শনিবার ১২ আগস্ট ছিল আন্তর্জাতিক যুব দিবস । বিশ্বব্যাপী তরুণ ও যুবদের সমৃদ্ধ নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা আন্তর্জাতিক যুব দিবসের উদ্দেশ্য। ১৯৯৯ সালে জাতিসংঘ এ দিবসটি পালনের সিদ্ধান্ত নেয়। ২০০০ সালের ১২ আগস্ট থেকে এটি পালন করা হচ্ছে। এ দিবসের মধ্য দিয়ে বিভিন্নভাবে তরুণ ও যুবসমাজকে সচেতন করা হয়।
বিশ্বের সব দেশের সরকারের মধ্যে তাদের দেশের যুবকদের প্রতি মনোযোগ দেওয়া এবং তাদের প্রয়োজনীয়তা পূরণের জন্য সচেতনতা তৈরি করা এই দিবসের লক্ষ্য।
বাংলাদেশের জন্য দিবসটি বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ বর্তমানে বাংলাদেশের প্রায় অর্ধেক জনগোষ্ঠিই তরুণ ও যুবক। তারাই উন্নত বাংলাদেশ বিনির্মাণের প্রকৃত কারিগর।এই যুব সমাজ বিশ্বজুড়ে জলবায়ু পরিবর্তন, মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং এমনকী বর্তমান মহামারী মতো বিভিন্ন ঘটনায় পরিবর্তনের গুরুত্বপূর্ণ শক্তি হিসাবে কাজ করেছে। বিশ্বব্যাপী সামগ্রীক পরিবর্তন আনতে যুব সমাজের এই অবদানের জন্য প্রতি বছর ১২ আগস্ট আন্তর্জাতিক যুব দিবস পালিত হয়।আর প্রতি বছর জাতিসংঘ আন্তর্জাতিক যুব দিবসের জন্য একটি থিম নির্বাচন করে। তারপরেও, এই থিমের ভিত্তিতে, বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে নানান অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এ সম্পর্কে যুবকদের মতামতও জানা যায়। তাদেরও পরামর্শ নেওয়া হয়। জাতিসংঘ তরুণদের গুরুত্ব উপলব্ধি করেই যুব উন্নয়নের বিষয়ে এখন অধিকতর মনোযোগী। ইন্টারনেট থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুসারে জাতিসংঘের হিসাবে, পৃথিবীতে ১০-২৪ বছর বয়সী ২০০ কোটি মানুষ রয়েছে যারা তরুণ এবং মোট জনসংখ্যার চারভাগের এক ভাগ। বাংলাদেশের জাতীয় যুবনীতি অনুসারে ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সীদের ‘যুব’বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। এ হিসেবে মোট জনসংখ্যার এক তৃতীয়াংশই যুব জনতা।জাতিসংঘ বিশ্বব্যাপী পরিবর্তন আনতে যুবকদের জড়িত থাকার বিষয়ে আলোকপাত করার জন্য এই দিন একটি সোশ্যাল মিডিয়া প্রচারও শুরু করেছে।