বাংলা কবিতা, গান, উপন্যাসে সর্বদাই উপমা হিসেবে নানা ভঙ্গিমায় কৃষ্ণচূড়া এক মূর্তমান প্রতীক হয়ে থাকে। তাই জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম লিখেছিলেন, ‘‘কৃষ্ণচূড়ার রাঙা মঞ্জুরি কর্ণে / আমি ভুবন ভোলাতে আসি গন্ধে ও বর্ণে’’। তার এই দুটো লাইনই বলে দেয় কৃষ্ণচূড়া প্রকৃতিকে কতটা আপন লালিমায় সজ্জিত করে এক অপরূপ সৌন্দর্যের জন্ম দেয়।
অগ্নিশিখার মতো প্রজ্জ্বলিত এই বৃক্ষটি তার নিজ লালিমায় প্রকৃতিকে অভিভূত করে তুলে সকলের কাছে। কোনো রকম দ্বিধা নেই সেই লেলিহান শিখায়। সেইভাবে সুগন্ধি ফুল একে হয়তো বলা যায় না। কিন্তু বৃষ্টি পরবর্তী পিচঢালা পথে ঝড়ে পড়া রাশি রাশি ফুল এক অদ্ভুত মাদকতা তৈরি করে প্রকৃতিতে। আর সেই মাদকতায় মাতাল হয় প্রকৃতিপ্রেমীরা।
কৃষ্ণচূড়ার চোখ ধাঁধানো এক অপরূপ সৌন্দর্যে মেতেছে দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের সবথেকে বড় বিদ্যাপীঠ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি)। রক্ত রাঙা ফুল কৃষ্ণচূড়ার নয়নাভিরাম সৌন্দর্যে সেজেছে ১৭৫ একরের প্রতিটি প্রান্তর। এ যেনো নীল আকাশের নিচে চিত্রশিল্পীর তুলির ছোঁয়ায় রঙিন ক্যানভাস। আর এই ক্যানভাসেই যেনো স্বপ্ন বুনেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজারো শিক্ষার্থী। কৃষ্ণচূড়ার লালিমায় মুগ্ধ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ সকল শ্রেনির মানুষ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান মিলনায়তন, রবীন্দ্র-নজরুল কলা ভবন, প্রশাসনিক ভবন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল, বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল, খালেদা জিয়া হল এবং শহীদ মিনার ও স্মৃতি সৌধের প্রাঙ্গণে অদ্ভুত মাদকতা ছাড়াচ্ছে এই রক্ত রাঙা কৃষ্ণচূড়া। গাছের নিচে পড়ে থাকা ফুল যেনো প্রাকৃতিক লাল গালিচার জন্ম দিয়েছে। আর এই গালিচায় আথিতেয়তা পাচ্ছে ক্যাম্পাস জুড়ে ঘুরে বেড়ানো প্রকৃতি প্রেমি প্রতিটা ক্যাম্পাস পিপীলিকা।
শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থীদেরই নয়, এই অদ্ভুত মাদকতায় আসক্ত বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত ভ্রমণপিপাসুরাও। দুপুর গড়িয়ে বিকেল নামতেই তাদের আনাগোনা বাড়তে থাকে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন প্রান্তরে। কেউ কৃষ্ণচূড়া হাতে নিয়ে ফটো ফ্রেমে নিজেকে বন্দি করতে ব্যস্ত আবার কেউ প্রাকৃতিক এই সৌন্দর্যকে স্মৃতি হিসেবে ধারণ করে রাখতে ভিডিওগ্রাফিতে ব্যস্ত। তরুণ তরুণীদের এক অন্যরকম মিলনমেলায় পরিণত হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটা প্রান্তর।
কৃষ্ণচূড়া নয় শুধু এই রৌদ্রজ্বল আবহাওয়ায় প্রতিটা শিক্ষার্থীদের অভ্যর্থনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক পেরিয়ে ডায়নায় আসলেই দেখা মিলবে সোনালো ফুলের। থোকায় থোকায় ঝুলতে থাকা সেই সোনালো যেনো অলঙ্কৃত করে রেখেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডায়না চত্বর। কেউ কেউ বলে থাকে এ যেনো ক্যাম্পাসে হুমায়ুন আহমেদের হিমুর আগমন। এছড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থানে জারুল, রঙ্গন সহ নামা ফুল সুভাষ ছড়াচ্ছে প্রকৃতিতে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী শামীম হোসেন বলেন, এই তপ্ত রুক্ষ আবহাওয়ায় যখন ক্যাম্পাসে প্রবেশ করি আর এই সোনালো ফুলের দেখা মিলে এ যেনো এক সোনালী অভ্যর্থনা দিয়ে আমাদের বরণ করে নেয়। এছাড়া এই আবহাওয়ার মধ্যেও যেন এক নয়নাভিরাম বার্তা দিয়ে বেড়ায় কৃষ্ণচূড়া। যেনো লাল হলুদের এক মিশ্রণে রাঙিয়ে রেখেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটা আঙিনা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী মাহবুবা বলেন, ফুল পছন্দ নয় এমন মানুষ খুব কমই পাওয়া যায়। যখনই রাস্তাঘাটে চলাচলের জন্য বের হই যখনই ফুল চোখে পড়ে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকি। এই রৌদ্রজ্বল আবহাওয়ার মধ্যে ডায়নার সোনালো যেনো ক্যাম্পাসে হুমায়ুন আহমেদ এর হিমুর আগমন জানান দেয়। এছড়া ক্যাম্পাস জুড়ে ফুটে থাকা কৃষ্ণচূড়া যেনো ক্লান্তিকর দিনের এক পসরা তৃপ্ততার জন্ম দেয় সবার মনে। প্রেমময় এই ঋতুতে কৃষ্ণচূড়া ফুল যেন অপরূপ এক সৌন্দর্যের প্রতিচ্ছবি।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh