× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা জামায়াত বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

হারিয়ে যাচ্ছে প্রকৃতির কারিগর বাবুই পাখির বাসা

মোঃ সোহাগ আরেফিন, গুরুদাসপুর (নাটোর) প্রতিনিধি।

২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮:০৪ পিএম

ছবিঃ সংগৃহীত

বিলুপ্তির পথে তালের পাতায় মোড়ানো নিপুণ কারুকার্য খচিত বাবুই পাখির বাসা। কালের আবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে তালের পাতায় মোড়ানো নিপুণ কারুকার্য খচিত বাবুই পাখির বাসা। পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে বাবুই পাখির বাসা অনেকটা বিলীন হতে চলেছে। অথচ আজ থেকে প্রায় ১৫-২০ বছর আগেও গ্রাম-গঞ্জের মাঠ-ঘাটের তাল, সুপারিসহ বিভিন্ন গাছে দেখা যেত এদের বাসা।

বাবুই পাখির বাসা শুধু শৈল্পিক নিদর্শনই নয়, মানুষকে স্বাবলম্বী হতে উৎসাহিত করতো। কবি রজনী কান্ত সেনের ভাষায়, ‘বাবুই পাখিরে ডাকি বলিছে চড়াই, “কুঁড়েঘরে থেকে করো শিল্পের বড়াই। আমি থাকি মহাসুখে অট্টালিকার ’পরে, তুমি কত কষ্ট পাও রোদ, বৃষ্টি-ঝড়ে” মানুষকে মানবিকভাবে জাগ্রত করার জন্য কবি রজনীকান্ত সেন এই কবিতাটি রচনা করেছিলেন। তার এই কালজয়ী কবিতাটি এখনোও মানুষের মুখে মুখে।

সরেজমিনে জানা যায়, গুরুদাসপুর উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের গ্রাম-গঞ্জে এখন আর আগের  মতো চোখে পড়ে না বাবুই পাখি ও তার তৈরি দৃষ্টিনন্দন ছোট্ট বাসা তৈরির নৈসর্গিক দৃশ্য। বাবুই পাখির নিখুঁত বুননে এ বাসা টেনেও ছেঁড়া কষ্টকর। প্রতিটি তালগাছে ১শ’ থেকে ১২০টি বাসা তৈরি করতে সময় লাগে ১০-১২ দিন। খড়, কুটা, তালপাতা, ঝাউ ও কাশবন ও লতা-পাতা দিয়ে বাবুই পাখি উঁচু তালগাছে বাসা বাঁধে। শুধু তালগাছেই নয় বরং  নারকেল, সুপারিসহ নানান দীর্ঘ বৃক্ষেই বাসা বাঁধে বাবুই। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এসব গাছ কমে যাওয়ায় আবাসন নিয়ে চরম সংকটে পড়েছে এই পাখি।

সেই বাসা দেখতে যেমন আকর্ষণীয়, তেমনি অনেক মজবুত। প্রবল ঝড়েও তাদের বাসা ভেঙে পড়ে না। পুরুষ বাবুই পাখি বাসা তৈরির পর সঙ্গী খুঁজতে যায় অন্য বাসায়। সঙ্গী পছন্দ হলে স্ত্রী বাবুইকে সাথী বানানোর জন্য পুরুষ বাবুই নিজেকে আকর্ষণীয় করতে খাল, বিল ও ডোবার পানিতে গোসল করে গাছের ডালে ডালে নেচে বেড়ায়।

চমৎকার বাসা বুনে বাস করায় এ পাখির পরিচিতি বিশ্বজোড়া। বাবুই পাখির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো, রাতের বেলায় ঘর আলোকিত করতে জোনাকি পোকা ধরে নিয়ে বাসায় রাখে এবং সকাল হলে ছেড়ে দেয়। প্রজনন সময় ছাড়া অন্য সময় পুরুষ ও স্ত্রী বাবুই পাখির গায়ে পিঠে তামাটে কালো বর্ণের দাগ হয়। নিচের দিকে কোন দাগ থাকে না। ঠোঁট পুরো মোসাকার ও লেজ চৌকা। তবে প্রজনন ঋতুতে পুরুষ পাখির রং হয় গাঢ় বাদামি। অন্য সময় পুরুষ ও স্ত্রী বাবুই পাখির পিঠের পালকের মতই বাদামি হয়।

ধারাবারিষা উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক রোকনুজ্জামান বলেন , ‘ছোটবেলায় দেখতাম রাস্তার দু’পাশে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে থাকা তালগাছগুলোর মধ্যে অনেক বাবুই পাখির বাসা ছিল। কিন্তু এখন বাবুই পাখির বাসা আর দেখা যায় না। বাবুই পাখির বাসাটি আজ হারিয়ে যেতে বসেছে। আমাদের পুরো এলাকাজুড়ে মাত্র একটি তালগাছে তারা বাসা বেঁধেছে। এক সময় তাদের কিচিরমিচির শব্দে সকালবেলা আমাদের ঘুম ভাঙতো ।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্মকর্তা মোঃ রোকনুজ্জামান   বলেন, বাবুই পাখি প্রকৃতির এক নিখুঁত কারিগর, বৈরী আবহাওয়া ও পরিবেশের কারণে অনেক প্রাণি হারিয়ে যাচ্ছে। বাবুইও আবাসন  হারিয়ে বিলুপ্তির পথে চলে যাচ্ছে । এছাড়াও অসংখ্য প্রজাতির পশু, পাখি, কীট-পতঙ্গ আমাদের পরিবেশ থেকে বিলুপ্ত হয়েছে। অনেকগুলো বিলুপ্তির পথে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সালমা আক্তার বলেন, নিপুণ কারুকার্য খচিত বাবুই পাখির বাসা বৈরী আবহাওয়া ও তাদের বাসাসনের গাছ নির্বিঘ্নে উজারে ফলে এই পাখি বর্তমানে বিলুপ্তির পথে। আমাদের সকলের সচেতনতার অবলম্বনের মাধ্যমে আবাসনের গাছ রোপনের মাধ্যমে কিছুটা হলেও তাদের বিলুপ্তির পথ থেকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব। আমরা সবাই মিলে এই পরিবেশ রক্ষার কাজে এগিয়ে আসি।

Sangbad Sarabela

সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.