 
												ছবি: সংগৃহীত।
কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) এক শিক্ষক নারী শিক্ষার্থীর পোশাক নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করে সমালোচনার জন্ম দিয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া অডিওতে তিনি সাজিদের মৃত্যুর প্রসঙ্গেও আপত্তিকর মন্তব্য এবং অন্য একজন শিক্ষার্থীকে হুমকিও দেন। তীব্র প্রতিক্রিয়ার মুখে বুধবার (২৯ অক্টোবর) সকালে সাংবাদিকদের সাথে তিনি মন্তব্যটিকে ‘স্লিপ অব টাং’ উল্লেখ করে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। পরে শিক্ষার্থীরা বেলা ১১ টায় অভিযুক্ত শিক্ষকের বহিষ্কারসহ পাঁচ দফা দাবিতে মানববন্ধন শেষে উপাচার্যের নিকট স্মারকলিপি দেন।
এদিকে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্যের প্রতিবাদে ও তার শাস্তির দাবিতে বিবৃতি দিয়েছে ইবি ছাত্রদল ও ছাত্র ইউনিয়ন।
জানা গেছে, গত মঙ্গলবার রাতে ‘আব্দুলাহ বিন আসাদ’ নামে একটি ফেসবুক আইডি থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আল-কুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. নাছির উদ্দীন মিঝির কণ্ঠসদৃশ ৪ মিনিট ৬ সেকেন্ডের একটি অডিও ক্লিপ পোস্ট করা হয়। অডিওটিতে অধ্যাপক নাছির উদ্দীনকে ক্ষুব্ধ কণ্ঠে শিক্ষার্থীদের ধমক দিতে এবং নানা আপত্তিকর মন্তব্য করতে শোনা যায়।
অডিওতে তাকে বলতে শোনা যায় ‘এই মেয়ের হাতে মাইক দিয়েছে কে? এই মেয়ে কে? ডিপার্টমেন্ট ধ্বংস করতে চাও? আমার আল-কোরআনের কোনো ছাত্রী যদি ঢুকতো, আমার কোনো আপত্তি ছিল না। কোথাকার কোন একটা মৃত পোলা, যাই হইছে হোক, সে তো চলে গেছে। ন্যাং*টা মাইয়া কতগুলো নিয়ে সেখানে দাঁড়ায়! এক মাইয়া নিয়ে গেছে ওখানে, আরেক হাইওয়ান। ও হাইওয়ান নিয়ে গেছে ওখানে। ওটা তো ইনসান না, হাইওয়ান! মরে গেছি আমি ওই এলাকার লোকদের কাছে। আমি আল-কোরআনের টিচার, আমি গেছি আমার সঙ্গে গেছে জিন্স-প্যান্ট পরা, গেঞ্জি পরা মাইয়া। মরে গেছি আমি।’
সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে অধ্যাপক ড. নাছির উদ্দীন বলেন, এটি একটি ঘরোয়া আলোচনার বিষয় ছিল, কোনো অফিসিয়াল বক্তব্য নয়। এ ক্ষেত্রে আমার কিছু ‘স্লিপ অব টাং’ হতে পারে। এজন্য আমি সংশ্লিষ্ট সবার কাছে দুঃখ প্রকাশ করছি। স্পেসিফিকভাবে কোনো মেয়ে বা ছেলেকে উদ্দেশ্য করে আমার বক্তব্য ছিল না। যে স্কেলে কথা বলা উচিত ছিল, আমি হয়তো সেই সীমা অতিক্রম করেছি। একজন শিক্ষক হিসেবে ওইভাবে কথা বলা ঠিক হয়নি। আশা করি, আপনারা বিষয়টিকে আমার মানবিক দুর্বলতা হিসেবে বিবেচনা করবেন।
এদিকে, ওই শিক্ষকের শাস্তির দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের সামনে মানববন্ধন করেছেন শিক্ষার্থীরা। মানববন্ধনে তারা অধ্যাপক ড. নাছির উদ্দীনের বিচার ও শিক্ষার্থীদের সামনে প্রকাশ্যে ক্ষমা প্রার্থনার দাবি জানান। পরে শিক্ষার্থীরা পাঁচ দফা দাবি সম্বলিত স্মারকলিপি উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহর কাছে জমা দেন।
দাবিগুলোর মধ্যে সাজিদ হত্যার সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত করে গ্রেফতার করা, অধ্যাপক ড. নাছির উদ্দীনকে বহিষ্কার করা, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের হুমকি প্রদানকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া, শিক্ষার্থীদের ন্যায্য আন্দোলনে বাধা প্রদানকারীদের চিহ্নিত করে শাস্তি নিশ্চিত করা এবং শিক্ষার্থীদের মতপ্রকাশ ও আন্দোলনের সাংবিধানিক অধিকার সুরক্ষিত রাখা।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক হিসেবে অধ্যাপক নাছির উদ্দীনের এমন মন্তব্য কতটা যৌক্তিক তা ভাবতে গিয়েই আমরা বিস্মিত হয়েছি। তার মন্তব্যে তিনি সাজিদকে ছাই হয়ে গেছে বলেছেন। আসলে সাজিদ ছাই হয়ে যায়নি, ছাই হয়ে গেছে ওই শিক্ষকের বিবেক। জুলাইয়ে সাজিদের মতো ছেলেরা যদি আন্দোলন না করতো, তবে তিনি আজ এই বিভাগের সভাপতি হতে পারতেন না। আমরা দাবি জানাচ্ছি, তাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করতে হবে। তার বিচার না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে। তারা আগামীকাল লিখিত অভিযোগ দেবেন। অভিযোগ দেওয়ার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ না নেওয়া হলে অনশনে বসবেন বলে জানান তারা।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বলেন, কোনো শিক্ষক যদি এমন অশোভন বা অপমানজনক শব্দ ব্যবহার করেন, তা অত্যন্ত দুঃখজনক ও মানহানিকর। তিনি সাংবাদিকদের মাধ্যমে ইতোমধ্যে প্রকাশ্যে দুঃখ প্রকাশ করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকেও তিনি সবার কাছে দুঃখ প্রকাশ করেন। ভবিষ্যতে কোনো শিক্ষক যেন এমন মন্তব্য না করেন, সে বিষয়ে তিনি নিশ্চয়তা দিয়েছেন। এছাড়া আন্দোলনকারীরা লিখিত অভিযোগ দিলে প্রশাসন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে বলেও জানান উপাচার্য।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh
