ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার সীমান্তে উত্তেজনা নতুন মাত্রা নিয়েছে। দুই দেশের মধ্যে হামলা ও পাল্টা হামলার ঘটনায় প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বাড়ছে। এই পরিস্থিতিতে পাকিস্তান দাবি করেছে যে, ভারত ইসরাইলি প্রযুক্তি ব্যবহার করে তাদের ভূখণ্ডে ড্রোন হামলা চালাচ্ছে। পাকিস্তানের সেনাবাহিনী বলছে, ভারত ইসরাইলি নির্মিত হ্যারপ ড্রোন ব্যবহার করে একযোগে একাধিক স্থানে নজিরবিহীন সামরিক আগ্রাসন চালিয়েছে।
আজ (৮ মে) পাকিস্তানের আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ অধিদপ্তরের (আইএসপিআর) মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরী সাংবাদিকদের জানান, পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনী মোট ২৫টি হ্যারপ ড্রোন ভূপাতিত করতে সক্ষম হয়েছে। লাহোর, আট্টক, গুজরানওয়ালা, চাকওয়াল, রাওয়ালপিন্ডি, বাহাওয়ালপুর, মিয়ানো, চোর এবং করাচির আশপাশের এলাকায় ড্রোনগুলো ধ্বংস করা হয়। তবে লাহোরের কাছে একটি ড্রোন পাকিস্তানের একটি সামরিক স্থাপনায় আঘাত হানে, এতে চারজন সেনা সদস্য আহত হন এবং সেখানে সামান্য ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটে। অন্যদিকে, সিন্ধুর মিয়ানো এলাকায় এক বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং আরেকজন আহত হয়েছেন।
হ্যারপ ড্রোন একটি আত্মঘাতী ড্রোন, যা ইসরাইলি প্রতিষ্ঠান ইসরাইল অ্যারোস্পেস ইন্ডাস্ট্রিজ (আইএআই) নির্মাণ করেছে। এটি ‘লয়টারিং মিউনিশন’ নামে পরিচিত, যার অর্থ ড্রোনটি আকাশে ঘুরে ঘুরে লক্ষ্যবস্তু খোঁজে এবং তা শনাক্ত করে সরাসরি আঘাত হানে ও বিস্ফোরিত হয়। এই ড্রোনগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে কিংবা মানুষের নিয়ন্ত্রণেও চালানো যায়। নজরদারি এবং হামলা—উভয় উদ্দেশ্যেই ব্যবহৃত এই প্রযুক্তি সামরিক স্থাপনায় আঘাত হানতে অত্যন্ত কার্যকর বলে বিবেচিত।
এই ঘটনার পেছনে রয়েছে কাশ্মীরের পহেলগামে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া একটি সন্ত্রাসী হামলা, যার জন্য ভারত পাকিস্তানকে দায়ী করেছে। এর প্রতিক্রিয়ায় মঙ্গলবার (৭ মে) দিবাগত রাতে ভারত পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণাধীন অঞ্চলের অন্তত নয়টি স্থানে একযোগে হামলা চালায়। মুজাফফরাবাদ, কোটলি, শিয়ালকোট, মুরদিকি, শাকারঘার এবং পূর্ব আহমেদপুরসহ মোট ২৪টি স্থাপনাকে লক্ষ্য করে চালানো এসব হামলায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি পাকিস্তানের। দেশটির সেনাবাহিনীর দাবি, এতে অন্তত ৩১ জন নিহত এবং ৫৭ জন আহত হয়েছেন। যদিও ভারতের দাবি অনুযায়ী, এই হামলায় শতাধিক মানুষ প্রাণ হারিয়েছে।
হামলার পর থেকেই সীমান্তে পাকিস্তানি বাহিনীর গোলাবর্ষণও বেড়েছে। ভারতীয় সেনাবাহিনী জানিয়েছে, এই গোলাবর্ষণে তাদের ১৫ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং ৪৩ জন আহত হয়েছেন। দুই পক্ষের এই সংঘর্ষের ফলে পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করছে, যা পুরো অঞ্চলজুড়ে অস্থিরতা বাড়িয়ে তুলেছে।