× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা জামায়াত বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

ফুসফুসের ক্যানসার প্রতিরোধ ও প্রতিকারে চাই জনসচেতনতা

ডা. মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ

০৫ নভেম্বর ২০২২, ০২:৪৮ এএম

নভেম্বর মাস হচ্ছে ফুসফুসের ক্যান্সার সচেতনতা মাস ২০২২। ইহা আমাদের সচেতন করে যেন প্রাথমিক অবস্থায় ক্যানসার শনাক্ত করতে পারি এবং তার প্রতিরোধ করতে পারি। ফুসফুসকে সুস্থ রাখার দিকে খেয়াল রাখতে হবে আমাদের। এর কারণ হলো, রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাপনার অন্যতম অঙ্গ এই ফুসফুস। বিশ্বব্যাপী ফুসফুসের ক্যানসারের ক্রমবর্ধমান প্রাদুর্ভাব সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানোর লক্ষ্যেই নভেম্বর মাসটিকে ফুসফুসের ক্যানসার সচেতনতা মাস হিসাবে পালিত হয়। আমাদের দেশেও সেমিনার ও সিম্পোজিয়ামের মাধ্যমে এই মাসের তাৎপর্য তুলে ধরা হয়ে থাকে। আজকের বিষয় নিয়ে কলাম লিখেছেন বাংলাদেশের বিশিষ্ট গবেষক ও জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা ডা.এম এম মাজেদ তার কলামে লিখেন...মানবদেহে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হচ্ছে ফুসফুসের। ফলে দেখা দিচ্ছে শ্বাসকষ্টের সমস্যা।আর

ফুসফুস ক্যানসার একটি মারাত্মক ব্যাধি। এটি প্রাথমিকভাবে শনাক্ত করা বেশ কঠিন। কারণ অন্য ক্যানসার শনাক্তকরণে যে স্ক্রিনিং পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়, তা ফুসফুস ক্যানসারের ক্ষেত্রে ততটা কার্যকরী ভূমিকা পালন করে না। তাই আর্লি স্টেজ পার হলে কিংবা ইন্সিডেন্টাল ফাইন্ডিংয়ের মাধ্যমে শনাক্ত করা যায়। যেমন অনেক সময় দেখা যায়, আক্রান্ত ব্যক্তি কোনো কারণে ফুসফুসের এক্সরে করেছেন, সেখান থেকে সন্দেহজনকভাবে পরবর্তী সময়ে ফুসফুস ক্যানসার শনাক্ত করে চিকিৎসা প্রদান করা হয়ে থাকে। আমাদের দেশে পুরুষদের ক্ষেত্রে ফুসফুসের ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। মৃত্যুঝুঁকির প্রসঙ্গ আসলে বলতে হবে বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ক্যানসারে মৃত্যুঝুঁকি সবচেয়ে বেশি।

ফুসফুস ক্যানসার দুভাবে হতে পারে। এক. ফুসফুসে ক্যানসার যখন শুধু ফুসফুসেই সীমাবদ্ধ থাকে। বলা যায় কাশি, জ্বর, গলার স্বর পরিবর্তন, কাশির সঙ্গে রক্ত কিংবা শ্বাসকষ্ট ফুসফুসে ক্যানসারের কিছু সাধারণ উপসর্গ, যেগুলো ফুসফুসে সীমাবদ্ধ হয়ে থাকে।

