ছবি: সংবাদ সারাবেলা।
ঢাকাই সিনেমার একসময়কার আলোচিত চিত্রনায়িকা রিয়ানা পারভিন পলি ২০০১ সালে মোহাম্মদ হোসেন পরিচালিত ‘ফায়ার’ সিনেমার মাধ্যমে বড়পর্দায় নায়িকা হিসেবে অভিষিক্ত হন। এই ছবিতেই তিনি প্রয়াত জনপ্রিয় নায়ক মান্নার সঙ্গে জুটিবদ্ধ হয়ে প্রথমবারের মতো দর্শকের সামনে আসেন। অভিষেকের পর অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি ঢাকাই চলচ্চিত্রে ব্যস্ত ও পরিচিত মুখে পরিণত হন।
ক্যারিয়ারের বিভিন্ন সময়ে পলি প্রায় ১১৩টি সিনেমায় অভিনয় করেছেন। মান্না, শাকিব খান, রুবেল, অমিত হাসানসহ ঢালিউডের শীর্ষ অনেক নায়কের বিপরীতে তাকে দেখা গেছে। তার উল্লেখযোগ্য ছবির তালিকায় রয়েছে— *‘যুদ্ধে যাব’, ‘ক্ষত বিক্ষত’, ‘মানিক বাদশা’, ‘এলাকার ত্রাস’, ‘কঠিন পুরুষ’, ‘জঙ্গল’, ‘দুর্ধর্ষ’, ‘অশান্ত বাদশা’, ‘রাস্তা’, ‘জাল’, ‘বাংলার বাঘ’*সহ আরও বহু দর্শকপ্রিয় সিনেমা।
২০১২ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘এক নম্বর আসামী’ ছিল তার অভিনীত সর্বশেষ সিনেমা। এরপর দীর্ঘ সময় তিনি অভিনয় থেকে দূরে ছিলেন। এই সময়ে তিনি ব্যবসা, সামাজিক কর্মকাণ্ড এবং শিল্পী সংগঠনের বিভিন্ন নির্বাচনী কার্যক্রমে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন।
দীর্ঘ বিরতির পর সম্প্রতি পলি আবারও সিনেমায় ফিরেছেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গল্প অবলম্বনে সরকারি অনুদানে নির্মিত সিনেমা ‘দেনা-পাওনা’–তে অভিনয় করেছেন তিনি। দীর্ঘ সময় পর ক্যামেরার সামনে ফেরার অনুভূতি এবং বর্তমান চলচ্চিত্র পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলতে গিয়ে পলি খোলামেলা মতামত দেন।
বর্তমানে সিনেমায় অনেক নতুন মুখের আগমন প্রসঙ্গে পলি বলেন, এখন অনেক তরুণ অভিনেতা-অভিনেত্রী জাঁকজমকভাবে সিনেমার মহরত করে, কিছুদিন শুটিংও হয়, কিন্তু পরে আর তাদের খুঁজে পাওয়া যায় না। তার মতে, “এরা মূলত সোশ্যাল মিডিয়ায় পাবলিসিটি চায়, ক্ষণিকের জন্য ফেমাস হতে চায়। সিনেমা করাটাই যে মূল জায়গা, সেখানে তাদের ফোকাস নেই। এর বড় কারণ অর্থ। একটি সিনেমা শেষ করতে প্রচুর টাকার প্রয়োজন হয়, যা অনেক তথাকথিত প্রডিউসারের নেই। তারা সিনেমা বানাতে নয়, নিজেদের পরিচিতি তৈরির জন্যই এখানে আসে।
২০১০ সালের পর নতুন মুখরা কেন নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারছে না—এই প্রশ্নে পলি বলেন, এখন নতুন সিনেমা নেই, নতুন গল্প নেই। একজন শিল্পীকে নিজেকে প্রমাণ করতে হলে শক্ত গল্প ও ভালো ছবির দরকার হয়, কিন্তু সেই সুযোগ এখন খুব কম। এ কারণেই অনেকেই হারিয়ে যাচ্ছে, নতুন তারকা তৈরি হচ্ছে না।
বাংলা সিনেমার ভবিষ্যৎ নিয়ে তিনি আশাবাদী। একসময় দেশে যেখানে ১২শ’র বেশি সিনেমা হল ছিল, সেখানে এখন সংখ্যা নেমে এসেছে প্রায় ১০০’র কাছাকাছি। তবে পলির বিশ্বাস, নতুন নতুন সিনেপ্লেক্স গড়ে উঠছে এবং এই সিনেপ্লেক্স সংস্কৃতি পুরোপুরি চালু হলে, পাশাপাশি পুরনো ও নতুন শিল্পীদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বাংলা সিনেমার সুদিন আবার ফিরবে।
ফিল্ম ক্লাব নির্বাচন প্রসঙ্গে পলি জানান, জয়ী হলে তারা বেশ কিছু বাস্তবধর্মী পদক্ষেপ নেবেন। তার ভাষায়, প্রথমেই ফিল্ম ক্লাবটি শিফট করে সদস্যদের জন্য একটি উন্নতমানের ক্লাব উপহার দেওয়া হবে। এখানে প্রায় ৬৭৬ জন সদস্য রয়েছেন—যাদের মধ্যে প্রযোজক, পরিচালক, শিল্পী ও কলাকুশলীরা আছেন। সবাইকে একত্র করে চলচ্চিত্রের সংকট ও সম্ভাবনা নিয়ে কাজ করা হবে। তিনি বিশ্বাস করেন, এক টেবিলে বসে আড্ডা থেকেই নতুন গল্প, নতুন সিনেমার জন্ম হতে পারে।
নিজের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে পলি বলেন, তিনি পুরোপুরি একজন সিনেমার মানুষ। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে অদূর ভবিষ্যতে তিনি চলচ্চিত্রে বিনিয়োগ করবেন এবং প্রযোজক হিসেবেও আত্মপ্রকাশ করবেন।
সবশেষে দর্শকদের উদ্দেশ্যে তার আবেদন—তিনি যে নতুন সিনেমা ‘দেনা-পাওনা’–তে অভিনয় করেছেন, দর্শকরা যেন হলে গিয়ে ছবিটি দেখেন। পাশাপাশি নতুন যে সিনেমাগুলো মুক্তি পাচ্ছে, সেগুলোও হলে গিয়ে দেখার আহ্বান জানান তিনি। পলির বিশ্বাস, দর্শক হলে ফিরলেই বাংলা সিনেমা আবারও ঘুরে দাঁড়াবে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh
