× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

সিলেটের পুরার্কীতি ও প্রাচীন স্থাপনা ধ্বংসের পথে

মাহমুদ খান, সিলেট প্রতিনিধি।

১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৫:৪১ পিএম

ছবিঃ মাহমুদ খান

৩৬০ আউলিয়ার পুণ্যভূমি সিলেট একটি প্রাচীন জনপদ। এ জেলায় রয়েছে রয়েছে অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ পুরার্কীতি। তবে পুরার্কীতি ও প্রাচীন স্থাপনা যথাযথ সংরক্ষণ না করার কারণে সেগুলো এখন ধ্বংসের পথে। পর্যাপ্ত রক্ষণাবেক্ষণের অভাব, অবহেলা, এবং প্রশাসনিক উদ্যোগের ঘাটতির কারণে সিলেটের ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলো তাদের গৌরব হারাতে বসেছে।

সিলেট বিভাগে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের আঞ্চলিক কার্যালয় নেই, চট্টগ্রামের আঞ্চলিক কার্যালয় অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে সিলেট বিভাগ দেখভাল করছে। তাদের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, সিলেট বিভাগে এখন পর্যন্ত সংরক্ষিত পুরার্কীতির সংখ্যা ১৭টি। এরমধ্যে সিলেট জেলায় ১২টি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জেলার বিভিন্ন প্রাচীন মসজিদ, মন্দির, সমাধি ও ঐতিহাসিক ভবনগুলো দিনে দিনে ভেঙে পড়ছে। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর কয়েকটি পুরার্কীতি সংরক্ষণ করলেও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে সেগুলোও ধ্বংসের পথে। এর বাহিরে অসংখ্য প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন থাকলেও সেগুলো এখনও সংরক্ষিত হয়নি।

স্থানীয় ইতিহাসবিদ ও সাংস্কৃতিক কর্মীরা দীর্ঘদিন ধরে এই বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করলেও, কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। বিশেষজ্ঞদের মতে, সঠিক সংরক্ষণ ও সংস্কার পরিকল্পনার অভাবে এসব স্থাপনার অনেকগুলোই চিরতরে হারিয়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দা এবং পর্যটকদের মতে, পর্যটন সম্ভাবনাও হারিয়ে যাচ্ছে। “এত প্রাচীন ও মূল্যবান স্থাপনা আমাদের এলাকায় রয়েছে, কিন্তু তা সঠিকভাবে সংরক্ষণ না করার কারণে এগুলো হারিয়ে যাচ্ছে,” বলেন এক স্থানীয় গবেষক।
বিশেষজ্ঞরা দাবি করছেন, সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে এবং একটি নির্দিষ্ট পরিকল্পনার মাধ্যমে সিলেটের পুরার্কীতি সংরক্ষণ করতে হবে। ঐতিহাসিক এই সম্পদগুলো সঠিকভাবে সংরক্ষণ করলে তা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্যও অনুপ্রেরণার উৎস হতে পারে এবং পর্যটনের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারে।

সেভ দ্য হেরিটেজ এন্ড এনভায়রমেন্টের প্রধান সমন্বয়কারী আব্দুল হাই আল-হাদী বলেন, ঐতিহাসিক এসব স্থাপনা সংরক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য দ্রুততম সময়ের মধ্যে সিলেটে আঞ্চলিক কার্যালয় স্থাপন করতে হবে। সিলেট ও চট্টগ্রামের জন্য কুমিল্লাতে একটি আঞ্চলিক কার্যালয় রয়েছে। যার কারণে বর্তমানে যারা দায়িত্বে রয়েছেন তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করতে সমস্যা হচ্ছে। এজন্য সিলেট আঞ্চলিক কার্যালয় দ্রুত সময়ের মধ্যে করতে হবে। পাশাপাশি সিলেটে একটি জাদুঘর স্থাপন করতে হবে। সিলেটের সেসব পুরোনো স্থাপনা পুরার্কীতি হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে সেগুলো সঠিকভাবে সংরক্ষণ ও দর্শনার্থীদের জন্য প্রদর্শন করতে হবে। পাশাপাশি শতশত পুরোনো স্থাপনা, ঐতিহাসিক স্থান, শিলালিপি রয়েছে সেগুলোকে পুরার্কীতি হিসেবে ঘোষণা করার জন্য প্রয়োজনীয় জরিপ চালাতে হবে। এখনই যদি এগুলো সংরক্ষণ করা না যায় তাহলে সেগুলো ধ্বংস হয়ে যাবে। ইতোমধ্যেই অনেক পুরোনো স্থাপনা বেদখলে চলে গেছে। সেগুলো চিহ্নিত করে পুরার্কীতি হিসেবে ঘোষণা করতে হবে।

