অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মেয়াদ দুই বছর বা তার কম হওয়া উচিত বলে মনে করেন ৫৩% ভোটার - নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির (এনএসইউ) সাউথ এশিয়ান ইন্সিটিউট অব পলিসি অ্যান্ড গভর্নেন্স (এসআইপিজি) পরিচালিত একটি গবেষণা জরিপে এই তথ্য উঠে এসেছে। আজ জাতীয় প্রেস ক্লাবে অনুষ্ঠিত 'বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছ থেকে নাগরিকদের প্রত্যাশা'-শীর্ষক একটি জাতীয় জরিপের ফলাফল প্রকাশ করে এসআইপিজি।
গত ৯ থেকে ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ দেশের ৮টি বিভাগের ১৭টি জেলায় মোট ১৮৬৯ জনের উপর এই জরিপটি করা হয়। এটি জুলাই গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সরাসরি পরিচালিত প্রথম জাতীয় প্রতিনিধিত্বমূলক জরিপ। উত্তরদাতাদের প্রায় ৫৩ শতাংশ মনে করেন বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ দুই বছর বা তার কম হওয়া উচিত, যেখানে ৪৭ শতাংশ মনে করেন যে এই অন্তর্বর্তী সরকারকে তিন বছর বা তার বেশি ক্ষমতায় থাকতে হবে।
জরিপে আরও উঠে এসেছে:
• রাজনৈতিক দলের সংশ্লিষ্টতা: উত্তরদাতাদের ৪৬ শতাংশ রাজনৈতিক দলগুলির সাথে তাদের সম্পৃক্ততার বিষয়ে অনিশ্চিত, যেখানে ৫৪ শতাংশ মূলধারার রাজনীতিতে তাদের আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
• রাজনৈতিক সংস্কার: উত্তরদাতাদের ৯৬ শতাংশ প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ সর্বোচ্চ দুই বারে সীমিত করাকে সমর্থন করে, এবং ৪৬ শতাংশ বিশ্বাস করে যে উল্লেখযোগ্য সাংবিধানিক পরিবর্তন প্রয়োজন। উপরন্তু, ১৬ শতাংশ সম্পূর্ণ নতুন সংবিধানের পক্ষে তাদের মত জানিয়েছেন।
উত্তরদাতাদের মধ্যে সবচেয়ে বড় অংশ ছিল মধ্যবয়সী (২৮-৫০ বছর), ২২ শতাংশ জেনারেশন জেড (১৮-২৭ বছর), এবং ১৪ শতাংশের বয়স ৫০ বছরের উপরে। এছাড়া জরিপের উত্তরদাতাদের ৫৪ শতাংশ শহরাঞ্চল ও ৪৬ শতাংশ গ্রামীণ অঞ্চলের বাসিন্দা।
জরিপে আরও জানা যায়, নাগরিকরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বর্তমান অবস্থা নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন, বিশেষ করে আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে তাদের বন্যা ব্যবস্থাপনার প্রশংসা করেছেন। বাংলাদেশ পুলিশ, শিক্ষা ব্যবস্থা, রাজনৈতিক ব্যবস্থা এবং নির্বাচনী ব্যবস্থা সংস্কারের উপরও নাগরিকদের আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ পেয়েছে।
সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নির্বাচনী ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ও সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার। তিনি বলেন, “গবেষণায় সরকারের প্রতি যে আস্থা ও প্রত্যাশা প্রত্যাশা উঠে এসেছে তার একটা বিপরীত দিকও আছে। সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা পূরণ এই সরকারের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।”
তিনি আরও বলেন, “আমাদের দেশে সুষ্ঠ নির্বাচন আগেও হয়েছে। তবে সুষ্ঠ নির্বাচনের সুফল পেতে আমাদের রাজনৈতিক কাঠামো ও সংস্কৃতির পরিবর্তন প্রয়োজন। রাষ্ট্রপরিচালনার মূল দায়িত্ব রাজনীতিবিদদের। তাদের আরও গণতান্ত্রিক হতে হবে, আরও দায়িত্বশীল হতে হবে।”
এসআইপিজি’র উপদেষ্টা অধ্যাপক সালাহউদ্দিন এম. আমিনুজ্জামান বলেন, “আমাদের জেনারেশন জি খুবই আশাবাদী একটি প্রজন্ম। তবে তারা রাজনীতিসচেতন এই বিষয়টা এই গবেষণাতে উঠে এসেছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা অবাস্তব নয়। তবে আস্থা যেমন বেশি, সুযোগও তেমনি বেশি। ৩৬% মানুষ চেয়েছেন আমাদের সংবিধানের সংস্কার প্রয়োজন। আমাদের আলোচনা করা উচিত কোন জায়গাগুলোর সংস্কারের প্রয়োজন।”
এনএসইউ’র রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও সমাজবিজ্ঞান বিভাগের (পিএসএস) অধ্যাপক নাভিন মুর্শিদ বলেন, “এই জরিপে নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উঠে এসেছে। পুলিশের প্রতি অনাস্থা গবেষণায় উঠে এসেছে। এই সংকট দূর করা না গেলে তা সরকারের প্রতি অনাস্থায় রুপান্তরিত হতে পারে। এতো বছরের স্বৈরাচারি শাসন মানুষের মধ্যে একটা অভ্যাস তৈরি করে দেয়। আমরা সংস্কারের মাধ্যমে নতুন এক ব্যবস্থা চাই, যেন আর কোন শাসক স্বৈরাচার হয়ে উঠতে না পারে।”
জরিপের তথ্য ও ফলাফল উপস্থাপন করেন এনএসইউ’র এসআইপিজি ও পিএসএসের সহকারী অধ্যাপক ড. আকরাম হোসেন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ইতিহাস ও দর্শন বিভাগের অধ্যাপক ও এসআইপিজি’র সদস্য অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ও এসআইপিজি’র পরিচালক অধ্যাপক এস কে তৌফিক এম হক। অনুষ্ঠানে এসআইপিজি’র অন্যান্য গবেষক ও গবেষণা সহযোগীরা উপস্থিত ছিলেন।