দাপটের সাথে একটানা অভিনয় করে হয়েছিলেন জাত অভিনেতা। তার রক্তেই মিশে ছিল অভিনয়। এক সময় রাঙিয়েছেন মঞ্চ ও রূপালি পর্দা। হয়েছেন নায়ক ও খলনায়ক। তার অভিনয়ের সব দর্শন বুঝতে খুব বেশি সময় লাগেনি সহকর্মী ও দর্শকের। টানা তিন দশক নিজের অভিনয়ের জাদুতে বুঁদ করে রেখেছিলেন সবাইকে।
তিনি আর কেউ নন। তিনি হলেন বাংলাদেশের অভিনয় জগতের চিরসবুজ নন্দিত অভিনেতা প্রয়াত হুমায়ুন ফরীদি। শুভ জন্মদিন আজ তার।
১৯৫২ সালের এদিনে ঢাকার নারিন্দায় জন্মেছিলেন কিংবদন্তি অভিনেতা হুমায়ুন ফরীদি। তার বাবার নাম এ টি এম নুরুল ইসলাম, মায়ের নাম বেগম ফরিদা ইসলাম। চার ভাই-বোনের মধ্যে ফরীদি ছিলেন দ্বিতীয়।
শিক্ষা অঙ্গনেও মেধার প্রভাব রেখেছেন তিনি। ১৯৭০ সালে স্নাতক শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জৈব রসায়ন বিভাগে। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে স্থগিত হয়ে যায় তার পড়াশোনা। স্বাধীনতার পর অর্থনীতি বিষয়ে ভর্তি হন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। মেধার স্বাক্ষর রাখেন প্রাতিষ্ঠানিক ফলাফলেও।
ছাত্র থাকাকালে হুমায়ুন ফরীদি নাট্য সংগঠনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ১৯৬৪ সালে প্রথম কিশোরগঞ্জে মহল্লার মঞ্চনাটকে অভিনয় করেছিলেন তিনি। টিভি নাটকে প্রথম অভিনয় করেন ‘নিখোঁজ সংবাদ’ শিরোনামের নাটকে। ফরীদির প্রথম অভিনয় করা সিনেমার নাম ‘হুলিয়া’।
মঞ্চ, টেলিভিশন ও চলচ্চিত্র—এ মাধ্যমেই সমানতালে তিন দশক আলো ছড়িয়ে হয়ে উঠেছিলেন দেশের শোবিজের অন্যতম সেরা অভিনেতা।
যেখানেই তিনি অভিনয় করেছেন, সেখানেই পরশ পাথরের মতো আলো ছড়িয়েছেন। নায়ক-খলনায়ক দুই চরিত্রেই ছিলেন সাবলীল। মঞ্চ দিয়ে অভিনয়ে এলেও নাটকে তার ব্যাপক জনপ্রিয়তা ছিল।
হুমায়ুন ফরীদি অভিনীত জনপ্রিয় টিভি নাটকের মধ্যে রয়েছে ‘ভাঙনের শব্দ শুনি’, ‘বকুলপুর কতদূর’, ‘মহুয়ার মন’, ‘সাত আসমানের সিঁড়ি’, ‘একদিন হঠাৎ’, ‘চানমিয়ার নেগেটিভ পজিটিভ’, ‘অযাত্রা’, ‘পাথর সময়’, ‘দুই ভাই’, ‘শীতের পাখি’, ‘সংশপ্তক’, ‘কোথাও কেউ নেই’ ইত্যাদি।
নব্বই দশকের শুরুর দিকে তানভীর মোকাম্মেলের ‘হুলিয়া’ দিয়ে বড় পর্দায় অভিষেক হয় ফরীদির। এরপর একে একে অভিনয় করেন ‘সন্ত্রাস’, ‘দিনমজুর’, ‘বীরপুরুষ’ ও ‘লড়াকু’ সিনেমায় খলচরিত্রে। ‘মাতৃত্ব’ সিনেমার জন্য ২০০৪ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেছিলেন হুমায়ুন ফরীদি। এ ছাড়া নৃত্যকলা ও অভিনয় শিল্পের জন্য ২০১৮ সালের একুশে পদক (মরণোত্তর) লাভ করেছিলেন এই অভিনেতা।
২০১২ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেন বাংলা সিনেমার এই কিংবদন্তি। তিনি চলে গেলেও অভিনয়ে এখনো দর্শকের হৃদয়ে বেঁচে আছেন। তাইতো অভিনেতার জন্মদিনে এখনো শ্রদ্ধার সঙ্গে তাকে স্মরণ করছেন ভক্ত ও সহকর্মীরা।