বিখ্যাত মার্কিন সাময়িকী টাইম ম্যাগাজিনে একটি মুখবন্ধ(ভূমিকা/সূচনা) লিখেছেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ফার্স্টলেডি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন। সেখানে তিনি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস সম্পর্কে বিশদ মন্তব্য করেছেন। হিলারির লেখায় ইউনূসকে একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের সম্ভাব্য রূপকার হিসেবে তুলে ধরা হয়।
লেখায় হিলারি ক্লিনটন বলেন,গত বছর ছাত্র-নেতৃত্বাধীন এক অভ্যুত্থানে বাংলাদেশের কর্তৃত্ববাদী প্রধানমন্ত্রীর পতনের পর, দেশের নেতৃত্বে এগিয়ে আসেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস—যিনি বহু আগে থেকেই বিশ্বব্যাপী সুপরিচিত এক মানবিক নেতা। ক্ষুদ্রঋণের মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, বিশেষ করে নারীদের অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করার উদ্দেশ্যে গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠার কথাও স্মরণ করেন তিনি। হিলারি লেখেন, এই ব্যাংকের মাধ্যমে ইউনূস লাখ লাখ দরিদ্র, যার মধ্যে ৯৭ শতাংশই নারী, তাদের নিজস্ব ব্যবসা গড়ে তুলতে এবং পরিবারকে টিকিয়ে রাখতে সহায়তা করেছেন। এই উদ্যোগ নারীদের মর্যাদা পুনরুদ্ধারে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ।
হিলারি ক্লিনটন আরও জানান, ড. ইউনূসের সঙ্গে তার প্রথম দেখা হয়েছিল তখন, যখন ইউনূস তৎকালীন গভর্নর বিল ক্লিনটন ও হিলারিকে সহায়তা করতে যুক্তরাষ্ট্রের আরকানসাস সফর করেছিলেন। সেই থেকে ইউনূসের কাজের প্রভাব তিনি বিশ্বের নানা প্রান্তে প্রত্যক্ষ করেছেন বলে জানান হিলারি। তার ভাষায়, আমি দেখেছি কিভাবে ইউনূসের কাজ মানুষের জীবন বদলে দিয়েছে, সমাজকে উন্নতির দিকে নিয়ে গেছে এবং নতুন করে আশার জন্ম দিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ড. ইউনূস বর্তমানে বাংলাদেশকে নিপীড়নের ছায়া থেকে বের করে এনে মানবাধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং একটি ন্যায়সঙ্গত, জবাবদিহিমূলক ও মুক্ত সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখছেন। হিলারির মতে, তিনি কেবল একজন অর্থনীতিবিদই নন, বরং একজন জাতীয় পথপ্রদর্শক।
প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাত্র-গণআন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করে দেশত্যাগ করেন। পরদিন, ৬ আগস্ট রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত করেন এবং শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে মনোনীত করেন। তিনি ৮ আগস্ট আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
বিশ্বব্যাপী ড. ইউনূসের গ্রহণযোগ্যতা ও প্রভাব এরইমধ্যে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি পেয়েছে। ২০২৪ সালে তিনি বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী ৫০০ জন মুসলিমের একজন হিসেবে নির্বাচিত হন এবং টাইম ম্যাগাজিনের ১০০ জন প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বের তালিকায়ও অন্তর্ভুক্ত হন।