× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

চাঁদের বুকে মানুষের প্রথম পায়ের চিহ্ন, আজ এই দিনে

রণশি মান্নান

২১ জুলাই ২০২২, ০৪:৩৪ এএম

চাঁদের কথা বলতেই সবার আগ্রহ জাগে চাঁদকে জানার।  চাঁদের বুড়ির অনেক গল্প শুনেছি নানী দাদীর কাছে। গভীর রাতে প্রিয় মা জননী ঘুম পাড়ানোর ছড়া শুনাতো। আয় আয় চাঁদ মামা খোকার কপালে টিপ দিয়ে যায়। মানব জাতির চাঁদ জয় করা ছিলো স্বপ্নের মত। তা বাস্তবে রুপ নিলো ১৯৬৯ সালে ২০ জুলাই আজ এই দিনে,স্মরনীয় দিন। চাঁদ কি? কিভাবে এর জন্ম এটা হয়তো অনেকের অজানা। আজ থেকে প্রায় সাড়ে ৪ বিলিয়ন বছর আগের কথা তখন থেকে মাত্র অল্প সময়ের আগে পৃথিবীর জন্ম হয়েছে বলে ধারনা করা হয়। তখন পৃথিবীর সাথে এমন ঘটনা ঘটে যা আমাদের পৃথিবীকে বদলিয়ে দিয়েছিলো। মহাকাশ থেকে আসতে থাকা একটি গ্রহ পৃথিবীকে তচনছ করার মতলবে ছিলো। এর আকার মঙ্গল গ্রহের মতই ছিলো। এর গতি ছিলো প্রতি সেকেন্ডে ১৫ হাজার কিঃ মিঃ।  খেয়া নামের এই গ্রহের সাথে আমাদের পৃথিবীর সংর্ঘয হয়। এই সংঘর্যের জন্য হাজার হাজার হালকা পর্দাথের টুকরো হয়ে যায়,টুকরো গুলো চলে যায় মহাশূন্যে। গ্রেবেটির জন্য টুকরো গুলো একত্রিত হয়ে একটি বড় পিন্ডের তৈরি করে। আর সেই পিন্ডটি তখন থেকেই পৃথিবীর চার পাশে ঘুরতে থাকে। এই পিন্ডটি অন্য কিছু নয়-এটিই আমাদের পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহ চাঁদ। আজও পৃথিবীর চারপাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে। চাঁদের ব্যাস ৩ হাজার ৭৪ কিঃমিঃ। পৃথিবীর তুলনায় চাঁদের আকার ২৭%। আমাদের পৃথিবীর মধ্যে ৯টি চাঁদ জায়গা পাবে। এটি সৌর জগতের সবচেয়ে বড় প্রাকৃতিক উপগ্রহ। চাঁদের মাটিতে সর্বপ্রথম ১৯৫৯ সালে ১৩ সেপ্টেম্বর স্পর্শ করা হয়েছিলো। সেটি সোভিয়েত ইউনিয়নের মিশন উইনার-২। প্রথম বার মানুষের তৈরি কোন যন্ত্র চাঁদের মাটি র্স্পশ করে। তার দশ বছর পর আজ এই দিনে নাসা এ্যাপেলো-১১ তিনজন নভোচারী সহ চাঁদের মাটিতে সর্ব প্রথম যাত্রা করে,প্রথম মানব তিন নভোচারীর একজন চাঁদের মাটিতে ডান পা রাখেন ইতিহাসের অমর সঙ্গী নীল আর্মষ্টং।

আমেরিকার গবেষণা সেন্টার নাসায় সেদিন আনন্দ আর উচ্ছাস। ১৯৬৯ সালের ২০ জুলাই,পৃথিবীর ইতিহাসে একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। সেদিন সারা দুনিয়ার মানুষের নজর ছিলো চাঁদের দিকে। কারণ সেদিন প্রথম বারের মত মানুষ পৃথিবী থেকে ৩ লক্ষ ৮৪ হাজার কিঃমিঃ দূরে চাঁদের মাটিতে পা রাখতে যাচ্ছে। প্রথম বারের মত সেদিন চাঁদে গিয়ে ছিল ৩জন এস্টোনস,এরা হলো নিল আমস্টং,অলড্রিন ও মাইকেল কলিন্স। মিশনটির নাম ছিলো এ্যাপেলো-১১। ১৯৬৯ থেকে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত মোট ৯টি মিশনে মোট ২৪ জন নভোচারী চাঁদে যাওয়ার উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। বারজন এস্টোন চাঁদের মাটিতে বিচরণ করার সৌভাগ্য হয়েছিলো,তারা সবাই আমেরিকান। মিশন গুলো ছিলো এ্যাাপেলো-১২,১৩,১৪,১৫,১৬,১৭। এর পর থেকে মানুষকে আর চাঁদে পাঠানো হয়নি। এ্যাপোলো-১১ নামক চন্দ্রযানে তিনজন এস্টোন চাঁদের মাটিতে প্রথম পা রাখেন। সেখানে ২১ ঘন্টা ৩৬মিঃ অবতরণ করে সফল ভাবে পৃথিবীতে ফিরে আসে ২৪ জুলাই,ল্যান্ড হয় প্রশান্ত মহাসাগরে। তারা চাঁদ থেকে ২৯৬ টুকরা পাথর ও কয়েকশ কেজি মাটি বালু সঙ্গে এনেছিলো। যা গবেষণা করে অনেক তথ্য পাওয়া গেছে। চাঁদের মধ্যাকর্ষণ ওজন পৃথিবী থেকে অনেক কম। পৃথিবীকে চাঁদ একবার প্রদক্ষিণ করতে সময় লাগে ২৭ দিন। এজন্য আমরা চাঁদের একদিক দেখতে পাই। অন্য দিকে চাঁদের একদিন পৃথিবীর ১৪ দিনের সমান। চাঁদের নিজস্ব কোন আলো নেই,সূর্ষের আলোয় পৃথিবী আর চাঁদ আলোকিত হয়। র্সূষ্য যদি আলো দেয় বন্ধ করে দেয় তাহলে চাঁদকে আর আমরা কোনদিন দেখতে পাবো না।

