ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন বন্ধু পেয়েছেন আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়ে ফুল ফান্ডেড স্কলারশিপ।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে এমনি এক চমকপ্রদ ঘটনার জন্ম দিয়েছেন ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের তিন মেধাবী শিক্ষার্থী। তবে শিক্ষার্থী বিশেষণ একপাশে রেখে তিন বন্ধু বলাটাই শ্রেয় মনে হচ্ছে। তারা হলেন মামুনুর রশিদ, সুমন আলী ও নাঈম হোসেন।
জানা যায়, স্নাতক (সম্মান) শ্রেনিতে তিনজনের রেজাল্ট একই। প্রথম দিক থেকেই তাদের গবেষণা ও উদ্ভাবনীর দিকে আগ্রহ ছিলো। পরবর্তীতে অধ্যাপক ড. বখতিয়ার হাসান স্যারের সহায়তায় ‘Hasan's research lab’ নামে একটি ল্যাব প্রতিষ্টা করে একসাথে এগুতে থাকেন। করোনা মহামারির সময়ও থেমে থাকে নি তাদের কার্যক্রম। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিকটস্থ এক বাসায় রুম ভাড়া নিয়ে কাজ চালিয়ে যান তারা। সেখানে তারা রির্সাচের মৌলিক কাজগুলো শিখে একইসাথে।
সফলতার পিছনের রহস্য বলতে গিয়ে তারা বলেন, আমরা সপ্তাহে ২-৩ বার জুমে মিটিং করতাম। ২০২১ সালের জুনের দিকে আমাদের গবেষণাপত্র প্রথম পাবলিশ হয়। তখন আমরা আরও বেশি মোটিভেটেট হয়েছিলাম। একপ্রকার প্রচন্ড আনন্দ নিয়ে কাজ করতাম দিনরাত ভর। স্যার আমাদের স্বপ্ন দেখিয়েছেন যে তোমরা বিদেশে গিয়ে উচ্চ শিক্ষা নিবা, তারপর বিশ্বের নামি-দামি গবেষকের সাথে কাজ করবা। আমাদের নাম উজ্জ্বল করবা। মাঝে মাঝে ভেঙে পড়তাম, আবার মোটিভেট হইতাম স্যারের কথায়। স্যারই আমাদের স্বপ্নদ্রষ্টা ছিলেন।
তারা বলেন, আমাদের এই সফলতার পিছনে আমাদের সুপারভাইজার অধ্যাপক ড. বখতিয়ার হাসান স্যারের অবদান সবচেয়ে বেশি। বখতিয়ার হাসান স্যার আমাদেরকে হাতেকলমে গবেষণা শিখিয়েছেন, আমি হলফ করে বলতে পারি, বাংলাদেশে এরকম সুপারভাইজার হাতেগোনা কিছু পাওয়া যাবে।বিশেষত ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগ থেকে। উনি সবসময় আমাদেরকে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছেন। দেশি এবং আন্তর্জাতিক মানের গবেষকদের সাথে গবেষণা করার সুযোগ তৈরি করে দিয়েছেন।
অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে সুমন আলী বলেন, ‘আমার বিভাগের এবং আমার পরিবারের জন্য এই সাফল্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। সবচেয়ে মজার বিষয়, আমরা যখন ড. বখতিয়ার স্যারের পাবলিকেশন দেখতাম, তখন তিনজন আলোচনা করতাম আমারাও একদিন স্যারের সাথে পাবলিকেশন করবো।’
নাঈম হোসেন বলেন, ‘মানুষের ভিন্নভিন্ন লক্ষ থাকে। বিসিএস অবশ্যই ভালো জব বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে। তবে, আমি কখনো সাধারণ জ্ঞান বা অনেক মুখস্থ পড়ায় আগ্রহ পেতাম না। অন্যদের মত আমার পরিবার থেকেও বিসিএসকে গুরুত্ব দিতেন। কিন্তু তারপরও আমার বড় ভাই আমাকে সাপোর্ট জুগিয়েছেন। আমার সফলতা পিছনে সবচেয়ে বেশি অবদান বলবো আমার বড় ভাইয়ের।একজন ভাইয়ের কি করা উচিত তার সর্বোচ্চটা সে করেছে। কোন কিছুর কমতি সে কখনো আমার জন্য রাখেনি। সবসময় আমাকে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন।
মামুনুর রশিদ বলেন, আমার জন্য এই সাকসেসটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কারন বাংলাদেশ থেকে খুব কম শিক্ষার্থীই আছেন, যারা সরাসরি আমেরিকার ফাইন্যান্সের পিএইচডি তে ইনরোল করেন। ফাইন্যান্সের পিএইচডি প্রোগ্রামগুলো খুবই প্রতিযোগিতাপূর্ন হয়, সেখানে একই বিশ্ববিদ্যালয়, একই বিভাগ এবং তিন বন্ধু একসাথে পিএইচডিতে সুযোগ পাওয়া অনেক গর্বের। সবচেয়ে ভালো লাগার বিষয় হলো তিন বন্ধু একসাথে পিএইচডি শুরু করা, যেখানে আমরা তিনজনই একসাথে অনার্স চতুর্থবর্ষ থেকেই গবেষণা শুরু করি। এখানে আমাদের তিনজনের সুপারভাইজার ড. বখতিয়ার হাসান স্যারের অবদান বলে শেষ করা যাবে না। উনি না থাকলে হয়তো আমরা এই স্বপ্ন দেখার সাহসই পেতাম না। আমার মায়ের দোয়া সবসময় আমার সাথে ছিলো। আমার মা সবসময় বলতেন তুমি পারবা বাবা, এই কথাটুকু আমার কাছে অন্য লেভেলের অনুপ্রেরনা ছিল। যাইহোক, মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ্ তাআলার প্রতি অশেষ শুকরিয়া যে আমরা এই চ্যালেন্জিং জার্নিতে সফল হয়েছি। তবে এটাই শেষ না। যেতে হবে বহুদুর।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. বখতিয়ার হাসান বলেন, 'বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ব্যবসায় শিক্ষার গবেষণা ওভাবে গড়ে ওঠেনি। আমি তাদের পরার্মশ ও গাইডলাইন দিয়েছি । তারা তিনজনই ছিল অত্যন্ত মেধাবী এবং পরিশ্রমী। তবে এটা খুবই ব্যতিক্রমী যে তিন বন্ধু একই সাথে ফুল ফান্ডেড স্কলারশিপ পেয়েছে। একজন শিক্ষক হিসেবে এর চেয়ে আনন্দ ও গৌরবের আর কিছু হয়না। এটাই আমার সবচেয়ে বড় সফলতা
উল্লেখ্য, তিন বন্ধুর মধ্যে মামুনুর রশিদ ইউনিভার্সিটি অফ টেক্সাসে ফিন্যান্স নিয়ে পিএইচডির জন্য মনোনীত হয়েছেন, নাঈম হোসেন ইউনিভার্সিটি অফ নিউ ওরল্যান্সে ফিন্যান্সিয়াল ইকোনোমিকস এ মনোনীত হয়েছেন এবং সুমন আলী এল পাসো এর ইউনিভার্সিটি অফ টেক্সাসে ফিন্যান্স নিয়ে পিএইচডি করার জন্য মনোনীত হয়েছেন।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh