ইউরোপের প্রায় সব দেশেই মুসলিমদের প্রতি ঘৃণামূলক অপরাধ উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে বলে জানিয়েছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের নির্বাহী শাখা ইউরোপিয়ান কমিশনের মুসলিমবিদ্বেষ প্রতিরোধ বিষয়ক সমন্বয়ক ম্যারিয়ন লালিসে। সম্প্রতি তুরস্কভিত্তিক আন্তর্জাতিক সম্মেলন ‘আন্তালিয়া ডিপ্লোমেসি ফোরামে’ অংশ নিতে গিয়ে দেশটির পর্যটন নগরী আন্তালিয়ায় উপস্থিত ছিলেন তিনি। সেখানে তুরস্কের রাষ্ট্রীয় বার্তাসংস্থা আনাদোলু এজেন্সিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এই মন্তব্য করেন।
ম্যারিয়ন জানান, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে— বিশেষত ৭ অক্টোবর ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ শুরুর পর— ইউরোপজুড়ে মুসলিমদের বিরুদ্ধে ঘৃণাভিত্তিক অপরাধ এবং বিদ্বেষের ঘটনা বহুগুণে বেড়েছে। তার ভাষায়, “২০২৩ সালের অক্টোবরের পর ইউরোপে মুসলিমদের লক্ষ্য করে বিদ্বেষমূলক অপরাধের হার ক্রমবর্ধমান। বিশেষ করে জার্মানিতে এ হার বেড়েছে ১৪০ শতাংশ।”
তিনি আরও বলেন, “আপনার ধর্ম, রাজনৈতিক মতাদর্শ বা দৃষ্টিভঙ্গি থাকতেই পারে, কিন্তু এর মানে এই নয় যে সেই দৃষ্টিভঙ্গির কারণে একটি নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর প্রতি ঘৃণা ছড়ানো যেতে পারে— যারা ইউরোপীয় সমাজেরই অংশ।” ইউরোপে বর্তমানে যে ঘৃণার সুর তীব্রতর হয়েছে, তা শুধু কথার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং তা রূপ নিচ্ছে বাস্তব হামলা ও হুমকিতে।
ম্যারিয়ন লালিসে আশাবাদী হয়ে বলেন, ইউরোপের অধিকাংশ নাগরিক এখনো মুসলিমদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করেন না। ইউরোপ যে মানবাধিকার, সহনশীলতা ও বহুত্ববাদের ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে আছে, তা এখনও যথেষ্ট শক্তিশালী। তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, এই ভিত্তিকে আরও মজবুত রাখতে হলে সংবাদমাধ্যম এবং সমাজের নানা স্তরের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
তার মতে, সত্য প্রকাশে সাংবাদিকদের আরও এগিয়ে আসতে হবে এবং সংবাদ কাঠামোতে বৈচিত্র্য নিশ্চিত করতে হবে। তিনি বলেন, “সংবাদমাধ্যমের যেসব নির্বাহী রয়েছেন, তাদেরও উচিত হবে এমন লেখা বা কনটেন্ট প্রকাশে সতর্ক থাকা, যা মুসলিমবিদ্বেষ উসকে দিতে পারে।”
এই মুহূর্তে ইউরোপজুড়ে মুসলিমবিরোধী কথাবার্তা, প্রচার এবং রাজনৈতিক ভাষ্যগুলো যেভাবে শক্তিশালী হয়ে উঠছে, সেটিকে রুখতে সম্মিলিত প্রচেষ্টা দরকার বলেও মন্তব্য করেন ইউরোপীয় কমিশনের এই কর্মকর্তা।