দুই. ফুসফুস ক্যানসার ফুসফুসে সীমাবদ্ধ না থেকে ফুসফুস থেকে অন্য কোথাও ছড়িয়ে পড়ে; যেমন হাড়ে ছড়িয়ে পড়লে প্রবল ব্যথা অনুভব হতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে ফুসফুস ক্যানসার মস্তিষ্কেও ছড়িয়ে যেতে পারে, এমনকি অনেক সময় আক্রান্ত রোগীকে চিকিৎসা প্রদান করতে অজ্ঞান অবস্থাতেও নিয়ে আসতে হতে পারে। এটি লিভারে ছড়িয়ে পড়তে পারে, এ ক্ষেত্রে পেটে ব্যথা কিংবা জন্ডিস হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই রোগটি কোন স্তরে আছে সেটির ওপর নির্ভর করেই চিকিৎসা প্রদান করতে হবে। অন্য ক্যানসারের মতো ফুসফুস ক্যানসারকেও চারটি স্তরে ভাগ করা যেতে পারে। আর্লি স্টেজে এটি শনাক্ত করা খুবই কঠিন। তবে কিছু ইন্সিডেন্টাল ফাইন্ডিংসের মাধ্যমে এটি শনাক্ত করা হয়ে থাকে। পরবর্তী সময়ে ফুসফুসের লোকাল সমস্যা নিয়ে রোগী আসতে পারে। অনেকের ক্ষেত্রে ফুসফুস ছাড়িয়ে এটি অন্য কোথাও এমনভাবে চলে যায় যে সেসব অঙ্গে ক্ষতির লক্ষণ নিয়ে যখন রোগী পরামর্শ নিতে আসে, তখন ফুসফুস ক্যানসার ধরা পড়ে। গবেষণায় দেখা গেছে, ৮৫%-৯০% ফুসফুসে ক্যানসারের জন্য দায়ী হলো ধূমপান। আমাদের দেশে বিভিন্ন স্থানে পানিতে আর্সেনিক রয়েছে, এটিও ক্যানসারের একটি অন্যতম কারণ। এ ছাড়া পারিবারিক সূত্রেও কিংবা বার্ধক্যজনিত অন্য রোগের কারণেও অনেকে ক্যানসারে আক্রান্ত হতে পারে। তাই ফুসফুসে ক্যানসারের উপসর্গ দেখামাত্রই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।

> ক্যান্সার কী?

বহুকোষী প্রাণীর শরীর অসংখ্য ছোট ছোট কোষের সমন্বয়ে তৈরি। এই কোষগুলো একটা নির্দিষ্ট সময় পরপর মৃত্যুবরণ করে। আর এই পুরনো মৃত কোষগুলোর স্থানে নতুন তৈরি হওয়া কোষ এসে জায়গা করে নেয়। সাধারণভাবে কোষগুলো নিয়ন্ত্রিতভাবে এবং নিয়মমাফিক বিভাজিত হয়ে নতুন কোষের জন্ম দেয়। তবে যখন এই কোষগুলো ক্যান্সার সহায়ক অনকোজিন সক্রিয় হওয়ার কারণে অথবা ক্যান্সার দমনকারী জিন নিষ্ক্রিয় থাকায় অনিয়ন্ত্রিতভাবে বৃদ্ধি পেতেই থাকে; তখনই সেই স্থানে মাংসের দলা অথবা চাকা দেখা যায়। যাকে বলা হয় টিউমার। এই টিউমার বিনাইন কিংবা ম্যালিগন্যান্ট হতে পারে। ম্যালিগন্যান্ট টিউমারই ক্যানসার নামে পরিচিত। অর্থাৎ নিওপ্লাস্টিক বা টিউমার কোষ উচ্চহার বিশিষ্ট আক্রমণাত্মকতা, মেটাস্টাসিস এবং শরীরের অন্যত্র ছড়িয়ে পড়ার ক্ষমতা সম্পন্ন হলে তাকে ম্যালিগন্যান্ট টিউমার বা ক্যানসার বলে অভিহিত করা হয়।

> ফুসফুসের ক্যান্সার:-

উপরোক্ত বিষয়গুলো ফুসফুসে সংঘটিত হলে তাকে বলা হয় ফুসফুসীয় ক্যানসার। শ্বাসতন্ত্রের যাবতীয় রোগের মধ্যে ফুসফুসের ক্যানসার সবচেয়ে মারাত্মক। আমাদের দেশে মরণব্যাধি ক্যানসারের সঠিক পরিসংখ্যান তেমন নেই।

ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ফর রিসার্চ তথ্য অনুযায়ী  প্রতিবছর বাংলাদেশে ১ লাখ ৫০ হাজার মানুষ নতুন করে ক্যানসারে আক্রান্ত হন। আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে প্রতিবছর মারা যান প্রায় ৯১ হাজার ব্যক্তি। মৃত্যুবরণকারী ব্যক্তিগণ প্রধানত ফুসফুস, কোলোরেক্টাল, পাকস্থলি, লিভার, স্তন, খাদ্যনালী, প্যানক্রিয়াস ও জরায়ুমুখ ক্যানসারে ভুগেই মারা যান সবচেয়ে বেশি। বাংলাদেশে শনাক্ত মোট ক্যানসার রোগীর প্রায় ১৬ শতাংশই ফুসফুসের ক্যানসারে আক্রান্ত। ফুসফুসীয় ক্যানসার ফুসফুসের শ্বাসনালি, বায়ুথলি ও মিউকাস গ্ল্যান্ডের এপিথেলিয়াম ইত্যাদি যেকোনো কোষ থেকেই সৃষ্টি হতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে ক্যানসার শুধু ফুসফুসেই সীমাবদ্ধ না থেকে তা লসিকাগ্রন্থি ও অন্য অঙ্গে (যেমন মস্তিষ্ক, হাড় ইত্যাদি) ছড়িয়ে পড়তে পারে।

ক্যানসার কোষের ওপর নির্ভর করে ফুসফুসের ক্যানসারকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়, যেমন- স্মল সেল কারসিনোমা ও নন-স্মল সেল কারসিনোমা। নন-স্মল সেল কারসিনোমাকে আবার তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়- স্কোয়ামাস সেল কারসিনোমা (৩৫ শতাংশ), এডেনোকারসিনোমা (৩০ শতাংশ) এবং লার্জ সেল কারসিনোমা (১৫ শতাংশ)।এ ছাড়াও ফুসফুসের অন্য ধরনের ক্যানসারের মধ্যে এডিনয়েড সিস্টিক কারসিনোমা, লিম্ফোমা, সারকোমা প্রভৃতিদেখা যায়, যা মূলত দুর্লভ প্রকৃতির। সাধারণত শ্বাসনালীর গোড়ার দিকে স্কোয়ামাস সেল কারসিনোমা আর মাঝের দিকে স্মল সেল কারসিনোমা উৎপন্ন হয়। ফুসফুসীয় ক্যান্সারের চিকিৎসার ভিত্তি হলো এই শ্রেণিবিভাগ।

> ফুসফুসের ক্যানসারের কারণ:-

বিশ্বব্যাপী পুরুষের মৃত্যুর প্রথম কারণ ফুসফুসের ক্যানসার, আর নারীদের ক্ষেত্রে এটি দ্বিতীয় কারণ। গ্রামের চেয়ে শহরবাসীরাই ফুসফুসের ক্যানসারে আক্রান্ত হন বেশি। অবশ্য এর পেছনে যথাযথ কারণও বিদ্যমান- গ্রামের চেয়ে শহরে যানবাহন ও কল-কারখানার কালো ধোঁয়া, বায়ুদূষণ, ধুলাবালি সবকিছুই অনেক বেশি।

অজৈব পদার্থের ক্ষুদ্র কণা বা আঁশ যেমন- এসবেস্টস, নিকেল, ক্রোমিয়াম এবং জৈব পদার্থ যেমন- বেনজিন, বেনজোপাইরিন ইত্যাদি বায়ুর সঙ্গে ফুসফুসে প্রবেশ করে ফুসফুসের ক্যানসার সৃষ্টি করতে পারে। ফুসফুসের ওপর প্রতিনিয়ত অত্যাচারই এর জন্য দায়ী। ফুসফুসের ক্যানসারে আক্রান্ত শতকরা প্রায় ৮০ ভাগ রোগীই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ধূমপায়ী ও তামাকসেবী।

দিনে ২০টি করে ৪০ বছর সিগারেট খেলে ফুসফুসের ক্যানসার হওয়ার আশঙ্কা অধূমপায়ীর তুলনায়প্রায় ২০ গুণ বেশি। নিয়মিত ধূমপায়ীদের মধ্যে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই স্মল সেল ক্যানসার হতে দেখা যায়। ফুসফুসের অন্য ক্যানসারের তুলনায় এটি বেশি মারাত্মক এবং অপেক্ষাকৃত দ্রুত শরীরের অন্যান্য জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে।

আবার ফুসফুসের ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীর আত্মীয়ের ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকিও অন্যদের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। এ থেকে ধারণা করা হয় যে, এই ক্যানসারের উৎপত্তিতে বংশগত প্রভাবও বিদ্যমান। এ ছাড়া সিলিকোসিস, ইন্টারস্টিশিয়াল লাং ডিজিজ, সিস্টিক ফাইব্রোসিস, ক্রোনিক ব্রঙ্কাইটিস ইত্যাদি রোগগুলোতে ফুসফুসের ক্যানসারের ঝুঁকিও বেশ বৃদ্ধি পায়।

বায়ুতে রেডন গ্যাসের উপস্থিতি এবং অনাকাঙ্ক্ষিত তেজস্ক্রিয়তাও ফুসফুসের ক্যান্সারের উল্লেখযোগ্য কারণ। কতিপয় বিশেষ পেশাজীবী, যেমন- কয়লার খনিশ্রমিক, বিল্ডিং নির্মাণ শ্রমিক, পেট্রোলিয়াম, কেমিক্যাল বা রাবার কারখানার শ্রমিক ও জাহাজ শ্রমিক, যারা এক্স-রে বিভাগে কাজ করেন, যাদের রেডিয়েশন থেরাপি দেওয়া হয়, অ্যাসবেস্টস কারখানার কর্মী কিংবা প্রচুর ধূলা-বালুর মধ্যে কাজ করেন- এ ধরনের ব্যক্তিদের মধ্যে ফুসফুস ক্যানসার হওয়ার হার বেশি।সেইসঙ্গে শরীরের অন্য কোথাও ক্যান্সার হলে সেই স্থান থেকে রক্তের মাধ্যমে দ্রুত ফুসফুসে ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকিও থাকে। যাকে বলা হয় ফুসফুসের সেকেন্ডারি কারসিনোমা। প্রায় ৪০ শতাংশ রোগীর ফুসফুসের ক্যানসার একদম শেষ পর্যায়ে গিয়ে ধরা পড়ে। এর কারণ হলো অবহেলা।

> ফুসফুসের ক্যানসারের লক্ষণ:

ফুসফুসের ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার অন্যতম লক্ষণ হলো কাশি। কাশি যদি আট সপ্তাহের বেশি স্থায়ী হয় সঙ্গে বুকে ব্যথা থাকে তাহলে সাবধান হতে হবে। দুই-তৃতীয়াংশ রোগীর ক্ষেত্রে ফুসফুসের ক্যানসারের প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে কাশি দেখা যায়। তবে কাশির সঙ্গে কফ তৈরি হবেই, এমন কোনো কথা নেই।কারণ খুশখুশে কাশিও হতে পারে ফুসফুসের ক্যানসারের লক্ষণ। কাশির সঙ্গে রক্ত ওঠা ফুসফুস ক্যানসারের আরেকটি লক্ষণ। ধূমপায়ী পুরুষ রোগীদের ক্ষেত্রে এ লক্ষণটি আরও বেশি দেখা যায়। এ ছাড়াও ক্যানসার কোষ শ্বাসনালির কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করে। তাই দেখা দিতে পারে শ্বাসকষ্টও।

তদুপরি দীর্ঘদিন গায়ে গায়ে জ্বর থাকা, হঠাৎ করে ডায়েট বাবা ব্যায়াম ছাড়াই প্রায় ৫ কেজি বা তার বেশি ওজন কমে যাওয়া, ঘনঘন নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়া, দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে কর্কশ বা খসখসে হয়ে যাওয়া কণ্ঠস্বর বা কণ্ঠস্বরে হঠাৎ পরিবর্তন, দীর্ঘ সময়ব্যাপী ক্লান্তি বা অবসাদবোধ, দুর্বলতা, ক্ষুধামান্দ্য প্রভৃতিও হতে পারে ফুসফুসের ক্যানসারের লক্ষণ।

পাশাপাশি শরীরের বিভিন্ন অংশ, যেমন ঘাড়, পিঠ, বুক ও বাহুতে ব্যথা হতে পারে। যা কাশি দেওয়ার সময় আরো বেড়ে যায়। প্রায় ৫০ শতাংশ মানুষের ফুসফুস ক্যানসার ধরা পড়ে বুক ও কাঁধের ব্যথা নির্ণয়ের মাধ্যমে।

> ফুসফুসের ক্যানসার শনাক্তকরণ:-

ফুসফুসের ক্যানসার শনাক্তকরণের ক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে বুকে এক্স-রে করা হয়। মাইক্রোস্কোপের নিচে কফ বিশ্লেষণের মাধ্যমেও অনেক সময় ক্যানসার কোষের উপস্থিতি শনাক্ত করা সম্ভব। তবে ক্যানসার শনাক্তের সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো বায়োপসি। যেখানে অস্বাভাবিক কোষ বা টিস্যুর পর্যবেক্ষণ বা নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হয়। প্রচলিত বায়োপসিগুলোর মধ্যে ব্রংকোস্কপি, মেডিয়াস্টিনোস্কপি, নিডল বায়োপসি ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

