ছবিঃ শামীম হাসান সীমান্ত
ঢেঁকির পাড়ে পল্লীবধূদের গান বাংলার গ্রামীণ জনপদে সবার মুখে মুখে শোনা গেলেও বর্তমান প্রজন্মের কাছে তা অকল্পনীয়। ধান থেকে চাল, তা থেকে আটা। এক সময়ে চাল আর আটা প্রস্তুতের এক মাধ্যম ছিল ঢেঁকি। নবান্ন এলেই ঢেঁকির পাড়ে ধুম পড়তো নতুন ধানের চাল ও আটা তৈরির। আর শীতের পিঠা তৈরি চলতো গ্রামের প্রায় সব বাড়িতে। তবে কালের বিবর্তনে প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে ঢেঁকিশিল্প। আর নতুন প্রজন্মের কাছে ঢেঁকি শব্দটি অতীতের গল্প মাত্র। তবে বাস্তবে এর দেখা মেলা ভার।
আশুলিয়ার দু-এক জায়গায় থাকলেও ব্যবহার তেমন একটা নেই। আশির দশক থেকে ক্রমে বিলুপ্তির পথে ঢেঁকি। ঢেঁকিতে তৈরি করা আটা দিয়ে ঘরে ঘরে প্রস্তুত হতো পুলি, ভাপা, পাটিসাপটা, তেলে ভাজা, চিতইসহ নানা ধরনের বাহারি পিঠা পুলি। পিঠার গন্ধ ছড়িয়ে পড়তো এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে। উৎসব মুখর পরিবেশে উদযাপন করা হতো নবান্ন উৎসব।
গ্রামের জনপদগুলোতে এখন বিরাজ করছে শহুরে হাওয়া। তাই তো গ্রামে আর ঢেঁকি নেই, নেই পল্লীবধূদের মন মাতানো গান। কিছু জায়গায় নবান্ন উৎসব হলেও পিঠা-পুলির সমাহার আর চোখে পড়ে না। গ্রাম বাংলার এমন চিরায়ত সব ঐতিহ্য এখন শুধুই স্মৃতি। ঢেঁকি ছাঁটা চাল শরীর ও স্বাস্থ্যের জন্য উপযোগী হওয়ায় তা দিয়ে গ্রামের শিশুদের জাউ তৈরি করে খাওয়ানো হতো। কিন্তু কালচক্রের বিবর্তন ও যান্ত্রিক সভ্যতার আগ্রাসনে হারিয়ে যাচ্ছে ধান থেকে চাল আটা তৈরির একমাত্র মাধ্যম গ্রামীণ ঢেঁকি।
সভ্যতার প্রয়োজনে ঢেঁকির আবির্ভাব ঘটেছিল। আবার গতিময় সভ্যতার যাত্রায় প্রযুক্তিগত উৎকর্ষে ঢেঁকি বিলুপ্ত হচ্ছে। একে না মেনে নিয়ে উপায় নেই। দেশের গ্রামগুলোতে ঘুরলে একটি ঢেঁকিরও দেখা মেলে না। আধুনিকতার ছোঁয়ায় ঢেঁকির জায়গা দখল করে নিয়েছে বিদ্যুৎচালিত মেশিন। গ্রামগঞ্চে গড়ে উঠেছে মিনি রাইস মিল। ফলে ঢেঁকির অস্তিত্ব আজ বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে। ঢেঁকিছাঁটা চাল ও চিড়া আজ আর নেই। এখন আর আগের মতো ঢেঁকিতে ধান ভানার দৃশ্য চোখে পড়ে না। ভোরের স্তব্ধতা ভেঙে শোনা যায় না ঢেঁকি ঢেঁকুর ঢেঁকুর শব্দ। চোখে পড়ে না বিয়েশাদি উৎসবে ঢেঁকিছাঁটা চালের ক্ষীর পায়েস রান্না। অথচ একদিন ঢেঁকি ছাড়া গ্রাম কল্পনা করা কঠিন ছিল। এক সময় গ্রামের প্রায় সব সভ্রান্ত পরিবারেই ঢেঁকি ছিল।
ধান ভাঙা কল আমদানির পর গ্রামাঞ্চল থেকে ঢেঁকির বিলুপ্তি শুরু হয়। ফলে গ্রামের মানুষ ভুলে গেছেন ঢেঁকিছাঁটা চালের স্বাদ। যান্ত্রিক সভ্যতা গ্রাস করেছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী কাঠের ঢেঁকিশিল্পকে। বর্তমান যুগের অনেকেই ঢেঁকি চেনে না। কালের পাতায় স্মৃতি হয়ে যাচ্ছে ঢেঁকি। যেখানে বসতি সেখানেই ঢেঁকি, কিন্তু আজ তা আমাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য থেকে মুছে যাচ্ছে। বর্তমান সময়ে কিছু কিছু বাড়িতে ঢেঁকি থাকলেও তা ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়। আগে তা হতো না। ঢেঁকি শিল্প এখন রূপকথার গল্পের মতো।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh