গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর খান ইউনিসে ইসরাইলি বাহিনীর চলমান হামলায় নতুন করে আরও ৩২ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও অনেকে। দেড় মাসেরও বেশি সময় ধরে ইসরাইল গাজা উপত্যকায় কোনো ধরনের ত্রাণ প্রবেশে বাধা দিয়ে আসায় ভয়াবহ খাদ্য সংকটে পড়েছেন সেখানকার লাখো মানুষ।

বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (WFP) পরিস্থিতিকে ‘মানবিক বিপর্যয়’ আখ্যা দিয়ে গাজায় জরুরি ভিত্তিতে ত্রাণ প্রবেশের অনুমতি দিতে ইসরাইলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।

একইসঙ্গে, ইসরাইলি হামলায় গত মাসে প্যালেস্টাইন রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির (PRCS) ১৫ কর্মীর নিহত হওয়ার ঘটনায় প্রকাশিত আইডিএফ-এর তদন্ত প্রতিবেদনকে ‘সত্য গোপনের অপচেষ্টা’ হিসেবে অভিহিত করেছে সংস্থাটি। আইডিএফ বলছে, এটি পেশাগত ত্রুটির ফল; তবে PRCS এই দাবি প্রত্যাখ্যান করে ঘটনাটিকে 'সুপরিকল্পিত হত্যা' বলে উল্লেখ করেছে এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে এই ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে।

হামাস-ইসরাইল যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে ইসরাইলি সেনাবাহিনী পুরো গাজা উপত্যকাকে প্রায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে। এক হাজার ২০০ ইসরাইলির মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে আইডিএফ-এর অভিযানে ইতোমধ্যে অর্ধ লক্ষাধিক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের অধিকাংশই শিশু, নারী এবং বেসামরিক মানুষ। আশ্রয়হীন হয়ে বহু মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করছে গাজার শরণার্থী শিবিরগুলোতে।

প্রত্যেকদিন ইসরাইলি বাহিনীর বোমা হামলায় নিহত হচ্ছে নতুন নতুন প্রাণ। খান ইউনিসের তাবুগুলোর ওপর টানা আক্রমণে নিহতদের স্বজনদের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছে গাজার বাতাস।

গত ২ মার্চ থেকে ইসরাইল একচেটিয়াভাবে গাজায় খাদ্য, ওষুধসহ সব ধরনের ত্রাণ প্রবেশে বাধা দিয়ে রেখেছে। এতে করে মানবাধিকারকর্মী ও স্বাস্থ্যসেবাদানকারীরাও কঠিন অবস্থার মধ্যে পড়েছেন। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি সতর্ক করেছে, যদি দ্রুত ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তাহলে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে।

ভ্যাটিকানে ইস্টার সানডে উপলক্ষে দেওয়া এক ভাষণে খ্রিস্টানদের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা পোপ ফ্রান্সিস গাজায় যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানান। তিনি বলেন, প্যালেস্টিনিদের প্রতি আমার সমবেদনা। বিশ্বজুড়ে ইহুদি বিদ্বেষ যেমন বেড়েছে, ঠিক তেমনি গাজার পরিস্থিতিও চরম মানবিক বিপর্যয়ে পৌঁছেছে। যুদ্ধ কখনো শান্তি বয়ে আনে না।

গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে বিশ্বজুড়ে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে। রোববার পাকিস্তানের ইসলামাবাদে লাখো মানুষের বিক্ষোভে অংশগ্রহণে গর্জে ওঠে জনতা। তারা ফিলিস্তিনকে সমর্থন জানিয়ে ইসরাইলকে ‘অবৈধ রাষ্ট্র’ ঘোষণা করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান।

এক বিক্ষোভকারী বলেন, ফিলিস্তিনে ফিলিস্তিনিরাই থাকবে। ফিলিস্তিন স্বাধীন করতেই হবে। আমরা চাই মুসলিম বিশ্ব এক হয়ে ফিলিস্তিনের পাশে দাঁড়াক।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের লস অ্যাঞ্জেলেস শহরে অনুষ্ঠিত হয় 'হ্যান্ডস অফ' নামক এক বিশাল বিক্ষোভ। সেখানে গাজা ও ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের দাবি জানানো হয়। একই দাবিতে ইতোমধ্যে বিক্ষোভ হয়েছে নিউইয়র্ক, ওয়াশিংটন ডিসি ও শিকাগোতেও।

আরেক বিক্ষোভকারী বলেন, ১৮ মাস ধরে ফিলিস্তিনিদের ওপর এই নির্মম অত্যাচার চলছে। মুসলিম বিশ্ব এখনো চুপ। সময় এসেছে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার। পাকিস্তানে ইসরাইলি পণ্যের বয়কট চাই।