ছবিঃ সংগৃহীত।
কাশ্মিরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার পর ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে চলমান উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরে (আজাদ কাশ্মির ও গিলগিট-বাল্টিস্তান) ১০ দিনের জন্য সব মাদ্রাসা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। আজ (২ মে) এক সরকারি নোটিশে এ সিদ্ধান্ত জানানো হয়।
সরকারি কর্মকর্তারা মাদ্রাসা বন্ধের বিষয়টি সরাসরি স্বীকার না করলেও ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, তারা দাবি করছেন তাপপ্রবাহ ও গরমের কারণেই ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। তবে পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরের ধর্মবিষয়ক দপ্তরের পরিচালক হাফিজ নাজির আহমেদ বলেছেন, মূলত ভারতের সম্ভাব্য সামরিক হামলার আশঙ্কাতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, এই মুহূর্তে আমরা দুই ধরনের তাপপ্রবাহের মুখোমুখি— একটির উৎস আবহাওয়া, আর অপরটির উৎস ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। আমরা নিরপরাধ শিশুদের জীবন ঝুঁকিতে ফেলতে পারি না। তিনি আরও জানান, গতকাল আজাদ কাশ্মির ও গিলগিট-বাল্টিস্তানের প্রশাসনের সব কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের পর সর্বসম্মতিক্রমে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
গত ২২ এপ্রিল ভারতের জম্মু ও কাশ্মিরের পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর ভয়াবহ হামলা চালায় কাশ্মিরভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (TRF), যা লস্কর-ই-তৈয়বার একটি উপশাখা। ওই হামলায় ২৬ জন নিহত হন। ভারত এ হামলার জন্য সরাসরি পাকিস্তানকে দায়ী করে এবং প্রতিক্রিয়ায় সিন্ধু নদ পানি বণ্টন চুক্তি স্থগিতসহ একাধিক কূটনৈতিক পদক্ষেপ গ্রহণ করে। পাল্টা জবাবে পাকিস্তানও ভারতের জন্য স্থল ও আকাশসীমা বন্ধের ঘোষণা দেয়।
এই হামলার জেরে গত নয় দিন ধরে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করছে এবং সীমান্ত এলাকায় সম্ভাব্য সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা বেড়েছে।
কাশ্মির সংকটের শুরু ১৯৪৭ সালে, ব্রিটিশ উপনিবেশ থেকে ভারত ও পাকিস্তানের স্বাধীনতার সময়। জম্মু-কাশ্মিরের তৎকালীন মহারাজা হরি সিং পাকিস্তানের হামলার মুখে ভারতের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন এবং চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। এরপর ভারতীয় সেনাবাহিনী হস্তক্ষেপ করে পাকিস্তান-সমর্থিত বাহিনীকে পিছু হটতে বাধ্য করে।
বর্তমানে কাশ্মির ভূখণ্ডের আনুমানিক ৪৩% ভারতের, ৩৭% পাকিস্তানের, এবং বাকি ২০% চীনের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে (সিয়াচেন ও আকসাই চীন অঞ্চল)।
২০১৯ সালের ৫ আগস্ট ভারতীয় পার্লামেন্টে কণ্ঠভোটের মাধ্যমে সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিল করে কাশ্মিরের বিশেষ মর্যাদা তুলে নেয় মোদি সরকার, যা পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করে তোলে।
পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরে বর্তমানে ৪৪৫টি ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান (মাদ্রাসা) রয়েছে, যেখানে ২৬ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী পড়াশোনা করে। এগুলোর অনেকগুলোই ধর্মীয় সংগঠন দ্বারা পরিচালিত এবং বিনা খরচে শিক্ষাদান করে থাকে। জনসাধারণের মধ্যে ধর্মীয় শিক্ষার চাহিদা থাকায় এসব মাদ্রাসা জনপ্রিয়।
এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে সামরিক হামলার সম্ভাব্য লক্ষ্যবস্তু হিসেবে বিবেচনা করে সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি।
এ বিষয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মন্তব্য জানতে চাইলেও রয়টার্সকে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি নয়াদিল্লি।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh