কাশ্মিরে
প্রাণঘাতী সন্ত্রাসী হামলার পর পাকিস্তানের বিরুদ্ধে
কড়া অবস্থান নিয়েছে ভারত। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ঘোষণা দিয়েছেন, যেসব নদীর ওপর ভারতের অধিকার রয়েছে, সেসব নদী থেকে পাকিস্তান একফোঁটা পানিও পাবে না। বৃহস্পতিবার (২২ মে) রাজস্থানে
এক জনসভায় এ হুঁশিয়ারি দেন
তিনি। এর আগে, গত
২২ এপ্রিল কাশ্মিরের পেহেলগামে এক বন্দুকধারীর হামলায়
২৬ জন নিহত হন।
নিহতদের অধিকাংশই হিন্দু তীর্থযাত্রী ছিলেন। এই ঘটনার পর
পাকিস্তানের সঙ্গে দীর্ঘদিনের সিন্ধু পানি বণ্টন চুক্তি স্থগিত করে ভারত।
১৯৬০
সালে বিশ্বব্যাংকের মধ্যস্থতায় স্বাক্ষরিত সিন্ধু চুক্তির আওতায় ভারতের নদীগুলো থেকে পাকিস্তানে কৃষিকাজে ব্যবহারের জন্য পানি সরবরাহ করা হয়। চুক্তি অনুযায়ী, ভারতের নদীগুলোর পানি ব্যবহার করতে পারত পাকিস্তান। কিন্তু সম্প্রতি হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে নয়াদিল্লি এই সুবিধা প্রত্যাহারের
ঘোষণা দেয়। প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেন, প্রতিটি সন্ত্রাসী হামলার জন্য পাকিস্তানকে চড়া মূল্য দিতে হবে— তাদের সেনাবাহিনী এবং অর্থনীতি উভয়কেই এর মূল্য দিতে
হবে।
চুক্তি
স্থগিত করলেও পাকিস্তানের অর্থমন্ত্রী দাবি করেছেন, এর তাৎক্ষণিক কোনও
প্রভাব পড়বে না। তবে বিশ্লেষকদের মতে, দীর্ঘমেয়াদে এই সিদ্ধান্ত পাকিস্তানের
কৃষি ও অর্থনীতিতে বড়
ধরনের ধাক্কা দিতে পারে। এই ঘটনার পর
ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক চরম উত্তেজনার দিকে মোড় নেয়। দুই দেশের সীমান্তে সামরিক উপস্থিতি বাড়ে এবং গোলাগুলির ঘটনাও ঘটে। পরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় গত ১০ মে
দুই দেশ একটি যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছায়।
যুদ্ধবিরতির
পর বর্তমানে সীমান্তে আপাত শান্তি বিরাজ করছে। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর জানান,
সীমান্তে গোলাগুলি বন্ধ আছে এবং সৈন্যদের পুনর্বিন্যাস করা হয়েছে। তবে তিনি স্পষ্ট করে বলেন, যদি ২২ এপ্রিলের মতো
হামলা আবার ঘটে, তাহলে ভারত আবারও জবাব দেবে। সন্ত্রাসীরা যদি পাকিস্তানে অবস্থান করে, তাহলে ভারত তাদের সেখানেই লক্ষ্যবস্তু করবে।
স্বাধীনতার
পর থেকে কাশ্মির নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে
উত্তেজনা দীর্ঘদিন ধরেই চলমান। উভয় দেশই এই অঞ্চলের পূর্ণ
মালিকানা দাবি করে আসছে। হিমালয় ঘেঁষা কাশ্মির নিয়ে এর আগেও অন্তত
দু’বার যুদ্ধ করেছে তারা। ভারত অভিযোগ করে, কাশ্মিরে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনে পাকিস্তান সহায়তা করে, যদিও পাকিস্তান এই অভিযোগ অস্বীকার
করে আসছে। কাশ্মিরে এপ্রিলের হামলার পর থেকে ভারত
ও পাকিস্তান একে অপরের বিরুদ্ধে পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপ নিয়েছে— এর মধ্যে রয়েছে
দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বন্ধ, ভিসা স্থগিত এবং সীমান্তে যোগাযোগ বন্ধ করা।
সূত্রঃ রয়টার্স।