× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

পায়রা সেতু

ফিরেছে স্থানীয়দের মাঝে প্রাণের স্পন্দন

শাহিন বাবু

২৪ জানুয়ারি ২০২২, ০৪:৪৮ এএম

দিনটি স্বরণীয় হয়ে থেকেছে সব বয়সি মানুষের কাছে। দুই পাড়ে হাজার হাজার মানুষ আনন্দ উল্লাসে ফেটে পড়েছিলেন সেই দিনটিতে। স্থানীয়রা বাদ্যযন্ত্রসহ জড়ো হন।  এ সময় স্বপ্নের পায়রা সেতুর ওপর হাজারো মানুষের ঢল নামে। পুরো সেতুটি জনসমুদ্রে পরিণত হয়। আনন্দ-উৎসব বইতে থাকে দক্ষিণ জনপদজুড়ে। সেটা ছিলো পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলার লেবুখালী এলাকায় পায়রা নদীর ওপর নির্মিত পায়রা সেতু উদ্বোধনের মহেন্দ্রক্ষন। পায়রা নদীর ওপর নির্মিত সেতু গত বছরের ২৪ অক্টোবর গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি উদ্বোধন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একইসঙ্গে ঢাকা-সিলেট ও ঢাকা-তামাবিল উভয় সড়কে পৃথক এসএমভিটি লেনসহ ৬-লেন নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন সরকার প্রধান।


প্রত্যাশা পুরণ হয়েছে, সেই সাথে ফিরেছে স্থানীয়দের মাঝে প্রাণের স্পন্দন। উদ্বোধনের পর গত ৪ মাসে অনেকটাই বদলে গেছে চিত্রপট। সময়ের দুরত্ব যেমনটি কমেছে, অর্থ সাশ্রয় হচ্ছে। ক্ষুদ্র , মাঝারি এবং বৃহৎ শিল্পে বিনিয়োগের ভাবনা তৈরি হয়েছে অনেকের মাঝে।

আশির দশকেও বরিশাল থেকে কুয়াকাটা পর্যন্ত যেতে আটটি ফেরি পার হওয়া লাগত। এসব ফেরির মধ্যে ছিল- দপদপিয়া ফেরি, লেবুখালী ফেরি, পটুয়াখালী ফেরি, তেলিখালী ফেরি, বদরপুর ফেরি, কলাপাড়া ফেরি, হাজীপুর ফেরি ও মহিপুর ফেরি। এর মধ্যে তেলিখালী ও বদরপুর ফেরি দুটিতে হাতে রশি টেনে গাড়ি পারাপার হতো। সময়ের ব্যবধানে সব ফেরিরই বিলুপ্ত হলো। সর্বশেষ পায়রা নদীর ওপর নির্মিত সেতুর ফলে বিলুপ্ত হয় লেবুখালী ফেরি চলাচল।

পায়রা সেতু চালুর মাধ্যমে বরিশাল থেকে কুয়াকাটা যেতে ফেরির দুর্ভোগ  থেকে পরিত্রান মিলেছে । আগে যেখানে বরিশাল থেকে কুয়াকাটা যেতে লাগতো ৬-৮ ঘণ্টা। এখন পায়রা সেতু চালুর ফলে লাগছে মাত্র ৩-৪ ঘণ্টা। কুয়াকাটার কাপড় ব্যবসায়ী সংবাদ সারাবেলাকে বলেন, সেতুটি দেখতে খুব সুন্দর। এরপর পরিবারের সবাইকে নিয়ে একদিন সেতু দেখতে আসব।’

পটুয়াখালীর সরকারি কলেজের অনার্স শিক্ষার্থী  তোফাজ্জেল হোসেন বলেন, পাঁচ বন্ধু নিয়ে সেতু দেখতে এসেছেন। বলেন, ‘ এতোদিন ধরে দূর থেকে দেখেছি। আজ সেতুর ওপর দিয়ে হাটছি। সেতু এলাকার সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে। কী ভালো লাগছে।’  
পটুয়াখালী-বরিশাল মহাসড়কের লেবুখালী পয়েন্টে পায়রা সেতুর নির্মাণ প্রকল্প ২০১২ সালে অনুমোদন পায় একনেকে। ২০১৩ সালের ১৯ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করেন। চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান লংজিয়ান রোড অ্যান্ড ব্রিজ কনস্ট্রাকশনের তত্ত্বাবধানে নির্মাণ কাজটি শুরু হয় ২০১৬ সালের ২৪ জুলাই। কার্যাদেশে সেতু নির্মাণে ৩৩ মাস সময় বেঁধে দেওয়া হলেও দুই দফায় প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয় ২০২২ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। নির্ধারিত সময়ের আগেই যানচলাচলের জন্য সেতুটি উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।

পায়রা সেতুর দৈর্ঘ্য ৪ হাজার ৮২০ ফুট এবং প্রস্ত ১৯.৭৬ মিটার। এক্সট্রা ডোজ ক্যাবল পদ্ধতিতে নির্মিত দেশের দ্বিতীয় সেতু পায়রা। দেশে প্রথমবারের মতো ব্রিজ হেলথ মনিটরিং সিস্টেম (সেতুর স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ) চালু করা হয়েছে। যা বজ্রপাত, ভূমিকম্প বা প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং অতিরিক্ত মালামালবোঝাই যানবাহন উঠলে সেতুটি ভাইব্রেশন তৈরি করে ক্ষতির শঙ্কা থাকলে সংকেত দেবে।