দেশের যুব সমাজকে দক্ষ করে গড়ে তুলতে সরকারি ও নানা উদ্যোগের কোন বিকল্প নেই। দেশের রাজনীতি, অর্থনীতি ও সমাজকে আলোকিত করতে এই যুব সমাজের ভূমিকা অবিস্মরণীয়। সামগ্রিক প্রেক্ষাপটে যুব সমাজের অংশগ্রহণ কখনো কখনো আমাদেরকে উদ্বিগ্ন করে, কারণ আমরা সমাজের কল্যাণকর কাজের পাশাপাশি আমরা দেখতে পাই যুবসমাজ নানা ধরণের ঘৃণ্য অপকর্মের সাথে যুক্ত হয়ে যাচ্ছে। শুধু তাই নয় যুবসমাজ নেশায় আসক্ত হয়ে পরিবার সমাজ এবং রাষ্ট্রের জন্য বোঝা হয়ে তৈরি হচ্ছে। এটি আমাদের জন্য কখনোই কাম্য নয়, কাম্য ছিলও না।আর বৈশ্বিক বিভিন্ন সংকটের কারণে বিশ্বের অনেক জনগোষ্ঠীই বর্তমানে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ ও খাদ্য নিরাপত্তার সম্মুখীন হচ্ছে, বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে সারা পৃথিবীব্যাপি উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জ হলো কোভিড-১৯ এর প্রার্দুভাব এবং জলবায়ু পরিবর্তন। এখনও সকল ক্ষেত্রে ও বিভিন্ন উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় যুবদের সম্পৃক্ততা ও ক্ষমতায়নের অভাব রয়েছে। এই বিশাল সংখ্যক যুবদের অর্থবহ অংশগ্রহণ নিশ্চিত না করতে পারলে তারা দেশের উন্নয়ন তথা গণতান্ত্রিক রাজনীতির উৎকর্ষ সাধনে ভূমিকা রাখতে পারবে না, তাই যুবদের সহযোগিতা নিয়ে দেশ তথা বিশ্ব এগিয়ে যাবে, রাষ্ট্রায়ত্ব, স্বায়ত্বশাসিত, বেসরকারি সকল প্রতিষ্ঠানেই যুবদের কাজ করার সুযোগ করতে তৈরি করতে হবে, যেন তারা তাদের মেধা ও দক্ষতা বিকাশের সহায়ক পরিবেশ পায়। যুবদের সক্ষমতার প্রয়োগ ও সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে ও তাদের কর্মোদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে তাদের প্রতিনিধিত্বকে নিশ্চিত করতে হবে। তবে আজ সামগ্রিক প্রেক্ষাপটে যুব সমাজের অংশগ্রহণ কখনো কখনো আমাদেরকে উদ্বিগ্ন করে, কারণ আমরা সমাজের কল্যাণকর কাজের পাশাপাশি আমরা দেখতে পাই যুবসমাজ নানা ধরণের ঘৃণ্য অপকর্মের সাথে যুক্ত হয়ে যাচ্ছে। শুধু তাই নয় যুবসমাজ নেশায় আসক্ত হয়ে পরিবার সমাজ এবং রাষ্ট্রের জন্য বোঝা হয়ে তৈরি হচ্ছে। এটি আমাদের জন্য কখনোই কাম্য নয়, কাম্য ছিলও না। কারণ আমাদের অতীত ইতিহাস কখনোই আমাদেরকে এই শিক্ষা দেয় না। এ দেশের যুবসমাজ প্রগতিশীল ভাবনা আর মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে যে অতীত স্বর্ণালী ইতিহাস তৈরি করেছে তা আজও ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা আছে। তবে বর্তমানে কেন, যুব সমাজের মধ্যে কুলুষিত রাজনৈতিক দীক্ষা আর রাজনৈতিক ক্ষমতাকে অপব্যবহারের মাধ্যমে বিত্ত-বৈভব কুক্ষিগত করার নগ্ন মানসিকতা তাদের মগজে ঠাঁই পেয়েছে?
আমি বরাবরই একজন আশাবাদী মানুষ। আমি এখনো দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, এ দেশের যুবসমাজ এখনো পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যায় নি, তবে কিছু যুবক বা যুবতী রয়েছে যারা কিছুটা পথভ্রষ্ট, যে মূল্যবোধের ইতিবাচক শিক্ষায় তাদের মেধা ও মনন বিকশিত হওয়ার কথা ছিল, সেটি পরিপূর্ণভাবে বিকশিত হয়নি, ফলে তারা আত্মকেন্দ্রিক মনোভাব কে অগ্রাধিকার দিয়ে জীবনকে পরিচালিত করছে। যেটা সামগ্রিকভাবে একটি হতাশার জন্ম দিচ্ছে। তবুও আমি বিশ্বাস করি, এ প্রজন্মের মাঝেও অনেক সৃজনশীল প্রতিভাবান যুবক ও যুবতী রয়েছে। যাদের কর্মতৎপরতায় শুধু তারা নিজেরাই বিকশিত হচ্ছে না বরং তাদের ব্যক্তিক সাফল্যের দ্বারা তারা পুরো দেশকে প্রতিনিধিত্ব করছে। দেশের অর্জন এবং সুনামকে তারা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিচ্ছে। এই ইতিবাচক দিকগুলো আমাদের যুব সমাজের মাঝে বেশি করে ছড়িয়ে দিতে হবে। তাদেরকে ছাত্রাবস্থায় জীবন গঠনে ইতিবাচক দিকগুলো সম্পর্কে জানানোর সঠিক উদ্যোগ নিতে হবে। কারণ একটা পর্যায় থাকে, যখন মানুষের মস্তিষ্ককে যেভাবে পরিচালিত করা হয়, মস্তিষ্ক ঠিক সেভাবেই তার প্রতিফলন ঘটায়। সুতরাং আমাদেরকে চলমান সঙ্কট দূর করার ক্ষেত্রে আশাবাদী হতে হবে, ঐক্যবদ্ধ হতে হবে এবং আমাদের দেশের সম্ভাবনাময় যুবসমাজকে কেউ যেন ভুল পথে ধাবিত করতে না পারে, সেজন্য সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। কারণ আজকের এই যুবসমাজই আগামী দিনে এদেশের কর্ণধার হবেন। রাষ্ট্র পরিচালনা করবেন। সুতরাং এখন থেকে তাদের মাঝে যদি মূল্যবোধের ইতিবাচক চর্চা এবং জীবন সম্পর্কে সঠিক ধারণা তৈরি করা যায়, তাহলে এটি যেমন ঐ যুবকদের ব্যক্তিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে, তেমনি এ দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের চাকাকে গতিশীল রাখতে সক্রিয় ভূমিকা রাখবে বলে বিশ্বাস করি। যার ফলে এ দেশের উন্নয়নে ছেলে মেয়ে, নারী পুরুষ নির্বিশেষে সবাই মিলে আগামীর সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার যে স্বপ্ন রয়েছে, সেটাকে বাস্তবে রূপান্তরিত করা সম্ভবপর হবে। সুতরাং পুরুষের পাশাপাশি পরিবারের নারী সদস্যদের কে সমান সুযোগ দিয়ে এবং তার অর্জিত মেধা-দক্ষতাকে যেন দেশের কল্যাণে কাজে লাগাতে পারে, সেই ধরণের সুযোগ বা ক্ষেত্র তৈরি করতে হবে।আর বর্তমান সরকার ২০১৮ সালের আওয়ামী লীগের নির্বাচনি ইশতেহারে যেসব অঙ্গীকারের কথা বলা হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে ২০১৭ সালে প্রণীত জাতীয় যুবনীতির কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের অধীন পৃথক যুব বিভাগ ও একটি গবেষণাকেন্দ্র গঠন এবং মন্ত্রণালয়ের বাজেট বরাদ্দ বৃদ্ধি। যুবকদের কর্মসংস্থানের জন্য প্রয়োজনীয় কারিগরি শিক্ষা, প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা ছাড়াও চলমান জাতীয় সেবা কর্মসূচির ক্ষেত্রকে প্রসারিত করার পরিকল্পনা রয়েছে।
বাংলাদেশের সব আন্দোলন-সংগ্রাম ও অগ্রগতির পথে এ দেশের যুব সমাজের রয়েছে গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা। মহান ভাষা আন্দোলন থেকে স্বাধীনতা সংগ্রামসহ এ দেশের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় যুবরা যেমন জীবন উৎসর্গ করতে কার্পণ্য করেনি, তেমনি অর্থনৈতিক মুক্তির সংগ্রামেও তারা নিরলসভাবে ব্যাপৃত। বিশ্বব্যাপী ‘কোভিড-১৯’ মহামারির সময়েও আমাদের যুবসমাজের কর্মস্পৃহা আমাদের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রাকে সচল রেখেছে।