ইতিহাস-ঐতিহ্যের সন্ধানে দেশের নানা প্রান্তে ঘুরে বেরিয়েছেন এলিজা বিনতে এলাহী। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন ঘুরে ঘুরে দেখছেন, সংগ্রহ করছেন সেখানকার প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের ইতিহাস-ঐতিহ্য এবং তথ্য-উপাত্ত। সেই সুবাদে সিলেট অঞ্চলে এসেছেন বহুবার। সিলেটের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন সংরক্ষণ বিষয়ে তিনি বলেন, পুরো সিলেট বিভাগের যেমন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য রয়েছে তেমনি রয়েছে ঐতিহাসিক গুরুত্ব।  যুগে যুগে বিশ্ব পরিব্রাজক, বণিক, ধর্ম প্রচারকগণ এই পুণ্য ভূমিতে এসেছেন, বসবাস করেছেন। এই অঞ্চলের সুপ্রাচীন ইতিহাস লিখে গেছেন। আজ থেকে প্রায় ৫০০ বছর আগে বিশ্ব পরিব্রাজক ইবনে বতুতার লিখিত বক্তব্যেও এই ভূখণ্ডের বর্ণনা পাই আমরা।

শুধু সুপ্রাচীন ইতিহাস থাকলেই হবে না। সেই অতীত সংরক্ষণ ও প্রচার করতে হবে। শুধু সিলেট নয় পুরো ৬৪ জেলা ভ্রমণকালে আমি অবহেলার চিত্র পেয়েছি। আমাদের অনেক প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন শুধু মাত্র সংরক্ষণের অভাবে নষ্ট হয়ে গেছে। সিলেট জেলারও অনেক প্রাচীন নিদর্শন নষ্ট হয়েছে পরিচর্যার অভাবে । যেগুলো টিকে রয়েছে সেগুলোও যত্নে নেই। 

শহরের কেন্দ্রে ক্বীন ব্রিজ, শহর থেকে কিছুটা দূরে জৈন্তা রাজবাড়ি, মেগালিথ স্তম্ভ গুলোর চেহারা দেখলেই বলে দেয়া যায় ইতিহাস সংরক্ষণে আমাদের উদাসীনতার কথা। প্রত্নতাত্ত্বিক ও ঐতিহাসিক স্থাপত্য গুলো সংরক্ষণের মাধ্যমে একদিকে যেমন  আমাদের সুপ্রাচীন ইতিহাসকে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব, অন্যদিকে হেরিটেজ ট্যুরিজমের বিকাশের মাধ্যমে তরুণ তরুণীদের পর্যটন শিল্পে যুক্ত করার জন্য অনুপ্রেরণা যোগাতে সহায়ক হবে। ফলাফল সরূপ একই সাথে সমাজে পর্যটন শিল্পের বিকাশ হবে ও তরুণ পর্যটন উদ্যোক্তা তৈরি হবে, অর্থনৈতিক চাকা সচল হবে। 

কিন্তু তার জন্য অবশ্যই সংরক্ষণ ও প্রচার-প্রচারণা প্রয়োজন যাতে দেশী বিদেশি পর্যটক সিলেট জেলা ভ্রমণে আগ্রহী হয় ।

প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর আঞ্চলিক পরিচালকের কার্যালয় চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের আঞ্চলিক পরিচালক এ কে এম সাইফুর রহমান বলেন, এখন পর্যন্ত সিলেট বিভাগে সংরক্ষিত পুরাকীর্তি ১৭টি। এর বাহিরে আমরা আরও কয়েকটি স্থাপনাকে সংরক্ষণ করার জন্য মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ করেছি। এরমধ্যে সিলেট জেলার গোলাপগঞ্জ উপজেলার দেওয়ানের পুল একটি। সিলেট অঞ্চলে আরও অনেক স্থাপনা রয়েছে সেগুলোর ইতিহাস ঐতিহ্য রয়েছে। আমরা পর্যায়ক্রমে সেগুলো সংরক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করব। সিলেট অঞ্চলে আঞ্চলিক কার্যালয় নেই, তবে আশা করছি শীঘ্রই সেখানে আঞ্চলিক কার্যালয় স্থাপন করা হবে। তাছাড়া আমাদের লোকবল সংকট রয়েছে, সিলেট অঞ্চলে আমরা আরও লোকবল বৃদ্ধি করব। সেগুলো সংরক্ষণ করা হয়েছে সেগুলো যেন ঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা হয় ও এখনও সেগুলো সংরক্ষণ হয়নি সেগুলোকে খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে পুরার্কীতি হিসেবে সংরক্ষণ করা হবে।

Sangbad Sarabela

সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.