× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

রক্তাক্ত আগস্টে বঙ্গবন্ধুকে হারানোর বেদনায় কাঁদো বাঙালি কাঁদো

হীরেন পণ্ডিত

৩১ আগস্ট ২০২৩, ১৫:৫৯ পিএম । আপডেটঃ ৩১ আগস্ট ২০২৩, ২০:১৭ পিএম

বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতিকে উপহার দিয়েছেন, রক্তে রঞ্জিত পতাকা, যেখানে লেখা আছে বঙ্গবন্ধুর নাম। এক সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন নিয়ে,  বঙ্গবন্ধু ফিরে এলেন নয় মাস পর খুব ক্লান্ত শরীরে, তবু এগিয়ে গিয়েছেন, নতুন স্বপ্ন নিয়ে। বঙ্গবন্ধুর অনেক স্বপ্ন ছিলো, সেই স্বপ্নের গান শেষ হবার আগেই, বঙ্গবন্ধুর রক্তের স্রোতে লাল হয় বাংলা,  কেঁদে উঠে এদেশের মানুষ, থেমে যায় পাখির কলতান, বাঙালি জাতি আজো ভোলেনি বঙ্গবন্ধুকে, ভুলবেনা কোনদিন। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নের স্বপ্ন দেখে এখন এদেশের দামাল ছেলেরা, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাস্তবায়নে রক্ত শপথ করেছে তারা সবাই। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাকে গড়ে তোলার এক দুর্নিবার আকাঙ্ক্ষায়।

দূর থেকে, দাঁড়িয়ে দেখে যান বঙ্গবন্ধু, আপনার বাংলায় প্রতিদিন এখনো ভোরের পাখিরা এসে খুঁজে আপনাকে, বাগানের ফুলেরা আপনাকে খুঁজে গাছের শাখা-প্রশাখায়, নদীগুলো আপনাকে খুঁজে ফেরে প্রতিটি ঢেউয়ে, বঙ্গবন্ধু মিশে আছেন এদেশের রক্ত পতাকায়। বাংলার সব পথ মিশেছে গেছে আজ বঙ্গবন্ধুর টুঙ্গিপাড়ায়। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলা আজ ভরে উঠছে সোনায় কে বলে বঙ্গবন্ধু নেই, বঙ্গবন্ধু আছেন এই বাংলায়, শোনাতে স্বাধীনতার গান আমরা আছি তাঁর অপেক্ষায়।

শোকগাঁথা রক্তাক্ত আগস্ট। ১৯৭৫ সালের এ মাসেই বাঙালি হারিয়েছে তাঁর হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ সন্তান বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের অধিকাংশ সদস্যকে। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা চালিয়ে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল জাতির পিতার কন্যা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। ভাগ্যক্রমে সেদিন তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও এই ঘটনায় সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমানের সহধর্মিনী ও আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত এবং পাঁচ শতাধিক নেতা-কর্মী আহত হন।

পঁচাত্তরের পনেরই আগস্ট কালরাতে ঘাতকরা শুধু বঙ্গবন্ধুকেই হত্যা করেনি, তাদের হাতে একে একে প্রাণ হারিয়েছেন বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিনী বঙ্গমাতা বেগম শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, বঙ্গবন্ধুর তিন ছেলে শেখ কামাল, শেখ জামাল, ও শিশু শেখ রাসেলসহ পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজি জামাল। পৃথিবীর এই ঘৃণ্যতম হত্যাকাণ্ড থেকে বাঁচতে পারেননি বঙ্গবন্ধুর সহোদর শেখ নাসের, সাবেক কৃষিমন্ত্রী ভগ্নিপতি আব্দুর রব সেরনিয়াবাত, ভাগ্নে যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা শেখ ফজলুল হক মনি, তার সহধর্মিনী বেগম আরজু মনি ও কর্নেল জামিলসহ পরিবারের ১৬ জন সদস্য ও আত্মীয়-স্বজন।

সেনাবাহিনীর বিপদগামী কিছুসংখ্যক সদস্য সপরিবারে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর গোটা বিশ্বে নেমে আসে তীব্র ক্ষোভ, নিন্দা ও শোকের ছায়া। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর নোবেল জয়ী পশ্চিম জার্মানীর নেতা উইলি ব্রানডিট বলেন, মুজিবকে হত্যার পর বাঙালিদের আর বিশ্বাস করা যায় না। যে বাঙালি শেখ মুজিবকে হত্যা করতে পারে তারা  যেকোন জঘন্য কাজ করতে পারে।

ভারত বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক ও বিশিষ্ট সাহিত্যিক নীরদ সি. চৌধুরী বাঙালিদের ‘বিশ্বাসঘাতক’ হিসেবে বর্ণনা করে বলেন, বাঙালি জাতির স্বপদ্রষ্টা শেখ মুজিবকে হত্যার মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতি বিশ্বের মানুষের কাছে নিজেদের আত্মঘাতী চরিত্রই তুলে ধরেছে। ‘দ্য টাইমস অব লন্ডন’ এর ১৯৭৫ সালের ১৬ আগস্ট সংখ্যায় উল্লেখ করা হয় ‘সবকিছু সত্ত্বেও বঙ্গবন্ধুকে সবসময় স্মরণ করা হবে। কারণ তাঁকে ছাড়া বাংলাদেশের অস্তিত্ব অকল্পনীয়।’

একই দিন লন্ডন থেকে প্রকাশিত ‘ডেইলি টেলিগ্রাফ’ পত্রিকায় বলা হয়, ‘বাংলাদেশের লাখ লাখ লোক শেখ মুজিবের জঘন্য হত্যাকাণ্ডকে অপূরণীয় ক্ষতি হিসেবে বিবেচনা করবে।’

বঙ্গবন্ধুর খুনীদের বিচারের রায় কার্যকর করে জাতি কিছুটা হলেও কলঙ্কমুক্ত হয়েছে। একইভাবে বাঙালির আত্মঘাতী চরিত্রের অপবাদেরও অবসান ঘটেছে। টেলিগ্রাফ পত্রিকার মন্তব্য করে, পত্রিকাটি সেদিন সুদূর প্রসারী মন্তব্য করেছিল। দেশের মানুষ এখন অনুধাবন করতে পারছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে নস্যাৎ করে দেশে পাকিস্তানি ভাবধারা ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যেই স্বাধীনতার বিরোধীতাকারী এবং দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্রকারীরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছিল।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা নিছক একটি হত্যাকাণ্ড ছিলো না, ১৯৭৫-এর ১৫ আগষ্ট এই হত্যার মাধ্যমে দীর্ঘ সংগ্রাম ও রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের উল্টো যাত্রার সূচনা হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধেও চেতনা,গণতন্ত্র ও সংবিধানকে ভূলুণ্ঠিত করে দেশের বেসামরিক সরকারকে উৎখাত করে অবৈধ সামরিক শক্তি ক্ষমতা দখল করে নেয় এবং এর পর থেকে অবৈধ ও অনাচারি শাসনের ইতিহাস রচিত হতে থাকে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কেবল শেখ মুজিবের হত্যাকাণ্ডই ঘটেনি, তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারেরই ক্ষমতাচ্যুতি হয়নি, ওই ঘটনার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের জনগণের সার্বভৌমত্ব কেড়ে নেয়া হয়েছিল। এর মধ্য দিয়ে জনগণের অধিকার, সরকার পরিবর্তনে তাদের ইচ্ছে-শক্তি ও রায়কে অস্বীকার করা হয়েছিল। কার্যত, ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট বাংলাদেশে গণতন্ত্রকেই নিধন করা হয়েছে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন সত্ত্বেও ক্ষমতা হস্তান্তর করতে টালবাহানা করায় ঢাকার তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ এক জনসভায় শেখ মুজিব স্বাধীনতার ডাক দিলেন এবং জনগণকে সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত হওয়ার আহ্বান জানান। বাঙালি হাজার বছর ধরে এ ঘোষণার অপেক্ষায় ছিল। বাঙালি জাতির জীবনে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ সর্বোচ্চ চূড়া স্পর্শ করে ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ। বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ঘোষণা করেন- ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ এজন্যই শেখ মুজিব হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি। কারণ তিনি বাঙালির হাজার বছরের স্বপ্নের এবং অন্তরের ভেতরে কাজ করা স্বাধীনতার আকাক্সক্ষার প্রকাশ ঘটিয়েছিলেন সেদিন। ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১- এ সময়টুকুতে অনেক নেতা আমরা পেয়েছি এবং তাদের উল্লেখযোগ্য অবদানও আছে। কিন্তু সবকিছু ছাড়িয়ে জনগণের মুখপাত্র হয়ে ওঠা, জনগণের ভাবনা, চেতনা, লক্ষ্য, স্বপ্ন সবকিছু ধারণ করতে পেরেছিলেন একজনই; তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

স্বাধীনতা যুদ্ধে চূড়ান্ত বিজয়ের পর পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে ১৯৭২-এর ১০ জানুয়ারি স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরে আসেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। হাত দেন দেশের শাসনতন্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসা, অর্থনীতি পুনর্গঠনের কাজে। স্বাধীনতার পর দেশের অর্থনীতি ও রাজনীতি নিয়ে পরাজিত শক্তি, দেশি ও বিদেশি চক্রান্তকারীরা নানা রকমের চক্রান্ত শুরু করে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরুর আগে পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু ঢাকার ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের যে বাড়িটি থেকে তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন, স্বাধীন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি থাকাকালীন ১৯৭৫-সালে ১৫ আগস্টের রাতে সেই বাড়িতেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। ১৫ আগস্ট শুধু বাংলাদেশের ইতিহাসে বড় দুর্যোগ নয়, এটি বিশ্বের ইতিহাসে একটি কলঙ্কজনক অধ্যায়। স্বাধীনতার মহান স্থপতিকে দেশ স্বাধীন হওয়ার মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় বঙ্গবন্ধুকে ও তার স্ত্রী-সন্তানদের হত্যা করা হয়েছিল, যার কোনো তুলনা বিশ্বের ইতিহাসে নেই। সপরিবারে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর গোটা বিশ্বে নেমে আসে তীব্র শোকের ছায়া এবং ছড়িয়ে পড়ে ঘৃণার বিষবাষ্প। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর নোবেল জয়ী পশ্চিম জার্মানির নেতা উইলি ব্রানডিট বলেন, মুজিবকে হত্যার পর বাঙালিদের আর বিশ্বাস করা যায় না। যে বাঙালি শেখ মুজিবকে হত্যা করতে পারে, তারা যে কোনো জঘন্য কাজ করতে পারে।

পচাঁত্তরের পনেরই আগস্ট অভ্যুত্থান সংগঠিত করে শেখ মুজিব এবং তার সহযোগীদের হত্যা করে এবং আওয়ামী লীগ সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে, নিজেদের ইচ্ছে মাফিক বেয়নেটের ডগায় রাষ্ট্রপতি বানিয়ে, মন্ত্রীসভা গঠন করে, সরকার গঠন করে সম্পূর্ণভাবে সংবিধান-বিযুক্ত করে সুপার কনস্টিউশানাল কর্তৃত্ব দিয়ে সমগ্র দেশকে সামরিক আইনের আওতায় আনা হয়েছিল। ১৫ আগস্টের সামরিক অভ্যুত্থান মুজিব হত্যা ও ধারাবাহিকতায় ১৫ বছর ধরে এ দেশে যথাক্রমে জেনারেল জিয়া এবং এরশাদের সামরিক স্বৈরতন্ত্র চলেছে। ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্টের অভ্যুত্থানকে অবৈধ বলে প্রতিরোধ করা হলে এরপর একের পর এক দুই ডজনেরও অধিক অভ্যুত্থান প্রক্রিয়া ঘটতো না। একের পর এক এত হত্যাকাণ্ড হতো না। ১৫ বছর দেশ সামরিক শাসনের কব্জায় থাকতো না।

বঙ্গবন্ধু হত্যার মাত্র কয়েকদিন পর ২৮ আগস্ট দি গার্ডিয়ান লিখেছিল পনেরই আগস্টের ঘটনার ভেতর দিয়ে যেন বাংলাদেশের জনগণ আইয়ুবের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ধর্মীয় প্রচারণা এবং সামরিক শাসনের কালে প্রত্যাবর্তন করেছে। পঁচাত্তরের মর্মান্তিক ঘটনার কয়েক বছর পর ১৯৮২ সালের ৫ এপ্রিল টাইম ম্যাগাজিনেও বলা হয়, ১৫ আগস্ট অভ্যুত্থান ও শেখ মুজিবের হত্যার পর গণতান্ত্রিক আমলের অবসান হয়। এদিকে, পনেরই আগস্টের অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে যে সরকার গঠিত হয়েছিল তা যে সাংবিধানিক ভাবে বৈধ ছিল না খোদ সরকার প্রধান হিসাবে খন্দকার মোশতাক আহমদও তার প্রথম ভাষণে উল্লেখ করেছিলেন।

১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর প্রেসিডেন্ট হিসাবে অধিষ্ঠিত হন খন্দকার মোশতাক আহমদ। সামরিক আইনের জবর দখলকারী সরকার প্রধান ও প্রেসিডেন্ট হিসাবে জাতির উদ্দেশ্যে রেডিও-টেলিভিশনে তিনি এদিন এক ভাষন দেন। ১৯৭৫ সালের ১৬ আগস্ট দৈনিক ইত্তেফাকে এ সংক্রান্ত সংবাদ ছাপা হয়। ভাষণে মোশতাক এক ঐতিহাসিক প্রয়োজনে এবং বাংলাদেশের সাড়ে ৭ কোটি মানুষের সঠিক ও সত্যিকারের আকাক্সক্ষাকে বাস্তবে রূপদানের পূতপবিত্র কর্তব্য সামগ্রিক ও সমষ্টিগতভাবে সম্পাদনের জন্য করুণাময়ের দোয়ার ওপর ভরসা করে রাষ্ট্রপতি হিসেবে সরকারের দায়িত্ব তার ওপর অর্পিত হয়েছে বলে উল্লেখ করেন। তবে, তিনি বলেন, দেশের শাসন ব্যবস্থার পরিবর্তন সর্ব মহলের কাম্য হওয়া সত্ত্বেও বিধান অনুযায়ী তা সম্ভব না হওয়ায় সরকার পরিবর্তনের জন্য সামরিক বাহিনীকে এগিয়ে আসতে হয়েছে ।

মোশতাকের এই ভাষণে অবশ্য আরো একটি দাবি করা হয়েছে, সেনাবাহিনীও এই পরিবর্তনের জন্য কাজ করেছে এবং তার সরকারের প্রতি অকুন্ঠ অনুগত্য ও আস্থা প্রকাশ করেছেন। তবে, সেনাবাহিনীর পুরো অংশ এই ষড়যন্ত্র এবং অভ্যুত্থানের সাথে জড়িত ছিল কিনা তা কিন্তু এখনো উদঘাটিত হয়নি। আর বিধান অনুযায়ী পরিবর্তন সম্ভব না হওয়ার কথা বলে নিজেই নিজের সরকারকে অবৈধতার সার্টিফিকেট দিয়েছিলেন বলে অনেকে মনে করেন। মোশতাক রাষ্ট্রপতির পদ থেকে সরে যেতে বাধ্য হন ৬ নভেম্বর। রাষ্ট্রপতি হিসাবে ক্ষমতায় বসেন বিচারপতি আবু সাদত সায়েম। তবে, মোশতাক অথবা সায়েমের অধীনে  যে সরকার ছিল, তা আদৌ বৈধ ছিল না। এরা দু’জনেই ক্ষমতায় বসেছিলেন সম্পূর্ণ বেআইনি পথে। এরই ধারাবাহিকতায় পরবর্তী সময়ে জিয়াউর রহমান এবং এরশাদ ক্ষমতা দখল করেন। হাইকোর্ট ২০১০ সালে সংবিধানের সপ্তম সংশোধনী বাতিল করে খন্দকার মোশতাক আহমেদ, আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম, জিয়াউর রহমান এবং হুসাইন মুহাম্মদ এরশাদকে অবৈধ ক্ষমতা দখলকারী হিসাবে রায় দেয়। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্যে দিয়ে দেশে হত্যা, ক্যু ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতি শুরু হয়। মুক্তিযুদ্ধেও চেতনাকে ভুলন্ঠিত করার জন্য ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর থেকেই নানা ষড়যন্ত্র শুরু হয়। অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশে পাকিস্তানী ভাবধারায় মৌলবাদের রাজনীতির পুনরুত্থান ঘটে।

রাজনৈতিক-সামাজিক কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়েই বঙ্গবন্ধু ইতিহাসের মহানায়কের সর্বোচ্চ অবস্থানে পৌঁছতে পেরেছিলেন। তাঁর চিন্তা-ভাবনা, লক্ষ্য-উদ্দেশ্য, আদর্শবোধ-জীবন দর্শন ইত্যাদি আত্মপরিচয়ের মৌলিক উপাদানগুলো ধীরে ধীরে বিকশিত হয়েছে এবং এক অবস্থান থেকে উন্নতর অবস্থানে সেসবের উত্তরণ ঘটেছে। বিকাশ ও বিবর্তনের এই গতি কোনোদিন থেমে থাকেনি, অব্যাহত থেকেছে তার জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত। রাজনীতির দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে তাকে অনেক প্রতিকূল রাস্তা অতিক্রম করতে হয়েছে, বাস্তবতা বিবেচনায় কখনো কখনো বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করতে হয়েছে; কিন্তু তার সার্বিক বিবর্তনের গতি ছিল সামনের দিকে, প্রগতি অভিমুখে আর কর্মকাণ্ডে ছিল সাধারণ মানুষের চিন্তা-চেতনার প্রতিফলন।

দীর্ঘদিন বঙ্গবন্ধুকে ছাড়া বাংলাদেশের বাস্তব কোনো অস্তিত্ব ছিল না বলেই মনে হতো। তবে এ কথা বলা যায়, বাঙালি জাতি যদি হয় একটি চেতনার নাম, একটি স্বপ্নের নাম, ইতিহাস সৃষ্টির নাম, আকাঙ্ক্ষার নাম, সংগ্রামের নাম এবং সফলতার নাম- তবে তার রূপকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনিই ইতিহাসের মহানায়ক। বাঙালির হৃদয়ে বঙ্গবন্ধু চিরকাল থাকবেন অমর হয়ে।

হীরেন পণ্ডিত: প্রাবন্ধিক ও গবেষক


Sangbad Sarabela

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । 01894-944220 । [email protected], বিজ্ঞাপন: 01894-944204

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.