অস্কারজয়ী অভিনেত্রী শার্লিজ থেরনদক্ষিণ আফ্রিকার ছোট শহর থেকে শুরু করে ইতালির সড়ক পেরিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বড় পর্দায় জ্বলজ্বল করে উঠেছেন। নাচ ছিল তার একমাত্র ধ্যানজ্ঞান। কিন্তু ভাগ্য তাকে অন্য পথে নিয়ে যায়।
মডেলিংয়ের মাধ্যমে শুরু হওয়া পথ তাকে ধাপে ধাপে অভিনয়ের জগতে পরিচিতি এনে দেয়। ১৯৭৫ সালের ৭ আগস্ট দক্ষিণ আফ্রিকায় জন্ম নেওয়া এই তারকার জীবন সংগ্রাম ও সফলতা এবার উঠে এসেছে আইএমডিবির ৫০তম জন্মবার্ষিকী স্মরণে।
শার্লিজের শৈশব কাটে দক্ষিণ আফ্রিকার একটি বোর্ডিং স্কুলে। মাত্র ১৩ বছর বয়সে এই আলাদা পরিবেশে তার প্রথম শিল্পচর্চার আগুন জ্বলে ওঠে। সে সময় নাচের প্রতি ছিল তার গভীর আকর্ষণ, কিন্তু পরবর্তী সময়ে মডেলিংয়ের দুনিয়ায় পা রাখেন। ইউরোপের বিভিন্ন শহরে মডেলিংয়ের কাজ করার পর তিনি নিউইয়র্ক যান এবং সেখানে ব্যালে নৃত্যশিল্পী হিসেবে নাম লেখান।
এক সাক্ষাৎকারে শার্লিজ বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে আসার মূল কারণ ছিল মডেলিংয়ের জন্য মাত্র তিন দিনের কাজ। তবে সেখানে এসে শীতকালীন এক পুরো মৌসুম বন্ধুর বাসায় কাটাতে হয়, যেখানে জানালা পর্যন্ত ছিল না। সে সময় হাঁটুর চোট পেয়ে বুঝতে পারেন, নাচের স্বপ্ন তার জন্য নয়। তার মা দক্ষিণ আফ্রিকায় ফিরে যেতে চান, কিন্তু শার্লিজ নিজের সিদ্ধান্ত নিয়ে ডিপ্রেশনে পড়ে যান।
১৯৯৪ সালে মাত্র ৩০০ ডলার হাতে নিয়ে নিউইয়র্ক থেকে লস অ্যাঞ্জেলেসের পথে রওনা দেন। হাতে থাকা অল্প টাকাও দ্রুত শেষ হয়ে যায়। এমনকি কখনও রেস্তোরাঁ থেকে রুটি চুরি করেও বাঁচতে হয়েছে তাকে। নাগরিকত্ব না থাকায় ব্যাংকে মায়ের পাঠানো চেক ভাঙতে সমস্যা হলে, একজন ভালমানুষ- জন ক্রসবি তার পাশে দাঁড়ান। তার সাহায্যে ফিল্ম স্কুলে ভর্তি হন এবং অভিনয়ের প্রথম সুযোগ পান ‘চিলড্রেন অব দ্য কর্ন ৩: আরবান হার্ভেস্ট’ ছবিতে, যেখানে যদিও তার কোনো সংলাপ ছিল না।
ছোট ছোট চরিত্রে অভিনয় করে ধীরে ধীরে নজর কাড়ে তার উচ্চতা, সৌন্দর্য এবং দক্ষতা। ‘ডেভিলস অ্যাডভোকেট’ ছবিতে আল পাচিনোর সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পেয়ে পুরো হলিউডে পরিচিতি পান। এরপর ‘সুইট নভেম্বর’, ‘দ্য ইতালিয়ান জব’, ‘মনস্টার’সহ অসংখ্য ব্যবসাসফল ছবিতে অভিনয় করেন। ২০০৪ সালে ‘মনস্টার’ ছবির জন্য অস্কার সেরা অভিনেত্রী পুরস্কার জিতে পান এবং হলিউডের অন্যতম সর্বোচ্চ পারিশ্রমিকপ্রাপ্ত অভিনেত্রী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হন।
তবে তার জীবনের সবচেয়ে গা ছমছমে স্মৃতি থেকে যায় শৈশবের এক তীব্র ট্রমা। ১৯৯১ সালের ২১ জুন, মাত্র ১৫ বছর বয়সে মাতাল বাবার হাতে ঘর ভেঙে যায়। বন্দুক নিয়ে বাবা স্ত্রী ও কন্যাকে হুমকি দিলে, নিজের এবং পরিবারের নিরাপত্তার জন্য তার মা পাল্টা গুলি ছোড়েন। গুলিতে বাবা মারা যান। সেই দিনটির স্মৃতি আজও তার হৃদয়ে গভীর দাগ কাটে। সেই দুঃসহ অভিজ্ঞতা তাকে আরও দৃঢ় করে, যার প্রতিফলন তার অভিনয় জীবনেও দেখা যায়।