেরই
ভিড় বেশি।’ তার দোকানে নারী-পুরুষ ও বাচ্চাদের সব
বয়সীদের তৈরি পোশাক রয়েছে। গরমের কারণে এবার সুতি কাপড়ের চাহিদা বেশি। রমজানের কারণে ইফতারের পরই বাড়ে ক্রেতা-দর্শনার্থীর ভিড়। বিক্রিও ভালো বলে জানান তিনি।
ঈদে
পছন্দের পোশাক কিনতে মার্কেট চষে বেড়াচ্ছেন উৎসবপ্রিয় ক্রেতারা। আর ক্রেতা আকৃষ্ট
করতে পোশাকের গুণকীর্তনে ব্যস্ততা বেড়েছে বিক্রয়কর্মীদেরও। দুই বান্ধবীকে নিয়ে চন্দ্রিমা মার্কেটে শপিং করছেন তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী আফরোজা। জিজ্ঞেস করতেই তিনি বললেন, ‘রাতে আসলে গরম কম থাকে, ভিড়ও
কিছুটা কম। একটু স্বস্তিতে কেনাকাটা করা যায়। সময়ও কম লাগে। দিনের
তুলনায় রাতে বিক্রেতারা পণ্যের দাম কিছুটা কমও রাখেন। আর ঈদ উপলক্ষে
রাজধানীজুড়ে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে, তাই রাতে কেনাকাটা করতে আসা। তাছাড়া একসঙ্গে শপিং করার মজাই আলাদা।’
মিরপুর
এলাকার বাসিন্দা ব্যবসায়ী আরিফ হোসেন জানান, ‘রোজা ও প্রচণ্ড গরমের
কারণে দিনে কেনাকাটা করা কঠিন। এছাড়া দিনের বেলার অসহনীয় যানজট এড়াতেই এ সময়ে মার্কেটে
আসা। দিনে ১ ঘণ্টায়ও মার্কেটে
পৌঁছানো যেত না। অথচ এখন মাত্র ১০ মিনিটে এসেছি।
রাতেও কোনো দোকান ফাঁকা নেই, তবুও দেখেশুনে ঠাণ্ডা মাথায় শপিং করতে পারছি।’ দোকানিরা জানান, ‘এবার রমজানের প্রথম সপ্তাহ শেষে প্রতিদিন সকাল থেকে রাত ২টা পর্যন্ত মার্কেট খোলা রাখা হচ্ছে। ক্রেতাও আসছেন প্রচুর। পোশাকের পাশাপাশি এপর্যায়ে ম্যাচিং করা জুতা, গহনা, প্রসাধনসামগ্রী বেশি বেচাকেনা হচ্ছে। ’
রাতে
রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেট এলাকা ঘুরে দেখা যায়, প্রতিবারের মতো এবারও ক্রেতা আকৃষ্ট করতে শপিংমল ও বিপণিবিতানে করা
হয়েছে দৃষ্টিনন্দন আলোকসজ্জা। কিছু কিছু মার্কেটের সাজসজ্জায় গ্রামীণ আবহ তুলে ধরা হয়েছে। এবার ঈদ ফ্যাশনে ছেলেরা
বেশি কিনছেন পাঞ্জাবি, মেয়েরা থ্রিপিস, শাড়ি। মেয়ে শিশুদের জন্য পছন্দের শীর্ষে রয়েছে ফ্রক, পার্টি ফ্রক, ফ্যাশন টপস এবং ছেলে শিশুদের জন্য শার্ট, ফতুয়া, পাঞ্জাবি।
করোনা মহামারির কারণে গত দু’বছর দফায় দফায় মার্কেটগুলো বন্ধ ছিলো। তাই এবার ভিন্ন চিত্র। সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে গভীর রাত পর্যন্ত বেচাকেনার এমন আয়োজন বলছেন বিক্রেতারা। ক্রেতা-দর্শনার্থীর নিরাপত্তা এবং রাতের বেচাকেনা নির্বিঘ্ন করতে রাতে মার্কেট কেন্দ্রিক এলাকাগুলোতে পুলিশি টহল জোরদার করেছে ঢাকা মেট্টোপলিটান পুলিশ।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh