বাংলা নববর্ষ উদযাপনের ঐতিহ্যবাহী গান ‘এসো হে বৈশাখ’ দীর্ঘকাল ধরে বাঙালির হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছিল। তবে সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে, নতুন প্রজন্মের সঙ্গীতপ্রেমীদের মধ্যে এক নতুন গান উঠে আসে—ফিডব্যাক ব্যান্ডের ‘মেলায় যাইরে’। এই গানটি শুধু একটি সঙ্গীতকর্ম নয়, বরং পহেলা বৈশাখের উৎসবের প্রাণবন্ত আবহ হয়ে উঠেছে।
গানটির প্রকাশ ও সৃষ্টির পটভূমি
‘মেলায় যাইরে’ গানটি প্রথম প্রকাশ পায় ফিডব্যাক ব্যান্ডের ১৯৯০ সালের অ্যালবাম 'মেলা'-তে। গানটির কথা ও সুর রচনা করেন ব্যান্ডের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য মাকসুদুল হক। তিনি জানান, গানটি লেখার সময় তিনি গ্রামীণ বৈশাখী মেলার চিত্র ও মানুষের আনন্দকে মূর্ত করে তুলতে চেয়েছিলেন। গানটি প্রকাশের পর দ্রুতই শ্রোতাদের মধ্যে জনপ্রিয়তা লাভ করে এবং পহেলা বৈশাখের অন্যতম অনুষঙ্গ হয়ে ওঠে।
জনপ্রিয়তার উত্থান ও বৈশাখের সঙ্গে সংযোগ
গানটির সুর, কথা এবং পরিবেশন পহেলা বৈশাখের উৎসবের সঙ্গে গভীরভাবে মিশে যায়। বিশেষ করে ঢাকার রমনা বটমূল, টিএসসি, চারুকলা অনুষদসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বৈশাখী মেলায় এই গানটি নিয়মিতভাবে পরিবেশিত হতে থাকে। গানের প্রাণবন্ত ছন্দ ও গ্রামীণ জীবনধারার চিত্র বাঙালির সংস্কৃতির সঙ্গে একাত্ম হয়ে ওঠে।
সাংস্কৃতিক প্রভাব: "রমনা বটমূলে গান থেমে গেলে, প্রখর রোদে এ যেন মিছিল চলে”
‘মেলায় যাইরে’ গানের সবচেয়ে বড় শক্তি তার আবহমান গ্রামীণ চিত্র ও সমসাময়িক শহুরে বাস্তবতাকে একই বন্ধনীতে বাঁধা। গানটি এমন এক সময়ের ভাষ্য, যখন বৈশাখের উৎসব কেবল মাঠে-ঘাটে, খেত-খামারে সীমাবদ্ধ ছিল না—তা এসে মিশে গেছে চারুকলার রঙিন দেয়াল, রমনা বটমূলের মঞ্চ, আর শাহবাগ মোড়ে প্রখর রোদের মধ্যেও মেতে ওঠা উৎসব- উল্লসিত মানুষের ঢল-এর সঙ্গে।
গানের লাইন—
“রমনা বটমূলে, গান থেমে গেলে
প্রখর রোদে, এ যেন মিছিল চলে...”
—এই চিত্রকল্প যেন বাঙালির নববর্ষ উদযাপনের নতুন বাস্তবতা তুলে ধরে। যেখানে গানের ভাষ্য কেবল গানের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং মূর্ত হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের মুখোশ পরা শিল্পীদের পদচারণায়, রমনার শতবর্ষী বটগাছের নিচে রবিশংগীত গাওয়া মানুষের ভিড়ে, কিংবা টিএসসির সামনের লাল-হলুদে ঢেউ খেলা পোশাকধারী জনতার উল্লাসে।
‘মেলায় যাইরে’ হয়ে উঠেছে সেই নতুন বৈশাখের সঙ্গীত, যেখানে মেলা মানেই শুধু বাউল-নাচ নয়, বরং নাগরিক সংস্কৃতির বর্ণিল প্রকাশ, প্রতিবাদ, ঐক্য আর প্রাণের উৎসব। এই গানটি যেন রাস্তায় নামে, মানুষের হাতে পতাকা তোলে, আর উৎসবকে একটি চলমান মিছিলে রূপ দেয়। তাইতো এ বুঝি বৈশাখ এলেই শুনি, মেলায় যাইরে.........।