বাংলাদেশ ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উনয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে এবং ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশে পরিণত হওয়ার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তবে এ জন্য আমাদের কর্মসংস্থানের দিকে অধিক নজর দিতে হবে। সরকারি দল, বিরোধী দল, নাগরিক সমাজসহ সমাজের প্রত্যেকেরই কর্মসংস্থান সৃষ্টির দায়িত্ব রয়েছে। চাকরি সৃষ্টি একটি বড় চ্যালেঞ্জ; দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে ত্রুটিমুক্ত ও দুর্নীতিমুক্ত রেখে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা শ্রমবাজারে দক্ষ ও শিক্ষাগতভাবে যোগ্য কর্মীর চাহিদা মেটাতে পারছে না।
সরকার ইতিমধ্যে অনেক সুচিন্তিত কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত শিক্ষাকে একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় যুগোপযোগী করতে কারিগরি শিক্ষা, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে অধিকতর বিনিয়োগের প্রচেষ্টা চলছে। তরুণদের চাকরির পাশাপাশি উদ্যোক্তা হওয়ার প্রবণতা ও আত্মকর্মসংস্থান বৃদ্ধির ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।
সরকার আগামীর বাংলাদেশকে স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চায়, যেখানে প্রতিটি জনশক্তি স্মার্ট হবে। সবাই প্রতিটি কাজ অনলাইনে করতে শিখবে, ইকোনমি হবে ই-ইকোনমি, যাতে সম্পূর্ণ অর্থ ব্যবস্থাপনা ডিজিটাল ডিভাইসে করতে হবে। আমাদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মযোগ্যতা সব কিছুই ই-গভর্ন্যান্সের মাধ্যমে হবে। ই-এডুকেশন, ই-হেলথসহ সব কিছুতেই ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করা হবে। ২০৪১ সাল নাগাদ আমরা তা করা সক্ষম হব এবং সেটি মাথায় রেখেই কাজ চলছে।
আমাদের তরুণ সম্প্রদায় যত বেশি এই ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করা শিখবে, তারা তত দ্রুত দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের নানা অনুষঙ্গ ধারণ করে তরুণদের প্রশিক্ষিত করে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দেশের প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশেষায়িত ল্যাব প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে। এ ধরনের ৫৭টি ল্যাব প্রতিষ্ঠার কাজ চলছে। ৬৪টি জেলায় শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবিশন সেন্টার স্থাপন এবং ১০টি ডিজিটাল ভিলেজ স্থাপনের কার্যক্রম চলছে। ৯২টি হাইটেক পার্ক, সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কের নির্মাণ করা হচ্ছে। সারা দেশে ৬ হাজার ৬৮৬টি ডিজিটাল সেন্টার এবং ১৩ হাজারের বেশি শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশে রূপান্তর করেছেন। সামনের স্মার্ট বাংলাদেশও শেখ হাসিনার সরকার করার লক্ষ্যে কাজ করছেন। ২০০৮ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের বলেছিলেন ডিজিটাল বাংলাদেশ দেবেন। আজ বাংলাদেশ ডিজিটাল বাংলাদেশ হয়েছে। তিনি যে স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলছেন, সেটির জন্যও তিনি নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