 পৃথিবীতে মানুষের অসিস্ত তর্কসাপেক্ষে পাওয়া যায় ৩ লক্ষ বছর আগে। মানুষ চাঁদে পা রেখেছে মাত্র ৫০ বছর আগে। আজ থেকে ৫১ বছর আগে এই দিনে সারা পৃথিবীর মানূষ টিভির সামনে বসে লাইফ দেখছিল,মানুষের চাঁদের মাটিতে প্রথম আগমনী দুর্দান্ত অভিযানটি। সব পরীক্ষা নিরীক্ষার   পর ১৯৬৯ সালে ১৬ জুলাই রকেট এ্যাপেলো-১১ ফ্লোরিডার ক্যাপক্যাবেল লঞ্চ প্যাড থেকে লঞ্চ করা হয়। লঞ্চ করার পর প্রায় ৫,৫০০ কিঃমিঃ প্রতি ঘন্টায় গতি নিয়ে এ্যাপেলো ১১ এগিয়ে যায় চাঁদের দিকে। এভাবে যেতে যেতে এ্যাপেলো ১১ এক সময় পৃথিবীর বায়ুসীমা ক্রস করে মহাশূন্যের সীমানায় চলে যায়। তখন পৃথিবী থেকে নাসার কন্টোল রুম থেকে এ্যাপেলো  ১১ এর সাথে ২৪ ঘন্টা যোগাযোগ রাখছিল। চাঁদে গমন কারী তিনজন এস্টোনের সাথে সকল কথাবার্তা নাসার কন্টোল রুমে রের্কড করা হয়ে ছিল। রেডিও টিভিতে লাইফ দেখানো হচ্ছিল পুরো মিশনটাই। ৪ দিন ৫,৫০০ কিঃমিঃ গতি নিয়ে চলার পর এ্যাপেলো-১১ চাঁদের খুব কাছাকাছি চলে যায়। কয়েক মিনিটের মধ্যে এ্যাপেলো-১১ এর মডেল ঈগল নামে যানটি,যে বিমানে তারা তিনজন ছিল-তার মানে সেটি চাঁদে ল্যান্ড করার জন্য প্রস্থুত ছিলো। কিন্তু কোন কারণ ছাড়াই হঠাৎ করে অজানা কোন কারণে ঈগল যানটি নির্ধারিত সময়ের ৪/৫ সেঃ আগেই তার অবস্থানে পৌছে যায়। যেখানে ঈগল যানটি ল্যান্ড করার কথা ছিল, তা না করে যান ঈগল এমন এক জায়গায় ল্যান্ড করতে যাচ্ছে, যার আইডিয়া ছিলো না নাসার কন্টোল রুমে বসে থাকা বিজ্ঞানীদের না আইডিয়া ছিলো এ্যাপেলো-১১ থাকা এস্টোনদের। এদিকে রকেট এবং চাঁদের দূরত্ব কিঞ্চিত কিঃমিঃ ছিলো। যা অনেক বড় একটি বিপদ সংকেত। যানটি এমন একটি ল্যান্ডিং হতে যাচ্ছে যা আমরা কেউ জানি না। এই দিকে এই বিপদের মধ্যে আরেকটি বিপদের সম্মীক্ষণ হয়। সেটি হলো বিমানে থাকা কম্পিউটারটি কোন কারণ ছাড়াই এ্যারো দেখাচ্ছিল। যার জন্য বিমানের অটোমেটিক সিসটেমটা বন্ধ হয়ে যায়। অন্য দিকে বিমানের ল্যান্ডিংএর সময়টাও চলে এসেছে। নিল আমষ্টং মাথা ঠান্ডা রেখে বিমানের কন্টোল নিজ হাতে তুলে নিলেন। এমন জায়গায় বিমানটি ল্যান্ডিং করা হবে যাতে করে বিমানটি ও আমরা উভয়ই বেঁচে যাই। ২০ জুলাই রাত্রি ৮.১৭ মিঃ যান ইগল সফল ভাবে চাঁদের মাটিতে অবতরন করে। আমস্টং প্রথম মানব হিসেবে যান ঈগল থেকে চাঁদের মাটিতে তার ডান পা রাখেন,চোখে মুখে তার আনন্দ উল্লাস এবং উচ্চারন করেন” একজন মানুষের জন্য এটা ক্ষুদ্র ধাপ হলেও মানব জাতির জন্য এটি একটি বড় পদক্ষেপ। আর্মষ্টং যে জায়গাটি পছন্দ করে ছিলেন। নাসা সে জায়গাটির নাম দিয়ে ছিল ট্রাইটাঈেল স্পেস। আমস্টং আর অলড্রিন চাঁদের মাটিতে প্রথম মানব হিসেবে পা রেখে ইতিহাস গড়েন। মনে হল মিশন সাকসেস ফুল,না ঘটনা ঘটলো অন্য রকম, আরেকটি বিপদ সংকেত-যারা টিভির সামনে লাইফ দেখতে ছিলো তাদের সাথে নাসা ও এস্টোনদের সাথে ৩/৪মিঃ হঠাৎ করে লাইন ডিসকানেক্ট হয়ে যায়। এই ৩মিনিটে নাসার সাথে আমস্টংদের এমন কি কথা হয়েছিল যে,সাধারন মানুষের কাছে তা গোপন করতে হবে। আসল ঘটনাটি ঘটে কিছুক্ষণ পরে। সারা জীবনের জন্য প্রায় চাঁদে আটকে গিয়ে ছিলো তারা তিন জন। সমস্যাটি হলো চাঁদে তখন তাপমাত্রা ছিল খুবই কম। যার জন্যে বিমানের ফিনাইল পাইপের তাপমাত্রা বেড়ে যায়। ফলে বিমানের জ¦ালানী বরফ হয়ে জমতে থাকে। পরিস্থিতি এমন হতে থাকে যে নাসা জোর করেই বলতে চায় যে বিমানটি অতি শীঘ্রই খালি করে দিন। কারণ এই পাইপের তাপ মাত্রা এতই বেশি ছিলো যে কোন সময় বিমানটি  ব্রাস্ট হতে পারে। ভাগ্য ভালো তাদের,সৃষ্টিকর্তা সহায় ছিলো বলে অল্প সময়ের পরে ফিনাইল পাইপের তাপমাত্রা কমতে শুরু করে। তার কিছুক্ষণ পর ফিনাইল পাইপের জমাট বাধা বরফ গলতে শুরু করে। হয়তো বিধাতা তাদের বিপদ চাইছিলেন না। এর মধ্যে আরেকটি সমস্যা দেখা দেয়। হঠাৎ বিমানের কন্টোল রুমের ্একটি সুইচ ভেঙ্গে পড়ে যায়। প্রায় ৬ঘন্টা চেষ্টা করেও কোন কাজ করতে পারলো না আমস্টং।  এরি মধ্যে অলড্রিন একটি ভাঙ্গা কলম ডুকিয়ে দেয় সুইচ ভাঙ্গা জায়গাটিতে। সাথে সাথেই বিমানের ইঞ্জিন ঠিক হয়ে যায়। পুরো বিমানের সার্কিট পাওয়ার কাজ করতে থাকে। বন্ধ হয়ে যাওয়া ইউনিটটি চালু হয়ে যায় কাকতলীয় ভাবে। যে কাজটি ৬ ঘন্টায় ঠিক হয়নি তা ভাঙ্গা কলম দিয়ে ঠিক হয়ে যায়। এখন সময় হলো তাদের ঘরে ফেরার।

কলাম্ভিয়া বিমান,যে বিমানটি দিয়ে তারা পৃথিবীতে ফেরার কথা। এই বিমানের রয়েছে দুটি মডেল। একটি মডেলে এস্টোনরা থাকে,অন্যটিতে চাঁদে যাওয়ার জন্যে যাবতীয় জিনিস পত্র। এই মডেলটি পৃথিবীর বায়ু মন্ডলের সীমানায় প্রবেশের সাথে সাথে আলাদা ভাগ হয়ে যাওয়ার কথা এবং দুটি বিপরীত দিকে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ঘটনা ঘটলো উল্টো। কলাম্ভিয়া বিমানটি দুটি ভাগ হয়ে একদিকে যেতে লাগল। হঠাৎ যদি একটি আরেকটির সাথে লেগে য়ায়, তাহলে সাথে সাথেই ব্রাস্ট হয়ে যাবে। ভাগ্য ভালো ছিল বলে তারা ২৪ জুলাই প্রশান্ত মহাসাগরে সফলভাবে ল্যান্ডিং করে। তার পর ১৫দিন তাদেরকে হোমকোয়ান্টাইনে রাখা হয়েছিলো। চাঁদ থেকে কোন ভাইরাস তাদের শরীরে সাথে আসলে যাতে পৃথিবীতে ছড়িয়ে না পড়ে। সেদিন থেকে পৃথিবীর মানুষের কাছে,চাঁদ জয় করে সুপার হিরো হয়ে উঠলো আমস্টং,অলড্রিন ও মাইকেল কলিন্স। চাঁদ থেকে তারা বালু,পাথর নিয়ে এসেছিল যা এখনও পরীক্ষা নিরীক্ষা চলছে। এখন মানুষ চাঁদে স্থায়ী ভাবে থাকার পরিকল্পনা করছে। এবং এখন থেকেই চাঁদের ভুমি বিক্রী শুরু হয়েছে।  নাসা সহ আরো কয়েকটি দেশ চাঁদের বুকে নানা পরীক্ষা নিরীক্ষা চালাচ্ছে। এইদিক দিয়ে চীন এগিয়ে। পৃথিবী থেকে ৩ লক্ষ ৮৪ হাজার কিঃমিঃ দূরে চাঁদকে জয় করেছে মানব জাতি। শুরু হয়েছে মঙ্গল গ্রহ সহ অন্যান্য গ্রহের উপর পরীক্ষা নিরীক্ষা। চাঁদের মাটিতে প্রথম মানুষের পা রাখার এই দিনটি পৃথিবীর মানুষের কাছে স্মরনীয় হয়ে থাকবে সারা জীবন। শুভদিন ২০ জুলাই ১৯৬৯ সালটি।


Sangbad Sarabela

সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.