কর্ণফুলি সেতুর মতোই পায়রায় লং স্প্যান অর্থাৎ ২০০ মিটার স্প্যান ব্যবহৃত হয়েছে। যা পদ্মা সেতুর স্প্যানের চেয়েও বড়। নদীর মাঝখানে একটিমাত্র পিলার ব্যবহার করা হয়। ১৭ ও ১৮ নম্বর পিলারের পাইল ১৩০ মিটার গভীর, যা দেশের সর্বোচ্চ গভীরতম পাইল। সেতুটি নদীর জলতল থেকে ১৮ দশমিক ৩০ মিটার উঁচু। উভয় পারে ৭ কিলোমিটারজুড়ে নির্মাণ করা হয়েছে সংযোগ সড়ক। পিলারের পাশে স্থাপন করা হয় নিরাপত্তা পিলার। সাবস্টেশনের মাধ্যমে সেতুতে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে। থাকছে সৌর বিদ্যুতের ব্যবস্থা।

৯ বছরের নির্মাণযজ্ঞ: দেশি-বিদেশি ১৩শ'র অধিক শ্রমিক পাঁচ বছর কাজ করে নির্মাণ করেছেন সেতুটি। তবে প্রকল্প অনুমোদন থেকে উদ্বোধন পর্যন্ত ৯ বছরের মতো সময় লেগেছে সেতু চালু হতে। সেতুতে ৩২ টি স্প্যান, ৫৫টি টেস্ট পাইল, ১৬৭টি বক্স গার্ডার, ২৮৬টি পাইল, ৩১টি পাইলক্যাপ, ২২৪টি আই গার্ডার স্থাপন করা হয়েছে। প্রকল্পটির প্রধান উদ্দেশ্য ছিলো কচুয়া-বেতাগী-পটুয়াখালী-লোহালিয়া-কালাইয়া সড়কের ১৭ তম কিলোমিটারে (জেড ৮০৫২) পায়রা নদীর উপর পায়রাকুঞ্জ নামক স্থানে ১৬৯০.০০ মিঃ দীর্ঘ সেতু নির্মাণের মাধ্যমে মির্জাগঞ্জ উপজেলার সাথে পটুয়াখালী সদর এবং ঢাকার সরাসরি ও নিরবচ্ছিন্ন এবং ব্যয় সাশ্রয়ী সড়ক যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা করা।

জিডিপি-তে ইতিবাচক প্রভাব: প্রকল্প বাস্তবায়নকালীন প্রকল্প এলাকার জনগণের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে। নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার পরও সেতুর রক্ষণাবেক্ষণেও নতুন কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে। উক্ত এলাকায় নতুন নতুন শিল্প কারখানা প্রতিষ্ঠিত হবে। এতে কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ ঐ এলাকার জনগণের আয় বৃদ্ধি পাবে। যা জিডিপিতে অবদান রাখবে।    
 
প্রকল্পের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা: সেতুটি নির্মাণে ২০১২ সালে সম্ভাব্যতা সমীক্ষায় প্রস্তাবিত ব্যয় সর্বশেষ রেট সিডিউল অনুযায়ী সংশোধন করা হয়। উল্লেখ্য, পটুয়াখালী সরকারি জুবিলী উ”চ বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণির ছাত্র শীর্ষেন্দু বিশ্বাস মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বরাবর পত্র প্রেরণ করে মির্জাগঞ্জ হতে পটুয়াখালী যাওয়ার জন্য পায়রা নদীর উপর সেতু নির্মাণের অনুরোধ জানায়। শীর্ষেন্দু বিশ্বাসের পত্রের জবাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মির্জাগঞ্জের পায়রা নদীতে একটি সেতু নির্মাণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে মর্মে তাকে আশ্বস্ত করেন।  প্রস্তাবিত এই সেতুটি নির্মাণের প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পত্র মারফত সেতু বিভাগকে অনুরোধ জানানো হয়। সেতুটি নির্মাণে উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাসমূহের অর্থ সহায়তা চাওয়া হলেও এ বিষয়ে কোন সাড়া পাওয়া যায়নি। যে কারণে জিওবি অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের প্রস্তাব করা হয়েছে।

সেতুর প্রাথমিক ডিজাইন অনুযায়ী বিআইডব্লিউ-এর শ্রেণীবিন্যাস অনুযায়ী এই রুটটি ১ম শ্রেণীর হওয়ায় নৌযান চলাচলের সুবিধার্থে সেতুর প্রস্ত ধরা হয়েছে ১৮.৩ মিটার। সেতুর মোট দৈর্ঘ্য ১৬৯০ মিটার। এর মধ্যে মাঝের ১০০ মিটার দৈর্ঘ্যের ৯ টি স্প্যান এবং উভয় প্রান্তে ৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের ২টি স্প্যান ও ৩০ মিটার দৈর্ঘ্যের ২৩ টি স্প্যান।  
 
পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীকে লেখা পটুয়াখালীর শিশু শীর্ষেন্দুর চিঠিতে অনেক মানবিক যুক্তি ছিল। শীর্ষেন্দুর চিঠিতে প্রকল্পটি শীর্ষে উঠেছে। প্রধানমন্ত্রী শিশু শীর্ষেন্দুকে দেওয়া কথা রেখেছেন। ২০২৫ সালে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে সেতু দিয়ে যান চলাচল করবে। তিনি জানান, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হওয়ার ফলে মির্জাগঞ্জ উপজেলার সঙ্গে পটুয়াখালী, বরিশাল এবং ঢাকার সরাসরি, নিরবচ্ছিন্ন ও ব্যয় সাশ্রয়ী সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপিত হয়েছে।

Sangbad Sarabela

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । 01894-944220 । [email protected], বিজ্ঞাপন: 01894-944204

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.