ফিলিস্তিনে ইসরায়েল-হামাস বিরোধের নতুন অধ্যায় শুরু হয়েছে। সম্প্রতি হামাস, যাদের বিরুদ্ধে ইসরায়েল ব্যাপক সামরিক অভিযান চালিয়েছে, তারা তিন ইসরায়েলি নাগরিককে মুক্তি দিয়েছে। আজ (১ ফেব্রুয়ারি) হামাসের যোদ্ধারা রেডক্রসের মাধ্যমে মুক্তি দেয় ইয়ার্দেন বিবাস (৩৪), ওফার কালডেরন (৫৩) এবং কেইথ সিগেল (৬৫)-কে। একই সময়, এই মুক্তির খবরের পাশাপাশি ইসরায়েলের কারাগার থেকে ১৮০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে, যাদের মধ্যে অনেকেই যাবজ্জীবন বা দীর্ঘ কারাদণ্ডে দণ্ডিত।
এই ঘটনাটি ঘটছে এমন এক সময়ে যখন গাজার খান ইউনিসে গত বৃহস্পতিবার হামাস আরো ৮ জন জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছিল। তবে সে সময় ব্যাপক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছিল। তবে আজ, হামাস নতুন তিনজনকে মুক্তি দিলো সুশৃঙ্খলভাবে, যা যুদ্ধবিরতির এক সুষম লক্ষণ বলে বিবেচিত হচ্ছে। তবে, এই মুক্তির পরও অনেক প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে—হামাসের অধীনে আটক ইসরায়েলি নাগরিকদের মুক্তির পর, ইসরায়েল কি আরও ফিলিস্তিনি বন্দীদের মুক্তি দেবে?
এছাড়া, মুক্তি পাওয়া ইয়ার্দেন বিবাসের জীবনের এক মর্মান্তিক দিক সামনে এসেছে। বিবাসের স্ত্রী এবং দুই সন্তানকেও হামাসের যোদ্ধারা গাজায় নিয়ে এসেছিল, তবে তারা ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত হয়। যদিও ইসরায়েল এই মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেনি, তবে এ পরিস্থিতির মধ্যে ইয়ার্দেন বিবাসের মুক্তির পর ধারণা করা হচ্ছে যে তার স্ত্রী ও সন্তানরা নিহত হয়েছেন। এসব মৃত্যুর খবর শিগগিরই আরো স্পষ্ট হতে পারে, বিশেষত যদি হামাস চুক্তির অংশ হিসেবে মরদেহগুলো ফিরিয়ে দেয়।
এদিকে, গাজার রাফা সীমান্ত ক্রসিংটি আজ পুনরায় খুলে দেওয়ার কথা জানানো হয়েছে। এটি ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ ও দীর্ঘ প্রতীক্ষিত পদক্ষেপ, কারণ গত বছরের অক্টোবর থেকে ইসরায়েল সেনারা ক্রসিংটি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিয়েছিল, যার ফলে ফিলিস্তিনিরা গাজা থেকে বের হতে পারছিল না। সীমান্ত খুলে দেওয়ার মাধ্যমে অসুস্থ শিশুদের উন্নত চিকিৎসার জন্য অন্য দেশে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। চিকিৎসা সেবা ও অন্যান্য জরুরি সাহায্যও প্রবাহিত হতে শুরু করেছে, যা গাজার অভ্যন্তরে মানবিক সংকটকে কিছুটা সহনীয় করবে।
এই চুক্তি এবং সীমান্ত খুলে দেওয়া প্রক্রিয়া একদিকে শান্তির প্রতীক হতে পারে, তবে অন্যদিকে এটি বৃহত্তর রাজনৈতিক সংকটের অংশ হিসেবে আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছে। ফিলিস্তিনিদের অধিকার, স্বাধীনতা এবং মানবিক সহায়তার বিষয়গুলো এখনও নিষ্পত্তি হওয়া বাকি। ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে চুক্তির পরবর্তী ধাপ কী হবে, তা নির্ধারণ করবে এই সংকটের ভবিষ্যত। যুদ্ধবিরতি বা সমঝোতা যদি দীর্ঘস্থায়ী হয়, তবে আঞ্চলিক শান্তির পথে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারে।