বাংলাদেশের প্রাকৃতিক জলজ পরিবেশ ও হাওর অঞ্চলের বাস্তব জীবনের গল্প নিয়ে নির্মিত হল ‘জলমহল’। বহুল প্রতীক্ষিত এই চলচ্চিত্রটির শুটিং সম্প্রতি সম্পন্ন হয়েছে। কিশোরগঞ্জের বিস্তীর্ণ হাওর এলাকায় টানা শুটিং শেষে এখন ছবিটি পোস্ট-প্রোডাকশনের কাজের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
নির্মাতাদের ভাষ্যে, এ চলচ্চিত্র কেবল একটি গল্প নয়, এটি এক জলের জীবনচিত্র। হাওরের মানুষের জীবন-যাপন, প্রেম, সংগ্রাম ও প্রতিবাদের ছাপ ফুটে উঠেছে এর কাহিনিতে। একদিকে প্রেমে বিভোর এক তরুণ, অন্যদিকে তার ভেতরেই জন্ম নেয় এক যোদ্ধা, যে জলমহলের নৈঃশব্দ্য ভেঙে দাঁড়ায় নিজের বাবার বিরুদ্ধেও।
চলচ্চিত্রটির পরিচালক জানান, ‘হাওরের পানির মধ্যে, ভেজা শরীর আর কাদামাখা পায়ে আমরা শুট করেছি। মাঝে মাঝে মনে হয়েছে, আমরা নিজেরাও যেন চরিত্রে ঢুকে পড়েছি।’ শুটিং চলাকালে প্রতিদিনই ইউনিটকে গভীর হাওরের পানিতে ভেসে থাকতে হয়েছে নৌকায়। ভারী ক্যামেরা ও প্রযুক্তি সামগ্রী নিয়ে পানি ও কাদার মধ্যে কাজ করাটা ছিল কঠিন চ্যালেঞ্জ।
শুধু তাই নয়, শুটিং চলাকালীন সময়ে একাধিকবার ইউনিটকে হাওরের আচমকা ঝড় ও বৃষ্টির মুখোমুখি হতে হয়েছে। কখনো কাজ বন্ধ রাখতে হয়েছে, আবার কখনো ঝড়-বৃষ্টির মধ্যেই শুটিং চালিয়ে যেতে হয়েছে।
চলচ্চিত্রটিতে অভিনয় করেছেন মাসুম রেজওয়ান, জান্নাতুল ফেরদৌস কাজলসহ এক ঝাঁক নবীন ও অভিজ্ঞ অভিনেতা। চরিত্রের বাস্তবতা বজায় রাখতে শিল্পীরা স্থানীয় জেলেদের সঙ্গে একাত্ম হয়ে কাজ করেছেন। তারা শিখেছেন জাল ফেলা, নৌকা চালানোসহ হাওরের জীবনের খুঁটিনাটি, যেন পর্দায় প্রতিটি মুহূর্ত হয়ে ওঠে বিশ্বাসযোগ্য।
প্রোডাকশন ডিজাইনেও ছিল অভিনবত্ব। কোনো সেটে নয়, বরং বাস্তব জেলে পল্লি, নৌকা ও হাওরের ঘরে-ঘরে হয়েছে দৃশ্যধারণ। অতিরিক্ত লাইটিং ছাড়াই প্রাকৃতিক আলোতে দৃশ্যায়ন করে হাওরের স্বাভাবিক রূপ তুলে ধরা হয়েছে।
নির্মাতাদের মতে, ‘জলমহল কেবল একটি চলচ্চিত্র নয়, এটি হাওরের মানুষদের ভালোবাসা, গন্ধ, শব্দ আর জীবনের স্বাদকে পর্দায় এনে দেওয়ার একটি প্রচেষ্টা।’ ছবিটিতে হাওরের পরিচ্ছন্ন গ্রাম, মানুষ আর প্রকৃতিকে তুলে ধরার চেষ্টা
করা হয়েছে ভিন্ন এক দৃষ্টিকোণ থেকে।
‘জলমহল’ চলতি বছরের শেষদিকে দেশি ও আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শনের লক্ষ্যে মুক্তি পেতে পারে। এখন চলছে সম্পাদনার কাজ। নির্মাতারা আশাবাদী, ছবিটি দর্শকদের মন জয় করবে এবং হাওরের জলজ জীবনের প্রতি এক নতুন উপলব্ধি তৈরি করবে।