ওপার
বাংলার জনপ্রিয় জীবনমুখী গায়ক নচিকেতা চক্রবর্তী তার গান ও বক্তব্যে বরাবরই
স্পষ্টবাদী। সমাজের প্রান্তিক মানুষের কণ্ঠস্বর হিসেবে তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে যিনি গানে তুলে এনেছেন ফুটপাতের বাস্তবতা, মধ্যবিত্তের স্বপ্নভঙ্গ, সেই নচিকেতা আজও সমানভাবে সরব আছেন সাম্প্রতিক বৈশ্বিক উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে। তার গানে যেমন উঠে এসেছে যুদ্ধের বিরুদ্ধে শান্তির প্রত্যাশা, তেমনি সরাসরি কথাতেও তিনি জানিয়েছেন নিজের উদ্বেগ—বিশেষ করে যুদ্ধ নিয়ে।
সম্প্রতি
কাশ্মির ইস্যুকে কেন্দ্র করে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে
নতুন করে যখন উত্তেজনা তৈরি হয়েছে এবং ভারত 'অপারেশন সিঁদুর' নামে এক অভিযানে পাকিস্তান
ও আজাদ কাশ্মিরের নয়টি স্থানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে, তখন পুরো উপমহাদেশ জুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে
প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন নচিকেতা চক্রবর্তী। তিনি বলেন, একটাই কারণে আমি যুদ্ধ নিয়ে আতঙ্কিত—এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন সাধারণ মানুষ। আপনি-আমি।
নচিকেতা
বিশ্বাস করেন, পৃথিবীর ইতিহাসে যত যুদ্ধ হয়েছে,
তার মূলেই রয়েছে অর্থনৈতিক স্বার্থ। তার মতে, যুদ্ধ কোনো আদর্শের লড়াই নয়, বরং পেছনে থাকে ব্যবসায়িক পরিকল্পনা। তিনি বলেন, সারা পৃথিবীতে যত যুদ্ধ হয়েছে,
যত হিংসা ছড়িয়েছে—সব কিছুর নেপথ্যে
বাণিজ্যিক স্বার্থ রয়েছে। সব যুদ্ধই স্পনসর
করা। আমি প্রমাণ করে দেব। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রসঙ্গ টেনে তিনি জানান, সে সময় রকফেলারদের
তেল কোম্পানি জার্মানি ও ইতালি—উভয়
দেশকেই জ্বালানি সরবরাহ করেছিল। এটি নিয়ে ইতিহাসে বিতর্ক রয়েছে। কেউ বলেন এটি ছিল রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত, আবার কেউ একে শুধুই ব্যবসা বলে মনে করেন।
তার
মতে, প্রাচীন ইতিহাস থেকে বর্তমান পর্যন্ত যুদ্ধ মানেই একটি মুনাফার খেলা। এখানে লাভবান হয় এক শ্রেণির
শক্তিশালী মানুষ বা গোষ্ঠী, আর
ক্ষতিগ্রস্ত হয় সাধারণ জনগণ।
কাদের লাভ হয়, সেই হিসাব যারা বুঝবেন, তারা খুব সহজেই বুঝে যাবেন যুদ্ধ আসলে কার জন্য।
নচিকেতার
গানে যেমন উঠে এসেছে আশা ও শান্তির বার্তা,
তেমনি ব্যক্তিগত অবস্থান থেকেও তিনি বলেন, একদিন ঝড় থেমে যাবে,
পৃথিবী আবার শান্ত হবে। তবে তার স্পষ্ট বক্তব্য—এই ঝড় থামাতে
হলে যুদ্ধের পেছনের বাণিজ্যিক স্বার্থ ও ক্ষমতার রাজনীতি
মোকাবেলা করতেই হবে।