ভারত
ও পাকিস্তানের মধ্যে সাত দশকেরও বেশি সময় ধরে চলমান কাশ্মির বিরোধের মধ্যেও জম্মু ও কাশ্মিরের পেহেলগামে
সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী হামলার সঙ্গে সেই দ্বন্দ্বের সরাসরি কোনো সম্পর্ক নেই বলে মন্তব্য করেছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. সুব্রাহ্মনিয়াম জয়শঙ্কর।
শনিবার
(২৪ মে) জার্মানির বার্লিনে জার্মান কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশন্স
(ডিজিএপি) আয়োজিত এক আলোচনায় অংশ
নিয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন।
এক প্রশ্নের উত্তরে জয়শঙ্কর বলেন, “পেহেলগামে হামলাটি একটি নিছক সন্ত্রাসী হামলা ছিল। এর লক্ষ্য ছিল
জম্মু-কাশ্মিরের পর্যটন খাতকে ধ্বংস করা এবং ধর্মীয় বিভাজন উসকে দেওয়া, যা সরাসরি কাশ্মির
ইস্যুর সঙ্গে সংযুক্ত নয়।”
উল্লেখ্য,
গত ২২ এপ্রিল জম্মু-কাশ্মিরের অনন্তনাগ জেলার পেহেলগামের বৈসরন উপত্যকায় একদল সশস্ত্র সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে ২৬ জন পর্যটককে
হত্যা করে। নিহতদের অধিকাংশই হিন্দু ধর্মাবলম্বী পুরুষ। ঘটনার পর ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ (টিআরএফ) নামে একটি জঙ্গিগোষ্ঠী হামলার দায় স্বীকার করে। ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, এই গোষ্ঠী পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তৈয়বার একটি
শাখা।
এই
ঘটনার জেরে ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কয়েকটি কূটনৈতিক পদক্ষেপ নেয়, যার মধ্যে রয়েছে সিন্ধু নদ পানি বণ্টন
চুক্তি পুনর্বিবেচনা, পাকিস্তানি নাগরিকদের ভিসা বাতিলসহ কড়াকড়ি ব্যবস্থা। জবাবে পাকিস্তানও ভারতের জন্য আকাশসীমা বন্ধসহ একাধিক পাল্টা পদক্ষেপ গ্রহণ করে।
পরিস্থিতি
আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে ৭ মে, যখন
ভারতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনী ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামের এক সামরিক অভিযান
চালায় পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মিরে। নয়াদিল্লির দাবি, অভিযানে ৭০ জন সন্ত্রাসী
নিহত হয়। অপরদিকে, পাকিস্তানের দাবি অনুযায়ী, নিহত হয় ১১ জন
সেনাসদস্যসহ মোট ৫১ জন এবং
আহত হয় ৭৮ জন।
পাল্টা
জবাবে ৯ মে পাকিস্তান
‘অপারেশন বুনিয়ান উম মারসুস’ চালায়,
যেখানে অন্তত ৩৬ ভারতীয় নিহত
এবং ৪৬ জন আহত
হন। পরে ১০ মে যুক্তরাষ্ট্রের
মধ্যস্থতায় উভয় দেশ যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হলেও পরিস্থিতি এখনও উত্তপ্ত।
জয়শঙ্কর
বলেন, “পাকিস্তান শুধু সন্ত্রাসবাদকে প্রশ্রয়ই দেয় না, বরং তাকে রাষ্ট্র পরিচালনার কৌশল হিসেবেও ব্যবহার করে। অপারেশন সিঁদুর চালানো হয়েছিল সন্ত্রাসীদের অব্যর্থভাবে চিহ্নিত করে তাদের ঘাঁটি ধ্বংসের জন্য, পাকিস্তানকে আক্রমণের জন্য নয়।”
তিনি
আরও যোগ করেন, “ভারত প্রতিশ্রুতিবদ্ধ—পেহেলগাম হামলার সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে, এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান বিশ্ব সম্প্রদায়ের সঙ্গে মিল রেখে কঠোরই থাকবে।”
সূত্রঃ এনডিটিভি অনলাইন।