ছবিঃ সংগৃহীত।
দীর্ঘদিন ধরে ফুসফুসজনিত জটিলতায় ভুগে অবশেষে মৃত্যুবরণ করলেন পোপ ফ্রান্সিস। আজ (২১ এপ্রিল) স্থানীয় সময় সকালে ভ্যাটিকানের কাসা সান্তা মার্তায় নিজ বাসভবনে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন খ্রিস্টধর্মের এই আধ্যাত্মিক নেতা। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর।
গত
১৪ ফেব্রুয়ারি নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। ইতালির রোমে একটি বিশেষায়িত হাসপাতালে তার চিকিৎসা চলছিল। তবে শেষ দিকে তার শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি ঘটে।
জীবনের
শেষ প্রান্তে এসেও পোপ ফ্রান্সিস ছিলেন বিশ্বশান্তির একজন অটল কণ্ঠস্বর। মৃত্যুর মাত্র একদিন আগেই তিনি গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের তীব্র নিন্দা জানিয়ে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানান। খ্রিস্টানদের অন্যতম বড় ধর্মীয় উৎসব
‘ইস্টার সানডে’ উপলক্ষে রোববার দেওয়া ভাষণে তিনি বলেন, আমি যুদ্ধরত সব পক্ষের কাছে
আবেদন করছি, অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করুন, জিম্মিদের মুক্তি দিন এবং শান্তির প্রত্যাশী ক্ষুধার্ত মানুষের সাহায্যে এগিয়ে আসুন।
ভ্যাটিকানের
সেন্ট পিটার্স স্কয়ারে জড়ো হওয়া হাজারো ধর্মপ্রাণ মানুষের সামনে তিনি ফিলিস্তিনের গাজা ভূখণ্ডে ইসরায়েলের দীর্ঘ ১৮ মাসব্যাপী হামলার
তীব্র নিন্দা জানান। তার মতে, এই সংঘাতে সবচেয়ে
বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিশু, নারী, বৃদ্ধ ও অসহায় বেসামরিক
মানুষ। তাই যুদ্ধ নয়, শান্তির পক্ষে বারবার জোর দিয়েছেন এই ধর্মগুরু।
পোপ
ফ্রান্সিস বলেন, যুদ্ধ কোনো সমস্যার সমাধান নয়, বরং এটি মানবতাবিরোধী বিপর্যয়ের উৎস। হিংসা হিংসাই জন্ম দেয়, যুদ্ধ কখনো শান্তি বয়ে আনে না। তিনি গাজার মানুষের জন্য মানবিক করিডোর খুলে দেওয়ার আহ্বান জানান, যাতে করে তাদের কাছে খাদ্য, ওষুধ ও জরুরি চিকিৎসা
সরঞ্জাম পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হয়।
২০২২
সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে
রুশ হামলা এবং ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর গাজায়
হামাস ও ইসরায়েলি বাহিনীর
মধ্যে শুরু হওয়া সংঘাত—এই দুটি যুদ্ধকে
তিনি জীবনের শেষ অধ্যায়ে এসে ‘অসম ও অন্যায্য যুদ্ধ’
বলে আখ্যায়িত করেছিলেন।
পোপ
ফ্রান্সিস শান্তি প্রতিষ্ঠায় শুধু বক্তৃতা দিয়েই থেমে থাকেননি। দায়িত্ব গ্রহণের পর ২০১৪ সালে
তিনি এক ঐতিহাসিক উদ্যোগ
নিয়েছিলেন। ইসরায়েলি প্রেসিডেন্ট শিমন পেরেজ এবং ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসকে আমন্ত্রণ জানান ভ্যাটিকানে, যেখানে ধর্ম ও মানবতার নামে
একসঙ্গে শান্তির জন্য প্রার্থনার আয়োজন হয়। এই উদ্যোগ বিশ্বজুড়ে
প্রশংসিত হয়েছিল।
তিনি
মুসলিম, ইহুদি ও খ্রিস্টান ধর্মীয়
নেতাদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, আমরা সবাই আদমের সন্তান। চলুন, আমরা সবাই একসঙ্গে শান্তির পথে হাঁটি।
বিশ্ব রাজনীতি যখন বারবার সহিংসতা ও বিভেদের দিকে ঝুঁকেছে, পোপ ফ্রান্সিস তখন বারবার স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন সহানুভূতি, সংলাপ ও শান্তির শক্তির কথা। তার মৃত্যুতে শুধু খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীরাই নয়, বরং শান্তিপ্রিয় প্রতিটি মানুষ হারাল এক সাহসী, মানবিক কণ্ঠ।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh