যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি হলেও ইরান কখনো তাদের ইউরেনিয়ামের মজুদ পুরোপুরি নিঃশেষ করবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে তেহরান। দেশটির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) বার্তাসংস্থা রয়টার্স-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, এটি ইরানের ‘রেড লাইন’, যা সুপ্রিম নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি কর্তৃক বাধ্যতামূলকভাবে নির্ধারিত এবং এই বিষয়ে কোনো ধরনের ছাড় দেওয়া হবে না।
তিনি বলেন, ইরানের রেড লাইন হলো— ইউরেনিয়াম সেন্ট্রিফিউজগুলো ধ্বংস না করা, একযোগে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ বন্ধ না করা এবং ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তির আগের ইউরেনিয়ামের চেয়েও কম পরিমাণে নামিয়ে আনা না। এই বিষয়গুলো ইরানের সার্বভৌমত্ব ও প্রতিরক্ষা নীতির সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত।
উল্লেখ্য, ২০১৫ সালের বহুপাক্ষিক পারমাণবিক চুক্তি থেকে ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্র একতরফাভাবে সরে যাওয়ার পর এই ইস্যুতে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বাড়তে থাকে। সম্প্রতি উমানে অনুষ্ঠিত এক গোপন বৈঠকে ইরান মনে করে, যুক্তরাষ্ট্র চায় না ইরান তার সব পারমাণবিক কার্যক্রম একেবারে বন্ধ করে দিক। ইরানের কর্মকর্তার মতে, এ বিষয়টি ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে আলোচনার জন্য একটি “সাধারণ ভিত্তি” তৈরি করতে পারে।
তবে, ইরান তাদের মিসাইল কর্মসূচি নিয়েও কোনো আলোচনা করতে নারাজ বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে। দেশটির মতে, এটি জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্ন, যা কোনো আন্তর্জাতিক আলোচনার বিষয় হতে পারে না।
এদিকে তেহরান শুক্রবার জানিয়েছে, যদি যুক্তরাষ্ট্র চুক্তি করতে সত্যিই আগ্রহী হয় এবং কোনো অযৌক্তিক বা অতিরিক্ত দাবি না তোলে, তাহলে চুক্তির সম্ভাবনা রয়েছে। তারা আরও জানিয়েছে, পারমাণবিক কর্মসূচি সংক্রান্ত কিছু বিষয় নিয়ে সীমিত ছাড় দেওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও, তার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে অবশ্যই গ্যারান্টি দিতে হবে যে—২০১৮ সালের মতো আবারও চুক্তি থেকে সরে আসবে না।
এ বিষয়ে গত মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক দূত স্টিভ উইটকোফ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স (সাবেক টুইটার)-এ এক পোস্টে বলেন, ইরান যদি চুক্তি করতে চায়, তাহলে তাদের অবশ্যই ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ বন্ধ এবং মজুদ নিঃশেষ করতে হবে।
উল্লেখ্য, গত সপ্তাহে তেহরান ওয়াশিংটনকে জানায় যে, তারা ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণে কিছুটা ছাড় দিতে পারে—তবে সেটি হতে হবে পারস্পরিক সম্মান ও বাস্তবভিত্তিক সমঝোতার মাধ্যমে।