ছবি: সংগৃহীত।
অরক্ষিতভাবে নীলক্ষেতে ছাপা হয়েছে বহুল আলোচিত-সমালোচিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনে (ডাকসু) ব্যবহৃত ব্যালট পেপার। অনুসন্ধান বলছে, এটি সত্য। তবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দাবি, নীলক্ষেতে নয় বরং সর্বোচ্চ গোপনীয়তায় উন্নত মানের ছাপাখানায় তৈরি হয়েছে ব্যালট। ঘটনার পরম্পরা আর সংশ্লিষ্টদের জবানবন্দি বলছে নীলক্ষেতেই দায়সাড়াভাবে ছাপানো হয়েছে ডাকসু নির্বাচনের ব্যালট।
এমনকি ছাপানোর সংখ্যা নিয়েও ছাপাখানা আর সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের তথ্যে রয়েছে ব্যাপক গড়মিল। ডাকসু নির্বাচন কমিশনের বক্তব্যে বলা আছে, নীলক্ষেত গাউসুল আজম মার্কেটে এই ব্যালট ছাপানোর সুযোগ নাই। নির্বাচনের প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন বলেছেন, 'কারণ ওই মেশিনটা ওখানে (গাউসুল আজম মার্কেট) থাকবে না।'
নীলক্ষেত গাউসুল আজম মার্কেটে অনুসন্ধান করেছে নিউজ২৪ টেলিভিশনের অনুসন্ধান টিম।
তাদের থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, জালাল প্রেসে দেখা গেছে, প্রেসটি ব্যালট পেপার ছাপতে পারে। প্রেসটির মালিক মো. জালালের কাছে জানতে চাওয়া হয়, ডাকসু নির্বাচনে যে ব্যালটে ভোট হয়েছে সেটি তার প্রেস থেকে ছাপা কিনা। উত্তরে তিনি বলেন, হ্যাঁ। অনুসন্ধানে কার মাধ্যমে ব্যালট ছাপার কাজ পেয়েছেন সেটিও পাওয়া গেছে।
নথিপত্র দেখার পর মো. জালাল তার নামও প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, 'আমাকে কাজ দিয়েছে তার নাম মো. ফেরদৌস। মোটামুটি তিন দিনেই আমরা কাজটা করেছি। ৭ তারিখ (৭ সেপ্টেম্বর) ব্যালট ডেলিভারির লাস্ট ডেট ছিলো।' তিনি জানান, তার প্রেসের খোলামেলা পরিবেশেই ডাকসুর ব্যালটর পেপার ছাপানো হয়েছে। বন্ধ ছিলো না প্রেসের সাটারও।
তার কাছ থেকে ৪৮ হাজার পিস ব্যালট নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে মো. জালাল। প্রতি কাগজে দুটি ব্যালট থাকায় এর সংখ্যা দাঁড়ায় ৯৬ হাজারে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকাশিত তালিকায়, মোট ভোটারের সংখ্যা ছিলো ৩৯ হাজার ৭৭৫ জন। এর মধ্যে ৯ সেপ্টেম্বরের ভোটে ১৮টি হলের মোট ভাটারের মধ্যে অনানুষ্ঠানিকভাবে ভোট পড়েছে ৭৮.৩৩ শতাংশ।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ৭ নভেম্বর সন্ধ্যায় ব্যালট পেপার নিয়ে কাটিং হয়েছে আরেকটি দোকানে। যার নাম 'মক্কা পেপার কাটিং হাউস'। দোকানটির মালিক ও কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, ফেরদৌস ভাই নামেই একজন কাজ নিয়ে এসেছিলেন এই দোকানে। কাটিংয়ের সময়ও পরিবেশ ছিলো অরক্ষিত।
দোকানের কর্মচারী জানান, কাগজটা সেনসিটিভ ছিল, তাই আমরা রাত পৌনে ১টা থেকে দেড়টার মধ্যে কাটিং করেছি। পরদিন সকাল ৯টার দিকে তারা ব্যালট নিয়ে যায়।
যদিও তিনি দিলেন আরেক তথ্য। তার দেওয়া তথ্য মতে, ওই কাটিং সেন্টারে ওই রাতে কাটা হয়েছে ২২ রিম কাগজ। যাতে ব্যালটের সংখ্যা দাঁড়ায় ৮৮ হাজারের মতো। জালাল প্রেস থেকে বলা হচ্ছে তারা ৯৬ হাজার ব্যালট ছাপিয়েছে। আর মক্কা কাটিং বলছে, তারা ৮৮ হাজার ব্যালট কেটেছে। এখানেই ৮ হাজার ব্যালটের গড়মিল।
ডাকসু নির্বাচনে ব্যালট পেপার ছাপা ও ওএমআর মেশিনে গণনা করার টেন্ডার পাওয়া একটি প্রতিষ্ঠান আঞ্জা করপোরেশন। আদাবর থানার নবোদয় আবাসিক এলাকায় মেলে প্রতিষ্ঠানটির অবস্থান। আঞ্জা করপোরেশনের চেয়ারম্যান জাহিদ হোসেন ফোনে স্বীকার করেন, ব্যালট পেপার ছাপানোর কথা।
তবে জাহিদ হোসেন দাবি করেন, তার নিজের প্রেস থেকে ছাপানো হয়েছে ব্যালট। যেটি কেরানীগঞ্জে অবস্থিত। তবে তথ্য প্রমাণ দিলে তিনি দায় চাপিয়ে দেন কর্মচারীদের ওপর। তিনি বলেন, আমি চায়না ছিলাম। আমার কর্মচারীরাই কাজটা করেছ। জাহিদ হোসেনের দাবি, তারা ছাপিয়েছে এক লাখ ৫৩ হাজার ব্যালট।
অনুসন্ধানে নীলক্ষেতের দুই দোকান দুই রকম হিসাব পাওয়া গেছে। আঞ্জা করপোরেশন বলছে, তারা ছেপেছে এক লাখ ৫৩ হাজার। ঐকিক নিয়মে ধরলে, ডাকসু নির্বাচনে মোট ভোটারের সংখ্যা ছিলো ৩৯ হাজার ৭৭৫। একেকজন ভোটার মোট ছয়টি পাতায় পছন্দের প্রার্থীদেরকে ভোট দিয়েছেন। অর্থাৎ পাতার হিসাবে মোট ব্যালট পেপারের সংখ্যা দাঁড়ায় দুই লাখ ৩৮ হাজার ৬৫০টি।
সব প্রশ্নের উত্তর মেলাতে যাওয়া হয় নির্বাচনের প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ জসীম উদ্দিনের কাছে। তিনি বলেন, এটা হাইলি স্পেশালাইজড একটা প্রসেস। এর এক একটা মেশিনের দাম এ মিনিমাম ৫০ লাখ, ৬০ লাখ, ৭০0 লাখ টাকা। আমরা যখন এটা যখন টেন্ডার করেছি, তখন একমাত্র একটি ব্রান্ড আবেদন করে। অন্য কারো কাছে এই মেশিন ছিল না।
নীলক্ষেতে ব্যালট ছাপানোর তথ্য প্রমাণ আছে জানালে তিনি বলেন, যেহেতু বলছে প্রমাণ আছে তাহলে আমাদের প্রশাসন খতিয়ে দেখবে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh