ছবি: সংগৃহীত।
২০০৬ সালে মডেলিংয়ের মাধ্যমে শোবিজে কাজ শুরু করেন সাদিয়া জাহান প্রভা। অভিনয় শুরু ইফতেখার আহমেদ ফাহমি পরিচালিত ‘লস প্রজেক্ট’ নাটক দিয়ে। এরপর অসংখ্য নাটক ও বিজ্ঞাপনে দেখা গেছে প্রভাকে। তবে দেখা যায়নি কোনো সিনেমায়।
অবশেষে দুই দশকের ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো নাম লেখালেন বড় পর্দায়। প্রভা অভিনয় করছেন সরকারি অনুদানের দুই সিনেমায়। একটি ঝুমুর আসমা জুঁই পরিচালিত ‘দুই পয়সার মানুষ’, অন্যটি সাদেক সিদ্দিকীর ‘দেনা পাওনা’। চলচ্চিত্রে কাজ ও সমসাময়িক ব্যস্ততা নিয়ে অভিনেত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন সুদীপ কুমার দীপ।
চলচ্চিত্রের শুটিং কেমন চলছে?
দুটিরই প্রথম লট শেষ করেছি। বৃষ্টি হচ্ছে প্রায় প্রতিদিন। ফলে দ্বিতীয় লটের শুটিং দেরি হচ্ছে। দেখা যাক, হয়তো আগামী মাসের মাঝামাঝি নতুন শিডিউল দেব।
প্রথমবার চলচ্চিত্রে, নিশ্চয়ই উপভোগ করছেন?
সে কি আর বলতে! এই প্রথম নায়িকা নায়িকা একটা ফিল পাচ্ছি (হা হা হা)। কেউ মাথার ওপর ছাতা ধরছেন, কেউ আবার ডাব কেটে আনছেন। একটু পর পর পরিচালক এসে জিজ্ঞেস করছেন, কিছু লাগবে কি না! সত্যি বলতে, নাটক-বিজ্ঞাপনের ইউনিট তো চলচ্চিত্রের মতো এত বড় হয় না। ‘দুই পয়সার মানুষ’ ছবির নির্মাতা একজন নারী—ঝুমুর আসমা জুঁই। তিনি আমাকে শুটিং সেটে খুব সমাদর করেন।
আমিও তাঁর ব্যবহারে দারুণ আপ্লুত। ‘দেনা পাওনা’ ছবির নির্মাতা প্রবীণ সাদেক সিদ্দিকী। তিনিও আমাকে যথেষ্ট আদর করেন। বলতে পারেন, চলচ্চিত্র করতে গিয়ে আলাদা অভিজ্ঞতা হচ্ছে।
ছবি দুটিতে আপনি কী ধরনের চরিত্র করছেন?
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘দেনা পাওনা’র গল্প তো অনেকেই জানেন। এখানে আমি গরিব ঘরের মেয়ে।বাবা শখ করে বড়লোক পরিবারে বিয়ে দেন। কিন্তু বিয়ের সময় যৌতুক দিতে ব্যর্থ হন। সেটার দায় শ্বশুরবাড়িতে আমাকেই বহন করতে হয়। মানসিক নির্যাতনের শিকার হই। অন্যদিকে ‘দুই পয়সার মানুষ’-এ আমি মফস্বলের মেয়ে। বাবা স্কুল শিক্ষক। আমাকে আইন বিষয়ে পড়ান। একটা সময় জীবনে নেমে আসে অন্ধকার।
আগেও তো চলচ্চিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব পেয়েছিলেন। তখন রাজি হননি কেন?
আমার ক্যারিয়ার শুরু হয়েছিল অল্প বয়সে। বাসা থেকে চলচ্চিত্রে অভিনয় করতে দিতে রাজি হয়নি। এখন বুঝি, অনেকটা দেরি করে ফেলেছি। নিজে যখন সিদ্ধান্ত নিতে শুরু করলাম, তখন আর ভালো গল্প বা প্রস্তাব পাইনি। একটা সময় নির্মাতারা আমার প্রতি যে আগ্রহ দেখিয়েছিলেন, সেটার সুবিধা আমি নিতে পারিনি। আমার বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চলচ্চিত্র নির্মাণও তো কমতে শুরু করল। এখন তো তলানিতে ঠেকেছে। তার পরও শুরু করলাম, দেখা যাক কত দূর যেতে পারি।
ক্যারিয়ারের দুই দশক পার করলেন। আপনার উপলব্ধি কী?
আমি আসলে স্টারডম দেখাতে পারি না। এটাকে আমার ব্যর্থতা বা সফলতা দুটিই বলতে পারেন। এইচএসসি পরীক্ষার শেষ দিন গিয়েছিলাম মেরিল বিউটি সোপের অডিশনে। পাস করলাম, বিজ্ঞাপনচিত্র তৈরি হলো, রাতারাতি জনপ্রিয়ও হয়ে গেলাম। সারা দেশে আমার পরিচিতি এলো। বৃহস্পতিবারের সংবাদপত্রগুলোতে বড় বড় ছবি ছাপা হতে থাকল। অথচ আমি যে প্রভা সেই প্রভাই রয়ে গেলাম। শুটিং ইউনিটে কাউকে বুঝে কষ্ট দিয়েছি এমন অপবাদ নেই। কারো শিডিউল ফাঁসানোর রেকর্ডও নেই। অনেক ক্ষেত্রে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছি, অনেক ক্ষেত্রে ভুল করেছি। তবে থেমে যাইনি, ভুল থেকে শিক্ষা নিয়েছি। আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছি। বুকে ব্যথা লুকিয়ে মুখে হাসি রেখেছি। এই ইন্ডাস্ট্রি আমাকে অনেক কিছু দিয়েছে। কৃতজ্ঞ থাকব সারা জীবন।
চাকরিও তো করছেন। চাকরিজীবনটা কেমন উপভোগ করছেন?
দারুণ! অনেকের পাশাপাশি আমার মা-ও ভেবেছিলেন, আমি বোধ হয় চাকরি করতে পারব না। ৯টা-৫টা অফিস মেনটেইন করতে পারব না। অথচ এই জীবনটাই খুব উপভোগ করছি। একটি ইলেকট্রিক কম্পানির ব্র্যান্ড ডিরেক্টর পদে আছি। বুঝতে পারছেন দায়িত্বটা কত বড়! এর পরও অফিসের অ্যাডমিন দারুণ খুশি। কলিগরা তো রীতিমতো বলেন, আমি নাকি সুপারওম্যান।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকে আপনার ছবি ও ভিডিও ব্যবহার করে হীন উদ্দেশ্যে...
হ্যাঁ। আগে মন খারাপ হতো, কাঁদতামও। আমাদের দেশটা যদি ইউরোপ-আমেরিকার মতো হতো, তাহলে তো আর মানুষের চিন্তা-চেতনা এমন হতো না। মাঝে মাঝে ভাবি, আমাকে যদি কেউ আইনি সহযোগিতা করতেন তাহলে ছবি ও ভিডিও ব্যবহারের বিরুদ্ধে মামলা করতাম। কিছুদিন আগে দেখেছেন মনে হয়, ভারতে ঐশ্বরিয়া রাই কিন্তু মামলা করেছিলেন। সেই মামলা জিতেছেনও। এখন থেকে তাঁর অনুমতি ছাড়া কেউ ছবি ব্যবহার করতে পারবে না। আমাদের দেশে এটা কি করা যায় না?
নাটকে অভিনয় করাটা কি একেবারে কমিয়ে দিলেন?
একই গল্প, একই ধরনের চরিত্র। আর কত, বলেন! এখন থেকে বেছে বেছে কাজ করতে চাই। আর সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দিতে চাই ওটিটি প্ল্যাটফর্ম ও চলচ্চিত্রে। খুব ইচ্ছা আছে এ দুই মাধ্যমে কিছু ভালো কাজ করার।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh