ছবিঃ সংগৃহীত।
ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে স্বাক্ষরিত যুদ্ধবিরতি চুক্তির মাধ্যমে চারদিনের তীব্র সামরিক সংঘাতের অবসান ঘটেছে। তবে শান্তি ফিরলেও, ভারত-অধিকৃত কাশ্মিরের সীমান্তবর্তী অনেক গ্রামের বাসিন্দারা এখন চরম দুর্দশার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। পাকিস্তানের গোলাবর্ষণে ক্ষতিগ্রস্ত এই সব মানুষ ঘরবাড়ি হারিয়ে সরকারের কাছে ক্ষতিপূরণের দাবি তুলেছেন।
মঙ্গলবার
(১৩ মে) ব্রিটিশ সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে জানানো
হয়, চলমান উত্তেজনার সূচনা হয় গত ৭
মে, যখন ভারত পাকিস্তান সীমান্ত লাগোয়া এলাকায় সন্ত্রাসীদের ঘাঁটি রয়েছে এমন অভিযোগ তুলে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা
চালায়। পাল্টা জবাবে পাকিস্তানও ভারতের সামরিক স্থাপনাগুলোতে হামলা করে। এই সংঘাতে কমপক্ষে
৭০ জন বেসামরিক নাগরিক
নিহত হন এবং শত
শত গ্রামবাসী তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাতে বাধ্য হন।
যুদ্ধবিরতির
ঘোষণার পর সীমান্ত এলাকা
কাশ্মিরের গ্রামবাসীরা নিজেদের বাড়িতে ফিরছেন। কিন্তু ফিরে এসে তাঁরা দেখতে পাচ্ছেন—ঘরের ছাদ উড়ে গেছে, দেয়ালে ফাটল ধরেছে, কিছু ঘর সম্পূর্ণ ধ্বংস
হয়ে গেছে। অনেকের জীবিকা-নির্ভর গবাদিপশুও মারা গেছে।
জম্মুর
আখনুর জেলার সীমান্তবর্তী কোট মাইরা গ্রামের বাসিন্দা রোশন লাল বলেন, আমরা বাচ্চাদের নিয়ে কোথায় যাব? এখন আমাদের মাথা গোঁজার জায়গা নেই, খাওয়ারও কিছু নেই। গোলাবর্ষণে আমার বাড়ি বসবাসের অযোগ্য হয়ে গেছে। আমি প্রধানমন্ত্রী মোদির সরকারের কাছে ন্যায়বিচার চাই। আমরা ক্ষতিপূরণ দাবি করছি।
কোট
মাইরার পাশের পাহাড়ি ওয়ালা গ্রামের কৃষক করণ সিং বলেন, সংঘর্ষে আমার সাতটি গরু মারা গেছে। আমার পরিবার এখন অস্থায়ী শিবিরে আশ্রয় নিয়েছে। তিনি যোগ করেন, “সংঘর্ষ শুরু হতেই গ্রাম ছেড়ে চলে গেছি। কিন্তু এখন আর ফেরার মতো
কিছু নেই।
কাশ্মিরের
সালামাবাদ গ্রামে গোলার আঘাতে আহত হয়েছেন বাদরুদ্দিন নায়ক ও তার ছয়
বছরের ছেলে। প্রায় পাঁচ দিন পর নিজের বাড়িতে
ফিরে এসে তিনি বলেন, ভালো লাগছে ফিরে এসে, কিন্তু ঘরের অবস্থা খুব খারাপ। আমার দুই চাচার বাড়ি পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। এ ধরনের সংঘাতে
সবচেয়ে বেশি ভোগে সীমান্তের সাধারণ মানুষ। তাই আমরা স্থায়ী শান্তি চাই।
ভারতের
একজন জ্যেষ্ঠ সরকারি কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সরকার এখন ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ঘুরে দেখছে এবং বাড়িঘর, দোকানপাটসহ অবকাঠামোর ক্ষতির হিসাব করছে। ক্ষতিপূরণের পরিমাণ পরে নির্ধারণ করা হবে বলে জানান তিনি। তবে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার অনুমতি না থাকায় ওই
কর্মকর্তার নাম প্রকাশ করা হয়নি।
এর
আগে, সোমবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সতর্ক করে বলেন, ভারত যদি নতুন করে হামলার শিকার হয়, তবে সীমান্তের ওপারে সন্ত্রাসী ঘাঁটিতে আরও কঠোর জবাব দেওয়া হবে। তবে ইসলামাবাদ নয়াদিল্লির এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান
করেছে, যে কাশ্মিরে হামলায়
পাকিস্তানের ভূমিকা ছিল।
এই
সময়, পাহাড়ি ওয়ালা গ্রামে নিজের ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে স্থানীয় বাসিন্দা যোগীন্দর লাল মন্তব্য করেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কথায় কান দেওয়া উচিত নয় মোদির। আমরা
পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পূর্ণ প্রতিশোধ চাই।
উল্লেখ্য, গত শনিবার ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেন ট্রাম্প। তিনি দাবি করেন, পারমাণবিক অস্ত্রধর এই দুই দেশের সংঘর্ষ থামাতে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ওয়াশিংটন সক্রিয় ভূমিকা রেখেছে।
সূত্রঃ রয়টার্স।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh