জম্মু ও কাশ্মিরের পেহেলগামে সাম্প্রতিক ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা তীব্র আকার ধারণ করেছে। দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের টানাপোড়েনের মধ্যেই ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি) এই পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
সোমবার (৫ মে) রাতে টিআরটি গ্লোবালের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, ভারত কর্তৃক পাকিস্তানের বিরুদ্ধে “ভিত্তিহীন অভিযোগ” দক্ষিণ এশিয়ায় নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে আরও অস্থিতিশীল করে তুলছে বলে মন্তব্য করেছে ৫৭টি মুসলিম দেশের জোট ওআইসি। এক যৌথ বিবৃতিতে সংস্থাটি বলেছে, এই ধরনের অভিযোগ ইতোমধ্যেই পরিস্থিতিকে ঘোলাটে করছে এবং আঞ্চলিক শান্তির পথে বড় অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ওআইসি বিবৃতিতে জানায়, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান নীতিগত ও সুস্পষ্ট। আমরা যে কোনো ধরণের সন্ত্রাসবাদকে নিন্দা জানাই— তা যে-ই করুক, যেখানেই করুক। একইসঙ্গে আমরা কোনো দেশ, ধর্ম, জাতি বা সংস্কৃতিকে সন্ত্রাসের সঙ্গে জড়ানোর চেষ্টা প্রত্যাখ্যান করি।
বিশেষভাবে কাশ্মির প্রসঙ্গ তুলে ধরে ওআইসি জানিয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে অমীমাংসিত কাশ্মির সংকট দক্ষিণ এশিয়ার স্থিতিশীলতার প্রধান অন্তরায়। জম্মু ও কাশ্মিরের জনগণ এখনও জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব অনুযায়ী তাদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার থেকে বঞ্চিত।
বিবৃতিতে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের মধ্যস্থতার প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়ে ওআইসি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, বিশেষ করে নিরাপত্তা পরিষদ ও প্রভাবশালী রাষ্ট্রগুলোর কাছে দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে, যাতে অঞ্চলটিতে উত্তেজনা প্রশমিত হয়।
উল্লেখ্য, পেহেলগামে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহত হন, যা ২০১৯ সালের পুলওয়ামা হামলার পর কাশ্মিরে সবচেয়ে ভয়াবহ হামলা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। বন্দুকধারীরা কাশ্মিরে পর্যটকদের লক্ষ্য করে এই হামলা চালায়।
এই ঘটনার পর ভারত ও পাকিস্তানের সম্পর্ক আরও অবনতির দিকে যায়। ভারত একতরফাভাবে সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিত করে, যার জবাবে পাকিস্তান সিমলা চুক্তি স্থগিত করে এবং ভারতীয় বিমানের জন্য আকাশসীমা বন্ধের ঘোষণা দেয়।
উত্তেজনার মধ্যেই পাকিস্তান গত শনিবার পরীক্ষামূলকভাবে ৪৫০ কিলোমিটার পাল্লার ‘আবদালি’ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ করে। ভারতের কর্মকর্তারা একে “উসকানিমূলক পদক্ষেপ” হিসেবে আখ্যায়ন করেছেন। এর পরদিনই পাকিস্তান আরও একটি ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষা চালায়।
এমন উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যেই ওআইসি কাশ্মির প্রসঙ্গসহ ভারতীয় পদক্ষেপের সমালোচনা করে তাদের বিবৃতি প্রকাশ করে। তবে ভারত বরাবরের মতোই ওআইসির এমন মন্তব্যকে “অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অযাচিত হস্তক্ষেপ” হিসেবে প্রত্যাখ্যান করেছে।
সূত্রঃ টিআরটি গ্লোবাল।