দেশে উৎপাদনমুখী শিল্প খাতে শ্রমিক শোষণ বা তাঁদের অধিকারের বিষয়টি ঘুরেফিরেই আসে। মালিকপক্ষের সঙ্গে শ্রমিকদের নানা বিরোধ তৈরি হয়। সেখানে অনেককে বঞ্চনার শিকার হতে দেখি আমরা।
শ্রমিকদের অধিকারের বিষয়টি নিশ্চিত করতে সরকার শ্রম আদালত প্রতিষ্ঠা করলেও সামর্থ্যহীনতার কারণে অনেকের জন্য আইনি কার্যক্রম চালিয়ে নেওয়াটা দুরূহ ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। যার কারণে শ্রম আদালতে হাজার হাজার মামলা নিষ্পত্তিহীন হিসেবে পড়ে থাকে।
বিষয়টিকে আমলে নিয়ে সরকার ঢাকা ও চট্টগ্রামে শ্রমিক আইন সহায়তা সেল চালু করে। চট্টগ্রামের সেলটি প্রতিষ্ঠার ছয় বছরে দুই শতাধিক শ্রমিককে বিনা খরচে আইনি সেবা দিয়েছে। নিপীড়িত ও বঞ্চিত অনেক শ্রমিক সেখান থেকে আইনি সেবা পেয়ে তাঁদের অধিকার ফিরে পেয়েছেন। বিষয়টি সত্যিই আশাব্যঞ্জক।
জাতীয় একটি দৈনিকের প্রতিবেদন জানাচ্ছে, নগরের পাঁচলাইশ মোড়ে চট্টগ্রাম শ্রম আদালত ভবনের নিচতলায় শ্রমিক আইন সহায়তা সেল অবস্থিত। এ সেলের সহায়তায় এখন পর্যন্ত প্রায় ২২০ জন শ্রমিক তাঁদের পাওনা টাকা বুঝে পেয়েছেন। অর্থের পরিমাণে সেটি ২ কোটি ৩১ লাখ ৩১ হাজার টাকা।
সেলের সহায়তায় মোট মামলা হয় ৬৮০টি। মামলা না করে বাইরে আপস–মীমাংসার মাধ্যমেও সমস্যা সমাধানে ভূমিকা রাখে সেলটি। আপসের মাধ্যমে এখন পর্যন্ত নিষ্পত্তি হয়েছে ৮২৫টি আবেদন। চাকরিতে পুনর্বহাল হন ৮৪ জন শ্রমিক।
সেলের আইন কর্মকর্তা আবুল হাসনাত বলেন, কোনও শ্রমিক তাঁর পাওনা আদায়ে আইনি সহায়তা নিতে সেলে এলে প্রথমে অনুযোগপত্রের মাধ্যমে কারখানা বা প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষকে পাওনা দিয়ে দিতে বলা হয়।
নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পাওনা না দিলে শ্রম আদালতে মামলা করা হয়। এ জন্য নয়জন আইনজীবীর প্যানেল আছে। তাঁরাই শ্রমিকদের পক্ষে বিনা খরচে মামলা পরিচালনা করেন। প্রয়োজনে শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালেও আইনি সহায়তা দেওয়া হয়।
চট্টগ্রামের দুটি শ্রম আদালতে এখন আড়াই হাজার মামলা বিচারাধীন। অর্ধযুগেও নিষ্পত্তি হয়নি, এমন মামলা এক হাজারের বেশি। তবে গত বছরের মে থেকে চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত ৫৭০টি মামলা নিষ্পত্তি হয়। প্রতিদিন ৩০ থেকে ৪০ জন আইনি সহায়তা নিতে এই সেলে আসেন। শ্রম আদালতে মামলা নিষ্পত্তিতে নিঃসন্দেহে বড় ভূমিকা রাখছে সেলটি।
এতে অধিকারবঞ্চিত শ্রমিকেরা আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিজেদের পাওনা বা চাকরি ফিরে পেতে আরও বেশি উৎসাহী হচ্ছেন। শ্রমিক আইন সহায়তা সেলের কার্যক্রম এভাবে শ্রমিকদের পাশে থাকুক, আরও বেশি বেগবান হোক, সেটিই আমরা চাই। সেলটির সঙ্গে সম্পৃক্ত সবার প্রতি আমাদের অভিবাদন রইল।