জম্মু
ও কাশ্মীরে সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী হামলার প্রতিক্রিয়ায় উপমহাদেশে নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। এরই মধ্যে বুধবার (৭ মে) ভোররাতে
পাকিস্তানের বিভিন্ন শহরে সমন্বিত ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ভারত। দেশটির সামরিক সূত্র জানিয়েছে, ভারতীয় স্থল, নৌ ও বিমানবাহিনী
যৌথভাবে এই অভিযান পরিচালনা
করেছে। অভিযানের নাম দেওয়া হয়েছে—‘অপারেশন সিঁদুর’।
ভারতীয়
সেনাবাহিনীর দাবি, এই অভিযানে পাকিস্তানে
থাকা অন্তত ৯টি জঙ্গি ঘাঁটি ধ্বংস করা হয়েছে। তারা জানায়, গত ২২ এপ্রিল
কাশ্মীরের পহেলগামে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার প্রতিশোধ হিসেবেই এই অভিযান চালানো
হয়।
কেন
‘সিঁদুর’?
এই
অভিযানের নামকরণ ঘিরে রয়েছে আবেগময় একটি ব্যাখ্যা। এনডিটিভি-এর এক প্রতিবেদনে
বলা হয়, ‘সিঁদুর’ হিন্দু বিবাহিত নারীর স্বামীর দীর্ঘায়ু ও মঙ্গলের প্রতীক।
পহেলগাম হামলায় অনেক নারী তাদের স্বামীকে হারিয়েছেন। সেই নারীদের কপালের সিঁদুর মুছে যাওয়ার বাস্তবতা থেকেই এই অভিযানের নাম
দেওয়া হয় ‘সিঁদুর’। এটি শুধুই
প্রতিশোধ নয়—এটি ভারতের
নারীদের অপমানেরও জবাব।
সামরিক
বিশ্লেষকদের মতে, অভিযানের এই নামকরণ ভারতের
সাংস্কৃতিক পরিচয়, জাতীয় আবেগ ও প্রতিরোধ মনোভাবের
প্রতিফলন।
ভূরাজনৈতিক
বার্তা
'সিঁদুর’
শব্দটি শুধু আধ্যাত্মিক বা সাংস্কৃতিক প্রতীক
নয়, এর রয়েছে ভূরাজনৈতিক
তাৎপর্যও। এটি ঐতিহাসিকভাবে সিন্ধু নদীর সঙ্গে যুক্ত, যা নিয়ে ভারত
ও পাকিস্তানের মধ্যে রয়েছে ইন্দাস পানি চুক্তি। বর্তমানে সেই চুক্তিও ভারতের পুনর্বিবেচনার আওতায় রয়েছে। ফলে এই নামকরণ পাকিস্তানের
প্রতি এক সুস্পষ্ট কূটনৈতিক
বার্তা বলেও মনে করছেন কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা।
ভারতের
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, অভিযানের লক্ষ্য ছিল নির্দিষ্ট এবং এটি উত্তেজনা বাড়ানোর উদ্দেশ্যে নয়। পাকিস্তানের কোনো সামরিক স্থাপনাকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়নি।
তবে
পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যমগুলো দাবি করছে, বাহাওয়ালপুর ও মুজাফফরাবাদে চালানো
হামলায় বেসামরিক প্রাণহানি ঘটেছে, যদিও এ দাবি স্বাধীনভাবে
যাচাই হয়নি।
একটি
বার্তা, বহু স্তর
ভারতীয়
বিশ্লেষকদের মতে, ‘অপারেশন সিঁদুর’ একদিকে শহীদদের স্ত্রীদের প্রতি শ্রদ্ধা, অন্যদিকে শত্রুর উদ্দেশে একটি সুস্পষ্ট বার্তা। এটি সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের আবেগঘন, কৌশলগত ও সাংস্কৃতিক জবাব।
তবে
এই অভিযানের পর দক্ষিণ এশিয়ায়
শান্তি ও স্থিতিশীলতা কতটা
বজায় থাকবে, সেটাই এখন বড় প্রশ্ন।