ফুসফুসীয় ক্যানসারের চিকিৎসা শুরু করার আগে ক্যানসার কোন পর্যায়ে আছে- তা নির্ণয় করা হয়। ক্যানসারের ধরন, অবস্থান ও আকার, স্টেজিং, গ্রেডিং এবং রোগীর শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে চিকিৎসার পরিকল্পনা করা হয়।

> পরামর্শ:-

ফুসফুসের ক্যানসার প্রতিরোধে সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো ধূমপান না করা ও তামক সেবন থেকে বিরত থাকা। এমনকি ধূমপায়ীর নিকটে অবস্থান করা থেকেও বিরত থাকতে হবে। শিল্প কারখানা ও গাড়ির কালো ধোঁয়া নির্গমন গ্রহণযোগ্য মাত্রায় কমিয়ে আনা জরুরি। বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ যেমন- ক্রোমিয়াম, ক্যাডমিয়াম, অ্যাসবেস্টস ইত্যাদি এড়িয়ে চলাও বুদ্ধিমানের কাজ। আবার ফুসফুসের প্রদাহজনিত রোগ যেমন- যক্ষ্মা, নিউমোনিয়া ভালো হয়ে যাওয়ার পর ফুসফুসের আক্রান্ত স্থানে ক্যানসার দেখা দিতে পারে। তাই এ বিষয়ে যথাসম্ভব সতর্ক থাকা আবশ্যক।৫০ বছরের বেশি বয়সী ব্যক্তি যদি ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে প্রতিদিন ২০টির বেশি সিগারেট ব্যবহার করেন; তাহলে তাদের ফুসফুসের ক্যানসারের জন্য স্ক্রিনিং করা উচিত। প্রাথমিক পর্যায়ে রোগটি ধরা পড়লে চিকিৎসার মাধ্যমে মৃত্যুহার অনেকটাই কমিয়ে আনা যায়। ফুসফুসের নিরাপত্তা অনেকাংশেই নিজের হাতে।

সতর্কতার সঙ্গে কিছু নিয়মকানুন মেনে চললে এই ভয়াবহ রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেকাংশেই এড়ানো যায়।আর ফুসফুসকে সুস্থ রাখার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করে খাবার। বয়স বৃদ্ধি, পরিবেশ দূষণ এবং বিভিন্ন অসুখ-বিসুখের কারণে যাদের ফুসফুসের কার্যক্ষমতা কমে গেছে, তাদের খাবারের তালিকায় বাড়তি নজর দেয়া প্রয়োজন।আমেরিকান লাং অ্যাসোসিয়েশনের রিপোর্ট অনুযায়ী, এক্ষেত্রে কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবারের পরিবর্তে স্বাস্থ্যকর ফ্যাট জাতীয় খাবার খাওয়া উচিত। কারণ কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার পরিপাকের সময় বেশি কার্বন ডাই অক্সাইড তৈরি করে এবং উপকারি ফ্যাট জাতীয় খাবার পরিপাকের সময় কার্বন ডাই অক্সাইড কম পরিমাণে তৈরি করে। যার ফলে সুস্থ থাকে আমাদের ফুসফুস।

* পানি:-পানি পান শরীরের পক্ষে নিঃসন্দেহে উপকারী। এটি ফুসফুস ভালো রাখতে সাহায্য করে। ফুসফুসের স্বাস্থ্য এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ঠিক রাখতে প্রতিদিন দুই থেকে তিন লিটার বা তার বেশি পানি পান করুন। এতে ফুসফুসের রক্ত সঞ্চালন ঠিক থাকে এবং শ্লেষ্মা পাতলা থাকে। ফলে শরীরের ভেতরে থাকা দূষিত পদার্থ ও জীবাণু হাঁচি-কাশির মাধ্যমে সহজেই বের হয়ে যায়।

* গ্রিন টি:-গ্রিন টি একটি স্বাস্থ্যকর পানীয়। গ্রিন টিতে থাকা উচ্চমাত্রার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ফুসফুসের প্রদাহ কমায় ও কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে। ফুসফুস ভালো রাখতে প্রতিদিন দুইকাপ গ্রিন-টি পান করতে পারেন।

* মাছ:-বিভিন্নরকম মাছ আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে মাছ বেশ কার্যকরী। বিশেষ করে ফ্যাটি অ্যাসিড যুক্ত সামুদ্রিক মাছ ফুসফুসের কার্যক্ষমতাকে অনেকটা বাড়িয়ে দেয়। মাছে থাকা ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড ফুসফুসের সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সহায়তা করে। তাই নিয়ম করে মাছ রাখুন পাতে।

* কাঁচা হলুদ:-হলুদে আছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও কারকিউমিন, যা ফুসফুসকে দূষিত পদার্থের প্রভাব থেকে রক্ষা করে এবং প্রদাহ কমায়। প্রতিদিন সকালে কাঁচা হলুদ চিবিয়ে খেতে পারেন। শুধু হলুদ না খেতে ভালো না লাগলে মধু ও হলুদ একসঙ্গে খেতে পারেন। এতে করে ভালো থাকবে ফুসফুস।

* রসুন ও আদা:-উপকারী মসলা হিসেবে আদা ও রসুনের নাম সবার জানা। এতে থাকা অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি বৈশিষ্ট্য ফুসফুসকে ভালো রাখে এবং ফুসফুস থেকে দূষিত পদার্থ বের করতে সাহায্য করে। ফুসফুসের রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে এবং ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি কমাতে কাজে লাগে এই দুই মসলা।

* ব্রকলি:-ব্রকলিতে আছে সালফোরাফেন ও অক্সিডেটিভ, যা স্ট্রেসের ক্ষতি থেকে শরীরকে রক্ষা করে এবং ফুসফুসের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে। তাই প্রতিদিনের খাবারের রাখুন ব্রকলি।

* ফল ও শাকসবজি:-নানারকম ফল ও শাক-সবজি খেলে ভালো থাকবে ফুসফুস। বেদানা, আপেল, আঙুর, কমলালেবু, পেয়ারা, গাজর, বিনস, শসা, কুমড়ো ইত্যাদি ফল ও শাকসবজি ফুসফুস ভালো রাখে। এছাড়াও, পাকা মরিচ, অলিভ অয়েল, বাদাম ও বীজ জাতীয় খাবার, পেঁয়াজ, দুধ ও ডিম ইত্যাদি খাবার ফুসফুসের যত্ন নিতে কার্যকর ভূমিকা পালন করে।

>হোমিওপ্রতিকার:-মানব জীবনে যত দুরারোগ্য ব্যাধি আছে ক্যান্সার তাঁর মধ্যেই ফুসফুসে ক্যানসার একটি। তবে ধর্মীয় নিয়মনীতি মেনে চললে ও জীবন চলায় স্বাস্থ্য বিধি মানলে এ রোগ থেকে দূরে থাকা যায়। প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে ক্যানসারের চিকিৎসা করাটা সহজ। শরীরের যে অংশে ক্যানসার ধরা পড়ে সেখান থেকে ক্যানসার আক্রান্ত টিস্যু হোমিও ওষুধের মাধ্যমে অপসারণের চিকিৎসা দেয়া হয়। এ রোগের চিকিৎসা প্রাথমিক অবস্থায় সারাতে না পারলে বিপদ হতে পারে। এ রোগ বেড়ে গিয়ে জটিল ও কঠিন আকার ধারণ করতে পারে। অনেক সময় জীবননাশের সম্ভাবনা দেখা দেয়। একুশ শতকের পৃথিবীতে চিকিৎসা বিজ্ঞানের অগ্রগতির সাথে সাথে হোমিও চিকিৎসাও ব্যাপক উন্নতি সাধন করেছে। উন্নত হয়েছে হোমিও ওষুধের গুণগতমান। সঠিকভাবে রোগ নির্ণয় করে ওষুধ প্রয়োগ করলে হোমিও চিকিৎসায় ফুসফুসের ক্যানসার  দ্রুত সুফল পাওয়া যায়। 

পরিশেষে বলতে চাই, ফুসফুসের ক্যানসার একটি জটিল রোগ, শুধু সচেতনতাই নয়, প্রতিরোধের জন্যও প্রয়োজন প্রচেষ্টা। আপনি বা আপনার প্রিয়জন কি এই ঝুঁকির মধ্যে আছেন কিনা তা আরো জানুন এবং আপনার ফুসফুস আজই পরীক্ষা করুন।তাই সচেতনতার মাধ্যমে নিজের ও আশপাশের সকলকে ভয়াল রোগটির বিষয়ে সতর্ক করে তুলুন- তবেই ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে একটি সুখী, সমৃদ্ধ, সুস্থ জীবন উপহার দিয়ে যাওয়া সম্ভব।


লেখক: প্রতিষ্ঠাতা, জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি 

Sangbad Sarabela

সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.