“আমার ময়না টিয়া, আগন মাসের ধান তুলিয়া করব তুমায় বিয়া” - “আমি পড়ছি গো চিন্তায়, আগণ মাসের ধান নু আমার নিছেগি বন্যায়” -এমন জনপ্রিয় গানের স্রষ্টা,মধুর কণ্ঠের অধিকারী, ছাতকের জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী আলী ইনসান আর নেই। (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
আজ সোমবার (২৭ অক্টোবর) ভোরে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি সিলেট এম.এ.জি. ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল মাত্র ৩৫ বছর।
আলী ইনসান ছিলেন ছাতক উপজেলার ১নং ইসলামপুর ইউনিয়নের ছড়ারপাড় গ্রামের মৃত দুধু মিয়ার পুত্র। অল্প বয়সেই তিনি সংগীতের জগতে নিজের প্রতিভার স্বাক্ষর রাখেন। তাঁর কণ্ঠে ছিল এক অন্যরকম মাধুর্য, যা শ্রোতার হৃদয় ছুঁয়ে যেত। লোকসংগীত, আধুনিক গান এবং আঞ্চলিক গানে তাঁর কণ্ঠের আবেদন ছিল অনন্য।
আলী ইনসান তার গানে ফুটিয়ে তুলেছেন গ্রামীণ জীবনের সুখ-দুঃখ, প্রেম-বিরহ, মানবিক আবেগ ও সামাজিক বাস্তবতা। তার গাওয়া গান “আমার ময়না টিয়া”, “ও পরাণ বান্ধব”, “ধানের শিষে ভালোবাসা”, “চাঁদ রে তুই বল রে” ইত্যাদি গানগুলো স্থানীয় ও অনলাইন মাধ্যমে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। ইউটিউব, ফেসবুকসহ বিভিন্ন মাধ্যমে তাঁর গানের ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে, যা হাজার হাজার মানুষের মন জয় করেছিল।
সংগীতচর্চার পাশাপাশি আলী ইনসান ছিলেন বিনয়ী ও সহৃদয় মানুষ। স্থানীয় সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর সাথে যুক্ত থেকে তিনি নতুন প্রজন্মকে সংগীতে আগ্রহী করে তুলেছিলেন। তরুণ শিল্পীদের পাশে দাঁড়ানো, স্থানীয় অনুষ্ঠানগুলোতে অংশগ্রহণ এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রক্ষায় তাঁর ভূমিকা ছিল প্রশংসনীয়।
তার মৃত্যুর খবর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ভক্ত, সহশিল্পী, সাংবাদিক ও শুভানুধ্যায়ীদের মধ্যে নেমে আসে গভীর শোকের ছায়া। অনেকেই তার গানের স্মৃতি শেয়ার করে লিখেছেন, “একটি সুরেলা কণ্ঠ নিভে গেল, কিন্তু তার গান বেঁচে থাকবে আমাদের হৃদয়ে।”
ইনসানের মৃত্যুতে ছাতক, সিলেটসহ আশপাশের এলাকায় সংগীতপ্রেমীদের মধ্যে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। স্থানীয় শিল্পীরা বলছেন, আলী ইনসানের মৃত্যুতে ছাতকের সংগীতাঙ্গন এক প্রতিভাবান শিল্পীকে হারালো, যার শূন্যতা সহজে পূরণ হবে না।