২০২১ সালে স্বাধীনতার ৫০ বছরে বাংলাদেশ ‘ডিজিটাল বাংলাদেশে’ পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ, যার যাত্রা হয়েছিল ২০০৮ সালে। ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের জন্য সবার জন্য কানেক্টিভিটি, দক্ষ মানব সম্পদ উন্নয়ন, ই-গভর্নমেন্ট এবং আইসিটি ইন্ডাস্ট্রি প্রমোশন- এই চারটি সুনির্দিষ্ট প্রধান স্তম্ভ নির্ধারণ করে ডিজিটাল বাংলাদেশ এগিয়ে চলছে ২০৪২ সালের স্মার্ট বাংলাদেশের অভিযাত্রায়। দেশে বর্তমানে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১৩ কোটির বেশি এবং মোবাইল সংযোগের সংখ্যা ১৮ কোটি ৬০ লাখেরও উপরে।
জনগণের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দিতে বর্তমানে সারা দেশে প্রায় ৮ হাজার ৮০০টি ডিজিটাল সেন্টারে প্রায় ১৬ হাজারের বেশি উদ্যোক্তা কাজ করছেন, যেখানে ৫০ শতাংশ নারী উদ্যোক্তা রয়েছেন। এর ফলে একদিকে নারী-পুরুষের বৈষম্য, অন্যদিকে ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য ও গ্রাম-শহরের বৈষম্য দূর হচ্ছে। দেশে স্টার্টআপ সংস্কৃতির বিকাশে ও স্টার্টআপদের উদ্ভাবনী সুযোগ কাজে লাগানোর পথ সুগম করতে সরকার আগামী পাঁচ বছরে ৫০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করছে। মেধাবী তরুণ উদ্যোক্তাদের সুদ ও জামানতবিহীন ইকুইটি ইনভেস্টমেন্ট এবং ট্রেনিং, ইনকিউবেশন, মেন্টরিং এবং কোচিংসহ নানা সুবিধা দেওয়ার ফলে দশে স্টার্টআপ ইকোসিস্টেম গড়ে উঠেছে। বিকাশ, পাঠাও, চালডাল, শিওর ক্যাশ, সহজ, পেপারফ্লাইসহ ২ হাজার ৫০০ স্টার্টআপ সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। যারা প্রায় আরও ১৫ লাখ কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে। ১০ বছর আগেও এই কালচারের সঙ্গে আমাদের তরুণরা পরিচিত ছিল না। মাত্র ৭ বছরে এই খাতে ৭০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ এসেছে।
পরিশেষে বলতে চাই, আমাদের এ উন্নয়নশীল দেশে রয়েছে এক বিরাট যুব সমাজ- এদের হাতকে দেশ গড়ার কাজের উপযোগী করে তুলতে পারলে, মনে দেশপ্রেম এবং কর্মের প্রতি আগ্রহ বাড়িয়ে উদ্বুদ্ধ করতে পারলে নিঃসন্দেহে বলা যায় আমাদের এ দেশ আর গরিব থাকবে না।আর তরুণরাই বিশ্বব্যাপী পরিবর্তনের নেতৃত্ব দিচ্ছে। তাদের মানবাধিকার ভিত্তিক যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য সেবা এবং তথ্যে প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে হবে। আইনী সংস্কারের পাশাপাশি ব্যাপক সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং অর্থনৈতিক পরিবর্তনে সহায়ক পদ্ধতির বিকাশের মাধ্যমে স্বাস্থ্য, পুষ্টি, শিক্ষায় মেয়ে শিশুর প্রবেশাধিকার সুরক্ষিত এবং উন্নীত করতে হবে। পরিবারের সদস্যদের, বিশেষ করে পিতা-মাতা এবং অন্যান্য আইনগত অভিভাবকদের ভূমিকা, আত্মমূর্তি, আত্মসম্মান এবং মর্যাদা শক্তিশালী করতে এবং মেয়েদের স্বাস্থ্য ও কল্যাণ রক্ষায় উন্নতি ও সমর্থনে অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে। যুব সমাজ মানেই ছেলেমেয়ের সমান অংশীদারত্ব, এটি সর্বজন স্বীকৃত হতে হবে। তাহলেই যুব সমাজের অংশগ্রহণে জাতিগত উন্নয়ন নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।তাই উন্নয়নের মাধ্যমে উন্নত হবেই। আজকের এ মহান দিনে আমাদের সকলের শপথ হোক যুব সমাজকে দেশের- দশের জাতির উন্নয়নে সম্পৃক্ত করা। এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে পারলেই জাতীয় যুব দিবস পালনের সার্থকতা বাস্তবে প্রতিফলিত হবে। যুব দিবসের তাৎপর্য ও গুরুত্ব আরো বৃদ্ধি পাবে।এ দেশের যুবসমাজ প্রগতিশীল ভাবনা আর মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে যে অতীত স্বর্ণালী ইতিহাস তৈরি করেছে তা আজও অব্যাহত থাকবে। পরিবার ও দেশের মুখ উজ্জল করবে-এটাই প্রত্যাশা।
লেখক: সংগঠক, কলামিস্ট ও গবেষক
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh